ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪ | ৯ কার্তিক ১৪৩১

প্রতিবেশী ও অধীনদের সঙ্গে সদাচরণ

Daily Inqilab মাওলানা আবুল কাসেম আলআযহারী

২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

মানুষ জন্মগতভাবে সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ কখনো চলতে পারে না। সুখ-শান্তিময় একটি আদর্শ মানবসমাজ গড়ে তুলতে হলে পারস্পরিক হৃদ্যতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আর তা সৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রত্যেকের অন্যের হক ও অধিকারগুলোর ব্যাপারে সচেতন থাকা অপরিহার্য। এ নিবন্ধে প্রতিবেশী ও অধীন লোকদের সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা আলোচনা করতে চাই। অনেক সময় দেখা যায়, সমাজে আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে প্রতিবেশী অধিক কাজে লাগে। বিপদে-আপদে দুঃখ-দুর্দশায় প্রতিবেশীরাই প্রথমে এগিয়ে আসে। তাই প্রতিবেশীরা যে কোনো ধর্মের, যে কোনো বর্ণের এবং যে কোনো আদর্শের অনুসারীই হোক না কেন, ইসলাম আমাদেরকে সর্বাবস্থায় তাদের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন : ‘নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী এবং সঙ্গী-সাথীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা নিসা-৩৬)

প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (সহিহ বুখারি) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়।’ প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।’ (মিশকাত শরিফ)

প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেয়া এবং তাদের কেউ অভুক্ত থাকলে তাদেরকে খাবার দেয়া ঈমানি দায়িত্ব। এ সম্পর্কে তাকিদ করে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয় যে তৃপ্তিসহকারে খাবার খায়, অথচ তার প্রতিবেশী তার পার্শ্বে ক্ষুধার্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’ (মিশকাত শরিফ)

পারস্পরিক মিল-মহব্বত সৃষ্টির লক্ষ্যে মাঝে মধ্যে প্রতিবেশীদেরকে হাদিয়া-তোহফা দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ মর্মে তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অপরকে হাদিয়া-তোহফা দাও, এতে পরস্পরের মাঝে মিল-মহব্বত সৃষ্টি হবে।’ তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘তুমি যখন তরকারি রান্না করবে তখন তাতে পানি বাড়িয়ে দেবে এবং তোমার প্রতিবেশীকে তা থেকে হাদিয়া দেবে।’ (মুসলিম শরিফ)

প্রতিবেশীর গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জিবরাইল আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন যে, আমার মনে হচ্ছিল, তাদেরকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ বানিয়ে দেয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি) অবস্থার তারতম্যে প্রতিবেশীর হক বা অধিকারেরও তারতম্য ঘটে। কখনো প্রতিবেশীর হক আদায় করা ফরজ স্তরে পৌঁছে। যেমন ক্ষুধার্ত থাকলে আহার্য দান করা। আবার কখনো সুন্নত স্তরে থাকে।

যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় ভালো খাদ্যের ব্যবস্থা হলে তা থেকে প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেয়া। এ ছাড়াও অধিকার অনুসারে প্রতিবেশীদের মধ্যে শ্রেণিভেদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন যে, প্রতিবেশী তিন প্রকার : ১. এক অধিকার বিশিষ্ট প্রতিবেশী। তারা হচ্ছে মুশরিক অর্থাৎ অমুসলিম প্রতিবেশী। তাদের অধিকার কেবল প্রতিবেশী হওয়ার ভিত্তিতে। ২. দুই অধিকার বিশিষ্ট প্রতিবেশী। তারা হচ্ছে মুসলিম প্রতিবেশী। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিবেশী হওয়া এবং মুসলিম হওয়া এই দুই ভিত্তিতে। ৩. তিন অধিকার বিশিষ্ট প্রতিবেশী। তারা হচ্ছে মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী। তাদের অধিকার প্রতিবেশী হওয়া, মুসলিম হওয়া এবং আত্মীয় হওয়া এই তিন ভিত্তিতে। (তিরমিজি শরিফ)

একজন ব্যক্তির আশেপাশে কতগুলো গৃহ পর্যন্ত তার প্রতিবেশী বলে গণ্য হবেÑ এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শুনে রেখো! ৪০টি গৃহ পর্যন্ত প্রতিবেশী বলে গণ্য হবে।’ (তিরমিজি শরিফ) ইসলাম প্রতিবেশীদের পাশাপাশি দাস-দাসী, চাকর-চাকরানী, গোলাম-বাঁদী ও অন্যান্য অধীনদের অধিকারের প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে এবং তাদের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) জীবনের শেষ মুহূর্তে ওসিয়তকালে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজে যত্নবান হও এবং অধীনদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’

পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার্থে মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণী বা স্তরে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং একজনকে অন্যজনের অধীন করা হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় আল্লাহর নিকট মর্যাদার ভিত্তি টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ ও পদমর্যাদা ইত্যাদি নয়; বরং মর্যাদার ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি, দ্বীনদারি ও পরহেজগারি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট সে-ই সর্বাধিক মর্যাদাবান যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু-পরহেজগার।’ (সূরা হুজুরাত-১৩)

তাই অধীন লোকদেরকে প্রহার করা, গালি দেয়া, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, বংশগত নীচুতার দরুণ লজ্জা দেয়া, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের কষ্ট দেয়া- ইত্যাদি থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। তাদের ভুলত্রুটি হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। নিজে যা খাবে এবং পরবে তাদেরকেও তা-ই খেতে পরতে দেবে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিবে ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিবে ইউজিসি

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

গুজব উড়িয়ে দিয়ে পুরোদমে অফিস করলেন প্রধান উপদেষ্টা

গুজব উড়িয়ে দিয়ে পুরোদমে অফিস করলেন প্রধান উপদেষ্টা

রাজশাহী থেকে চালু হচ্ছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন

রাজশাহী থেকে চালু হচ্ছে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন

ফরিদপুরের পদ্মায় চলছে ইলিশ মাছ ধরার মহা উৎসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব নিথর।

ফরিদপুরের পদ্মায় চলছে ইলিশ মাছ ধরার মহা উৎসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব নিথর।

নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময়

নোবিপ্রবি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময়

তথ্য ও সস্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নবনিযুক্ত সচিবের মতবিনিময়

তথ্য ও সস্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নবনিযুক্ত সচিবের মতবিনিময়

সরকারি ইন্ধনে তাণ্ডব হিন্দুদের, বাহরাইচে আতঙ্কে মুসলমানরা

সরকারি ইন্ধনে তাণ্ডব হিন্দুদের, বাহরাইচে আতঙ্কে মুসলমানরা

রাজশাহীতে রেড ক্রিসেন্টের পিপিপি প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা

রাজশাহীতে রেড ক্রিসেন্টের পিপিপি প্রকল্পের অবহিতকরণ সভা

কেরানীগঞ্জে অবৈধ শিশা কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, জরিমানা ২ লক্ষ টাকা

কেরানীগঞ্জে অবৈধ শিশা কারখানায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, জরিমানা ২ লক্ষ টাকা

বন, বনভূমি, ডলফিন সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বন, বনভূমি, ডলফিন সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া চালাতে চায় সৌদি

ইরানের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়া চালাতে চায় সৌদি

কুষ্টিয়ায় হাসপাতালের ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি চার শতাধিক শিশু

কুষ্টিয়ায় হাসপাতালের ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি চার শতাধিক শিশু

সুন্দরবনে ৯০ অফিসের ৮শতাধিক বনকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ জেলায় প্রস্তুত ৩৫৯ আশ্রয় কেন্দ্র

সুন্দরবনে ৯০ অফিসের ৮শতাধিক বনকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ জেলায় প্রস্তুত ৩৫৯ আশ্রয় কেন্দ্র

পুলিশের ৬ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন

পুলিশের ৬ কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন

পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে যেভাবে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান হারুন

পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে যেভাবে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান হারুন

তবে কি ঐশী-শুভ'র প্রেমের গুঞ্জন সত্যি? সংসার জীবনের ইতি টানতে চলেছেন আরিফিন শুভ?

তবে কি ঐশী-শুভ'র প্রেমের গুঞ্জন সত্যি? সংসার জীবনের ইতি টানতে চলেছেন আরিফিন শুভ?

লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি,লঞ্চঘাটে আটকা পড়েছে ভোলাগামী শতাধিক যাত্রী

লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি,লঞ্চঘাটে আটকা পড়েছে ভোলাগামী শতাধিক যাত্রী

সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গ্রেপ্তার

সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গ্রেপ্তার

সাড়ে ৩ বছর পর ফিরে ওয়াশিংটনের রেকর্ড গড়া বোলিং

সাড়ে ৩ বছর পর ফিরে ওয়াশিংটনের রেকর্ড গড়া বোলিং