সুন্দর মৃত্যুর জন্য
৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম
জীবনের সময়টুকুই একজন মানুষের ইহকালীন মূলধন। যদি তা আখিরাতের কল্যাণের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় তবেই ব্যবসা সফল হবে। আর যদি তা বিনষ্ট করা হয় গুনাহ ও পাপাচারে এবং এ অবস্থায় আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হয় তাহলে সে হবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
তাই বুদ্ধিমান সে-ই, যে নিজের হিসাব নেয়, আল্লাহ তার কাছ থেকে হিসাব নেয়ার আগে এবং গুনাহ ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে তা তাকে ধ্বংসের পথে নেয়ার আগেই। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি গুনাহকে এমন মনে করে, যেন সে কোনো পাহাড়ের নিচে বসে আছে। আর যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়টি তার উপর ধসে পড়তে পারে।’ (সহিহ বুখারি : ১১/৮৯) পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ এমনও আছে, যারা বেপরোয়াভাবে পাপাচারে লিপ্ত থাকে। সে চিন্তাই করে না, কার অবাধ্যতায় সে লিপ্ত! একপর্যায়ে তার শেষ সময়টি এসে যায় এবং তার মৃত্যু হয়Ñ আল্লাহ হিফাজত করুনÑঅশুভ মৃত্যু!
স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সুন্দর মৃত্যুর জন্য সতর্ক করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেনÑ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।’ (সূরা আল ইমরান-১০২) সুতরাং তাকওয়া ও ইবাদতের নির্দেশ মৃত্যু অবধি বলবৎ থাকবে, যেন শুভ অবস্থায় মৃত্যু লাভ হয়।
হাদিস শরিফে এ কথাও বলা হয়েছে যে, কিছু মানুষ জীবনভর ইবাদত করে এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু মৃত্যুর নিকটবর্তী সময়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়। ফলে তার মৃত্যু হয় অশুভ অবস্থায়। আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘ব্যক্তি জান্নাতিদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার তাকদির অগ্রগামী হয় এবং সে জাহান্নামিদের আমলে লিপ্ত হয়ে যায়। অবশেষে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম।’ (সহিহ বুখারি : ১১/৪১৭)
সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি এত বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম তা দেখে বিস্ময় বোধ করলেন এবং বললেন, আজ (যুদ্ধের ময়দানে) সে আমাদের যতটা উপকার করেছে আর কেউ তা করতে পারেনি। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, ‘সে তো জাহান্নামি’। জনৈক সাহাবি আরজ করলেন, সে যদি জাহান্নামি হয় তাহলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতি হবে? একজন বললেন, আমি তার সাথে থাকব এবং দেখব, সে কী করে।
তার বর্ণনাÑ লোকটি লড়াইয়ের একপর্যায়ে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য তলোয়ারের অগ্রভাগ বুকে ঠেকিয়ে তার উপর ঝাঁপ দিলো এবং আত্মহত্যা করল। এ দৃশ্য দেখে ওই ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নিকট ফিরে এলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী হয়েছে?’ তিনি তখন পূর্ণ ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ এমন আমল করে, যা মানুষের দৃষ্টিতে জান্নাতিদের আমল, কিন্তু (আল্লাহর কাছে) সে জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত। আবার কেউ এমন আমল করে, আপাত দৃষ্টিতে যা জাহান্নামিদের আমল, কিন্তু (আল্লাহর কাছে) সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত। অন্য রেওয়ায়েতে আরো আছে, ‘সর্বশেষ আমলই প্রকৃত আমল।’ (সহিহ বুখারি : ১১/৪৩৬)
আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন যে, তারা যেমন নেক আমল করে তেমনি আল্লাহ তাআলাকে প্রচণ্ড ভয় করে। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলিতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরিক করে না এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবেÑ এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়।’ (সূরা মুমিনুন : ৫৭-৬০)
আর এটিই ছিল সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা। ইমাম আহমদ (রাহ.) খলিফায়ে রাশেদ আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলতেন, আমি যদি মুমিন বান্দার দেহের একটি চুল হতাম! তিনি তার জিহ্বা টেনে ধরে বলতেন, এটাই হলো ওই জিনিস, যা আমাকে (বিপদের) ঘাটে অবতীর্ণ করেছে!
খলিফায়ে রাশেদ আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) দুটি জিনিসকে খুব ভয় করতেন : ১. দীর্ঘ আশা ও ২. প্রবৃত্তির অনুসরণ। তিনি বলতেন, দীর্ঘ আশা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়। আর প্রবৃত্তির অনুসরণ সত্য গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া দ্রুত বিদায় হচ্ছে আর আখিরাত দ্রুত এগিয়ে আসছে। উভয়েরই রয়েছে কিছু সন্তান। সুতরাং তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। সাবধান, আজ শুধু কর্ম, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, কর্মের সুযোগ নেই।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাঙামাটির সাজেকে দিনভর গোলাগুলি: ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জেলা প্রশাসনের
'বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য' জবিতে ১২ ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ
শেরপুরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেপ্তার-৭
ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থাকারীরাই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে
ভিভো ভি৪০ ফাইভজি, হালকা ওজনে শক্তিশালী ব্যাটারি
ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্প্রীতি চায় না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
দিল্লী দিশেহারা হয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শাহীন শওকত
বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি
সামরিক আইন জারি দক্ষিণ কোরিয়ায়
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় মশাল মিছিল
নকলায় ট্রাক চাপায় নাতি পরপারে শিশু নানী হাসপাতালে
ইফায় ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করা উচিত : হাসনাত আবদুল্লাহ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ২ পদক
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ভারতের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে : হাজী ইয়াছিন
ভারত বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
পার্থিব ও ওহীর জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসা শিক্ষা: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী