অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ এএম
অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়। কারণ এটি ব্যক্তিকে কোনো অবকাশ দেয় না। ফলে হতে পারে সে কোনো গুনাহর কাজে লিপ্ত ছিল আর তাওবার আগেই তার মৃত্যু হল। সালাফে সালেহীন অশুভ মৃত্যুকে খুব ভয় করতেন। সাহল তাসতারী বলেন, সিদ্দীকগণ প্রতিটি কাজে ও প্রতি মুহূর্তে অশুভ মৃত্যুকে ভয় করেন। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের হৃদয় ভীত-কম্পিত।’ (সূরা মুমিনুন : ৬০)। মৃত্যু ভালো অবস্থায় হবে কি না, অর্থাৎ ঈমান ও নেক আমলের হালতে মৃত্যু হবে কি না- এই চিন্তা সর্বদা বান্দার মনে থাকা উচিত। কারণ এটাই তাকে নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করবে। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ভয় করে সে রাতেই গন্তব্যের পানে রওনা হয় আর যে রাতে রওনা হয় সে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। জেনে রেখ, আল্লাহর পণ্য অতি মূল্যবান। জেনে রেখ, আল্লাহর পণ্য হচ্ছে জানড়বাত। (জামে তিরমিযী : ২৪৫২)।
যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয় তখন আল্লাহর রহমতের আশাই অধিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহই প্রবল হওয়া উচিত। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী হয় আল্লাহও তার সাক্ষাতে আগ্রহী হন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। (সহীহ মুসলিম : ২৮৭৭)।
তবে অনেক মূর্খ মুসলমান আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের অর্থ ভুল বোঝে এবং বেপরোয়াভাবে গুনাহয় লিপ্ত হয়; বরং তারা আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের গুণ সম্পর্কে জানাকেই অবিরাম গুনাহয় লিপ্ত থাকার কারণ হিসেবে গ্রহণ করে। এটা স্পষ্ট ভ্রান্তি, যা মানুষকে বিপথগামী করে এবং তাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। কেননা, আল্লাহ তাআলা যেমন গাফুর ও রহীম তেমনি তিনি শাদীদুল ইকাব ও কঠিন শাস্তিদাতাও। কুরআন মজীদের অনেক জায়গায় আল্লাহ এ বিষয়ে সাবধান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন : আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, আমি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর আমার শাস্তি-সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি! (সূরা হিজর : ৪৯-৫০)।
মুসলিম মাত্রেরই কর্তব্য, মানুষের ঋণ থেকে এবং তাদের প্রতি যে জুলুম সে করেছে তা থেকে দায়মুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কারণ যার কাছে কারো কোনো প্রাপ্য আছে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার কাছে তা দাবি করা হবে। অতঃপর নেকআমল থাকলে তা থেকে ঐ প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে। নেক আমল না থাকলে পাওনাদারের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের জান/প্রাণ তার ঋণের সাথে বাঁধা থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা আদায় না করা হয়। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল, যা অশুভ মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে :
তাওবায় বিলম্ব করা : সর্বাবস্থায় সকল গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা প্রত্যেক বালিগ মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর : ৩১)। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাঁর পূর্বাপর সবকিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল তিনিও প্রতিদিন এক শ’বার আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা করতেন। আগাররুল মুযানী বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কর। আমি দৈনিক তাঁর নিকট একশ’ বার তাওবা করি। (সহীহ মুসিলম : ২৭০২)।
তাওবার বিষয়ে উদাসীন বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইবলিস-শয়তানের একটি কৌশল, যা দ্বারা সে মানুষকে প্রতারিত করে। সে মানুষের মনে এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনও অনেক সময় আছে, তাওবা করার অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে। এখন তাওবা করে তো তা রক্ষা করা যাবে না। বারবার তাওবা ভাঙ্গলে কি আল্লাহ সে তাওবা কবুল করবেন।
কখনো এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখন তো জীবন সবে শুরু, যখন বয়স হবে তখন খাঁটি মনে পাকা-পোক্তভাবে তাওবা করে নিও। ঐ সময় মসজিদে পড়ে থাকবে এবং বেশি করে নেক আমল করতে থাকবে। সুতরাং এই বয়সেই ইবাদত-বন্দেগীর পাবন্দি করে কষ্ট না পেয়ে জীবনটা একটু উপভোগ কর। তো এগুলো হচ্ছে তাওবা থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তানের অপকৌশল। এ কারণে সালাফ বলেছেন, তোমাদেরকে ‘ছাওফা’ (ভবিষ্যতে) শব্দটির বিষয়ে সাবধান করছি। এটা শয়তানের অনেক বড় হাতিয়ার।
সচেতন মুমিন, যে অশুভ অবস্থায় মৃত্যুর ভয়ে ও আল্লাহর মুহববতে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর নিকট তাওবা করে আর গাফেল মুসলমান, যে অর্থহীন অজুহাতে তাওবাকে বিলম্ব করে তাদের দু’জনের দৃষ্টান্ত হল ঐ যাত্রীদলের মতো, যাদের যেকোনো সময় যাত্রা করতে হবে। তাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান তারা কষ্ট করে সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করল এবং সফরের জন্য প্রস্তুত থাকল। আর যারা অলস তারা করছি-করব বলে কোনো প্রস্তুতিই গ্রহণ করল না। এরপর হঠাৎ কাফেলার আমীরের পক্ষ থেকে যাত্রার ঘোষণা এল। তখন বুদ্ধিমানরা নিশ্চিন্তে সফর করল আর অলসেরা হায়-হুতাশ করতে লাগল।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফর্মে ফিরতে বাবরকে কোহলির পথে হাঁটতে বললেন পন্টিং
মেরিটাইম সেক্টরে বিদেশীদের বিনিয়োগের আহবান উপদেষ্টার
সাঁতারে আক্ষেপের নাম ‘ইলেক্ট্রোনিক্স স্কোরবোর্ড’!
সাবিনাদের জন্য শনিবার পুরস্কার ঘোষণা করবে বাফুফে
ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ আহত-৩
সর্বনি¤œ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা
যশোরে মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
৭ নভেম্বরের চেতনাকে যারা ধারণ করে না, তারা গণতন্ত্রের শত্রু - ডা.মাজহার
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার ২ সেকেন্ডের মধ্যেই কার চাকরি খাবেন ট্রাম্প?
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস; চব্বিশের প্রেরণা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাগপার আলোচনা সভা
মানুষের মতোই কথা বলবে, আচরণ করবে এআই!
আখাউড়া প্রেসক্লাবের নতুন কমিটি গঠন
পরিবহনব্যবস্থা
রমজানের নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংকে লাগবে না নগদ অর্থ: গভর্নর
ময়নামতি ও বসুরহাটে ইউসিবির দুই নতুন শাখা উদ্বোধন
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস : সাফল্য ও ব্যর্থতা
৫ আগস্টের আয়নায় দেখা ৭ নভেম্বর
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন
জাইকার সহযোগিতায় রাজউকের তৃতীয় ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট সেমিনার অনুষ্ঠিত