ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ কার্তিক ১৪৩১

অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়

Daily Inqilab মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ

৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ এএম


অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়। কারণ এটি ব্যক্তিকে কোনো অবকাশ দেয় না। ফলে হতে পারে সে কোনো গুনাহর কাজে লিপ্ত ছিল আর তাওবার আগেই তার মৃত্যু হল। সালাফে সালেহীন অশুভ মৃত্যুকে খুব ভয় করতেন। সাহল তাসতারী বলেন, সিদ্দীকগণ প্রতিটি কাজে ও প্রতি মুহূর্তে অশুভ মৃত্যুকে ভয় করেন। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের হৃদয় ভীত-কম্পিত।’ (সূরা মুমিনুন : ৬০)। মৃত্যু ভালো অবস্থায় হবে কি না, অর্থাৎ ঈমান ও নেক আমলের হালতে মৃত্যু হবে কি না- এই চিন্তা সর্বদা বান্দার মনে থাকা উচিত। কারণ এটাই তাকে নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করবে। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ভয় করে সে রাতেই গন্তব্যের পানে রওনা হয় আর যে রাতে রওনা হয় সে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। জেনে রেখ, আল্লাহর পণ্য অতি মূল্যবান। জেনে রেখ, আল্লাহর পণ্য হচ্ছে জানড়বাত। (জামে তিরমিযী : ২৪৫২)।
যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয় তখন আল্লাহর রহমতের আশাই অধিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহই প্রবল হওয়া উচিত। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী হয় আল্লাহও তার সাক্ষাতে আগ্রহী হন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। (সহীহ মুসলিম : ২৮৭৭)।
তবে অনেক মূর্খ মুসলমান আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের অর্থ ভুল বোঝে এবং বেপরোয়াভাবে গুনাহয় লিপ্ত হয়; বরং তারা আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের গুণ সম্পর্কে জানাকেই অবিরাম গুনাহয় লিপ্ত থাকার কারণ হিসেবে গ্রহণ করে। এটা স্পষ্ট ভ্রান্তি, যা মানুষকে বিপথগামী করে এবং তাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। কেননা, আল্লাহ তাআলা যেমন গাফুর ও রহীম তেমনি তিনি শাদীদুল ইকাব ও কঠিন শাস্তিদাতাও। কুরআন মজীদের অনেক জায়গায় আল্লাহ এ বিষয়ে সাবধান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন : আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, আমি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর আমার শাস্তি-সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি! (সূরা হিজর : ৪৯-৫০)।
মুসলিম মাত্রেরই কর্তব্য, মানুষের ঋণ থেকে এবং তাদের প্রতি যে জুলুম সে করেছে তা থেকে দায়মুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কারণ যার কাছে কারো কোনো প্রাপ্য আছে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার কাছে তা দাবি করা হবে। অতঃপর নেকআমল থাকলে তা থেকে ঐ প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে। নেক আমল না থাকলে পাওনাদারের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের জান/প্রাণ তার ঋণের সাথে বাঁধা থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা আদায় না করা হয়। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল, যা অশুভ মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে :
তাওবায় বিলম্ব করা : সর্বাবস্থায় সকল গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা প্রত্যেক বালিগ মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নূর : ৩১)। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাঁর পূর্বাপর সবকিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল তিনিও প্রতিদিন এক শ’বার আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা করতেন। আগাররুল মুযানী বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কর। আমি দৈনিক তাঁর নিকট একশ’ বার তাওবা করি। (সহীহ মুসিলম : ২৭০২)।
তাওবার বিষয়ে উদাসীন বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইবলিস-শয়তানের একটি কৌশল, যা দ্বারা সে মানুষকে প্রতারিত করে। সে মানুষের মনে এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনও অনেক সময় আছে, তাওবা করার অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে। এখন তাওবা করে তো তা রক্ষা করা যাবে না। বারবার তাওবা ভাঙ্গলে কি আল্লাহ সে তাওবা কবুল করবেন।
কখনো এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখন তো জীবন সবে শুরু, যখন বয়স হবে তখন খাঁটি মনে পাকা-পোক্তভাবে তাওবা করে নিও। ঐ সময় মসজিদে পড়ে থাকবে এবং বেশি করে নেক আমল করতে থাকবে। সুতরাং এই বয়সেই ইবাদত-বন্দেগীর পাবন্দি করে কষ্ট না পেয়ে জীবনটা একটু উপভোগ কর। তো এগুলো হচ্ছে তাওবা থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তানের অপকৌশল। এ কারণে সালাফ বলেছেন, তোমাদেরকে ‘ছাওফা’ (ভবিষ্যতে) শব্দটির বিষয়ে সাবধান করছি। এটা শয়তানের অনেক বড় হাতিয়ার।
সচেতন মুমিন, যে অশুভ অবস্থায় মৃত্যুর ভয়ে ও আল্লাহর মুহববতে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর নিকট তাওবা করে আর গাফেল মুসলমান, যে অর্থহীন অজুহাতে তাওবাকে বিলম্ব করে তাদের দু’জনের দৃষ্টান্ত হল ঐ যাত্রীদলের মতো, যাদের যেকোনো সময় যাত্রা করতে হবে। তাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান তারা কষ্ট করে সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করল এবং সফরের জন্য প্রস্তুত থাকল। আর যারা অলস তারা করছি-করব বলে কোনো প্রস্তুতিই গ্রহণ করল না। এরপর হঠাৎ কাফেলার আমীরের পক্ষ থেকে যাত্রার ঘোষণা এল। তখন বুদ্ধিমানরা নিশ্চিন্তে সফর করল আর অলসেরা হায়-হুতাশ করতে লাগল।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা

আগের শিরোপা ‘বাই চান্স’ আসেনি,মেয়েরা প্রমাণ করেছে: সাবিনা

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

হাসিনা পালিয়ে না গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো: ইসমাইল সম্রাট

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

অলরাউন্ডারদের তালিকায় তিনে মিরাজ, শীর্ষ বোলার রাবাদা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী জ্ঞান-গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী মাছপাড়ায় অবৈধ ৬টি স্বর্ণের বারসহ চোরাচালান কাজে ব্যবহৃত ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে হবে

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

মানবাধিকারের নামে সমাকামিতা প্রমোট করা জনগণ মানবে না

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় আরও ১০২ ফিলিস্তিনি নিহত

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

পর্তুগাল জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল সম্পন

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

শিক্ষার সব স্তরে 'ইসলাম শিক্ষা' বাধ্যতামূলকসহ ৭ দাবি

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

আয়রন ডোমের আদলে তুরস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

ইরান সামরিক বাজেট তিন গুণ বাড়াবে

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

রহস্যঘেরা মায়া সভ্যতার শহরের খোঁজ মেক্সিকোয়

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

উষ্ণায়নের প্রভাবে মাউন্ট ফুজিতে তুষারপাতে বিলম্ব

টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা চীনের শীর্ষ ধনী

টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা চীনের শীর্ষ ধনী