বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-১

Daily Inqilab মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

সূরা বাকারার ২১৬ নং আয়াত জিহাদের বিধানের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলেছেনÑ ‘জিহাদ তোমাদের কারো কারো কাছে ভারী মনে হতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’ তবে আয়াতটির বার্তা অনেক ব্যাপক। শরিয়তের বহু বিধান সম্পর্কে এ কথা প্রযোজ্য। শরিয়তের কোনো বিধান যদি আমার অপছন্দ বা কষ্টকর মনে হয়, তাহলে আমাকে মনে রাখতে হবে যে, এটি আল্লাহ তাআলার দেয়া বিধান, কাজেই আমার ভালো লাগুক আর না লাগুক, এতেই আমার জন্য কল্যাণ রয়েছে।
যেমনÑ রোজার বিধান; কারো মনে হতে পারে, পুরো এক মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা আমার জন্য ভীষণ কষ্টকর হয়ে যাবে। অথচ জাগতিক দৃষ্টিতেও যে রোজা কত উপকারী, তা তো এখন সবারই জানা আর আখিরাতের বিপুল সওয়াব তো রয়েছেই। তাছাড়া রোজায় এক মাসব্যাপী আত্মসংযমের যে চর্চা হয়ে থাকে, তা যে কারো জীবনকে আদর্শ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
পর্দার বিধানও কারো কাছে কষ্টকর মনে হতে পারে। অথচ এ বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারিমে বলেছেনÑ ‘এটি তাদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র পন্থা।’ যে সমাজে এ বিধান যত বেশি পালিত হয়েছে, সে সমাজ তত বেশি নিরাপদ হয়ে উঠেছে। আমাদের সোনালি ইতিহাস তারই সাক্ষ্য দেয়।
জাকাত দেয়া ও দান-সদকা করা কারো কাছে কষ্টকর লাগতে পারে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিচার করে কেউ মনে করতে পারে, এতে তো আমার সম্পদ কমে যাবে। অথচ জাকাত ও দান-সদকা সম্পদ কমায় না; বরং সম্পদ বাড়ায়। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে দান-সদকা করার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেনÑ ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম, যেমন একটি শস্য দানা সাতটি শীষ উদ্গত করে (এবং) প্রতিটি শীষে ১০০ দানা জন্মায়। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (সওয়াবে) কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা-২৬১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সদকা সম্পদ কমিয়ে দেয় না। কাউকে ক্ষমা করলে আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।’ (মুসলিম-২৫৮৮) এ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘কাউকে ক্ষমা করলে আল্লাহ সম্মান বাড়িয়ে দেন। অনেক সময় আমাদের মনে হতে পারে, কাউকে ক্ষমা করলে আমার ভীরুতা ও হীনম্মন্যতা প্রকাশ পাবে। এতে আমার সম্মান নষ্ট হবে। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এতে সম্মান তো কমবেই না; বরং আরো বেড়ে যাবে।’
তেমনিভাবে মনে হতে পারে, বিনয় প্রদর্শন করতে গেলে আমি অন্যদের কাছে ছোট হয়ে যাব। কারো কাছে আমার কোনো মর্যাদা থাকবে না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিনয়ী হলে আল্লাহ তাআলা মর্যাদা আরো বড়িয়ে দেন। দান-সদকার বিপরীতে সুদের লেনদেন কারো কাছে লাভজনক মনে হতে পারে। কেউ ভাবতে পারে, সুদ নিলে তো সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআন কারিমে সুদকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন।’
আখিরাতে সুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেনÑ ‘তোমরা যে সুদ দাও, যাতে তা মানুষের সম্পদে (যুক্ত হয়ে) বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশে তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাকো, তো যারা তা দেয়, তারাই (নিজেদের সম্পদ) কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে নেয়।’ (সূরা রুম-৩৯)
এভাবে শরিয়তের বিভিন্ন বিধানের ক্ষেত্রে আমাদের কুপ্রবৃত্তি আমাদেরকে ওয়াসওয়াসা দেয় এবং অন্যায়ের দিকে প্ররোচিত করে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা বলেছেনÑ ‘হতে পারে যে, তোমরা একটি জিনিসকে ভারী মনে করো, অথচ তোমাদের পক্ষে তা-ই কল্যাণকর। আবার এটিও হতে পারে যে, তোমরা একটি জিনিসকে পছন্দ করো, অথচ তোমাদের পক্ষে তা অকল্যাণকর। আর (প্রকৃত বিষয় তো) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।’ (সূরা বাকারা-২১৬)
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) যা কিছু আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন, তার সবটাই ভালো। আমাদের দুর্বল বিবেচনায় তার কোনো কোনো কল্যাণ ধরা নাও পরতে পারে, কিন্তু তিনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তার সবটাই কল্যাণকর।
এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একজন জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী নিয়ে এসেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ‘তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছি, যা কিছু কল্যাণকর।’ (মুসনাদে আহমাদ-২৩১২৭) অতএব আল্লাহ তাআলা ও রাসূলের যত বিধি-বিধান রয়েছে, তার সব কিছুই মানুষের জন্য চিরকল্যাণকর।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-১
শান্তির সমাজ পেতে ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নেই
দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণকামিতা
ইসলামে এসো, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে
নিরাশা নয় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-২
আরও
X

আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়   বিশেষ দোয়া মাহফিল

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায়  বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক  : মঞ্জু

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো