ইসলামে সহমর্মিতা ও সমাজসেবা
০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২১ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২১ এএম

অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমেই প্রকাশ পায় মানবতা। যে মানুষ অন্যের চোখের পানি মুছে দেয়, যে মানুষ অসহায়ের পাশে দাঁড়ায়, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে, সেই প্রকৃত মানুষ। মানুষ সামাজিক জীব। সে একা চলতে পারে না। পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। একের বিপদে অন্যে সাহায্যের হাত বাড়াবে, এগিয়ে আসবে সহমর্মিতা নিয়ে; সাহায্য ও সহমর্মিতার এই বোধ আমাদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন মহানবী (সা.)।
নবীজী উম্মতকে শিখিয়েছেন, সমগ্র মুসলিম জাতি মিলে একটি সত্তা, একটি দেহ। যার কোথাও আঘাত লাগলে প্রতিটি অঙ্গেই সেই ব্যথা অনুভূত হবে। জেগে উঠবে সমস্ত দেহ। তাই মুসলিম সমাজে কোনো পীড়িত কিংবা অসহায় ব্যক্তি সংকটগ্রস্ত হলে একাকিত্ব বোধ করে না। কারণ পাশেই আছে তার ভাই। ভ্রাতৃত্বের টানে যে এগিয়ে আসবে সাহায্যের জন্য। ইসলাম সব মুসলমানকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই।’ (সূরা হুজুরাত-১০)
তাই অপর ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা, দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেয়াই ইসলামের শিক্ষা। এ শিক্ষার সর্বপ্রথম প্রায়োগিক রূপ দিয়েছেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। মক্কায় নির্যাতিত হয়ে সাহাবায়ে কেরাম যখন মদীনায় হিজরত করেছিলেন, তখন মদীনার আনসারগণ গভীর ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলেন আপন মুহাজির ভাইদের।
মুহাজিরদের মনে ছিল মাতৃভূমি, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আসার দুঃখ, বাড়ি-ঘর, ধন-সম্পদ ছেড়ে আসার কষ্ট। তবে আনসারগণ চেয়েছেন, মুহাজির ভাইদের সব দুঃখ মুছে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে। তাই তো প্রত্যেকে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন মুহাজির ভাইদের সাহায্যে।
নবীজী (সা.) মদীনায় পৌঁছে প্রত্যেক মুহাজিরকে একএকজন আনসারীর সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। তার সার্বিক খোঁজ-খবর নেয়ার দায়িত্ব থাকে সেই আনসারীর উপর। যেমন, আবু তালহা (রা.) ও আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) ছিলেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) ও আবু তালহার মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন। (সহিহ মুসলিম-২৫২৮)
ভ্রাতৃত্বের এই পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর আনসারগণ এটাকে বোঝা কিংবা করুণা মনে করেননি; বরং একে মনে করেছিলেন জীবনের পরম সৌভাগ্য। তাই তো নিজেদের সবকিছু অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে দিতে চেয়েছেন মুহাজির ভাইদের।
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেনÑ নবী কারীম (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আউফ ও সা‘দ ইবনুর রাবী-এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন। সা‘দ (রা.) ছিলেন সম্পদশালী। তিনি আবদুর রহমান ইবনে আউফকে বললেন, আনসারগণ জানেন, আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী, তবে এ সম্পদ এখন আমার আর তোমার মাঝে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিতে চাই। আমার দু’জন স্ত্রী আছে। তাদের যাকে তোমার পছন্দ হয় তাকে আমি তালাক দিয়ে দেব। তুমি তাকে বিয়ে করে নিবে। (সহিহ বুখারী-৩৭৮১)
সুবহানাল্লাহ! কত বড় ত্যাগ! কত বড় কুরবানী! পৃথিবীতে কি খুঁজে পাওয়া যাবে এর নজীর! নিজের অর্ধেক সম্পদ দিতে চাচ্ছেন। প্রিয়তমা স্ত্রীকেও ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন; না নিজের রক্ত সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের জন্য নয়; বরং পরদেশী এক মানুষের জন্য, যার সাথে সম্পর্কের ও পরিচয়ের সূচনা হয়েছে অল্প ক’দিন আগে। তবে ঈমানের বন্ধন তাদের মাঝে হৃদয়ের গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছিল।
আনসারদের এই হৃদ্যতা মুহাজিরদের মুগ্ধ করেছিল। হৃদয় থেকে যে রক্ত ঝরছিল তা যেন বন্ধ হয়ে গেছে তাদের উষ্ণ আন্তরিকতা পেয়ে। তাই তো দরবারে নববীতে একদিন মুহাজিরগণ বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যাদের কাছে এসেছি, প্রাচুর্য-অপ্রাচুর্য সব অবস্থায় তাদের মতো এত ব্যয় করতে এবং এত উত্তম সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে আমরা আর কাউকে দেখিনি। তারা আমাদের সব প্রয়োজনে যথেষ্ট হয়েছেন এবং তাদের শ্রমলব্ধ সম্পদে আমাদের অংশীদার বানিয়েছেন। এমনকি আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, সব সওয়াব তাঁরাই নিয়ে যাবেন। (জামে তিরমিযী-২৪৮৭)
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন, বিপদগ্রস্ত ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে আসার যে নজীর স্থাপন করেছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে তা আজও ভাস্বর হয়ে আছে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে ত্যাগ, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্বের এই শিক্ষা লাভ করেছেন যুগে যুগে আল্লাহপ্রেমী মুমিনগণ। তাই তো বিপন্ন মানবতার আর্তনাদে সাড়া দিয়ে তারা ছুটে যান। তাদের পাশে এসে দাঁড়ান। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন।
মলিন মুখে খুশির হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন। ইসলামের ইতিহাসে প্রতিটি যুগে প্রতিটি জনপদে ভ্রাতৃসেবার এমন দৃষ্টান্ত অসংখ্য। সমাজে যে যখন সমস্যায় পড়েছে অন্যেরা তার সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। এজন্য মুসলিম সমাজে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থা। স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন, রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন, সংকটগ্রস্তদের আশ্রয়দান ইত্যাদি কোনো কিছুই এর বাইরে ছিল না।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বিশিষ্টজনদের আলোচনায় এই খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ

কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের রাজনীতি মো. নিজাম উদ্দিন

ফিলিস্তিনের গাজায় বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম জেলা জমইয়াতে হিযবুল্লাহর বিক্ষোভ

ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ ঢাকা ইউনাইটেডের বিক্ষোভ

তারেক রহমান ঘোষিত ৩১দফা সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপি'র জনসভা

বড়োদের শরীরে পা লাগলে কি করনীয় প্রসঙ্গে?

গ্রেফতারকৃত ক্রীম আপা কেন এত ভাইরাল?

মাগুরায় ছেলের মোটর সাইকেল থেকে পড়ে মায়ের মৃত্যু

চাঁদাবাজদের আর ক্ষমতায় আনা যাবে না : মুফতি ফয়জুল করীম

কিডনির পাথর অপসারণ বিষয়ে ডা. রফিকের আধুনিক চিকিৎসার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন
জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নিতে নারাজ শান্ত

পাঁচ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে ব্যাংকিং খাতে: গর্ভনর

নোয়াখালীতে "প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট"* এর গণ মিছিল সম্মেলন

ভারতে হনুমান জয়ন্তীতে মসজিদে লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ

ময়মনসিংহে ভালুকের শরীলে পচন আওয়ামী লীগ নেতার চিড়িয়াখানা সিলগালা

আলোর পথে যাত্রার আহ্বান থাকবে পয়লা বৈশাখে: ছায়ানট

ইসরাইলির গণহত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ

লক্ষ্মীপুরে কুপিয়ে জখমের ছয়দিন পর যুবকের মৃত্যু

রাজবাড়ীতে যুবদল নেতার হাতে লাঞ্ছিত নির্বাচন কর্মকর্তা ফোন ভাংচুর

রেল হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন সাধারণ মানুষও : উপদেষ্টা ফাওজুল