ঢাকা   মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১

আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-২

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম

শরীআতের পথে চললে ইসলাম বিরোধী মহল ধেয়ে আসবে। কাফের ও মুনাফিকদের পক্ষ থেকে নেমে আসবে উৎপীড়নের খড়্গ, যেমনটা খড়্গ তারা চালিয়েছিল পবিত্র মক্কায় ও সোনার মদীনায়।

তারা হামলা চালিয়েছিল জান-মালের উপর, আঘাত করেছিল ইজ্জত ও আব্রুর উপর। প্রিয়নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম তাতে অটল থেকেছিলেন। উপেক্ষা করেছিলেন তাদের যাবতীয় উৎপীড়ন। পরিশেষে বিজয় তাঁদের পদচুম্বন করেছিল। চূড়ান্ত বিজয় মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে হলেও তার ভীত রচিত হয়ে গিয়েছিল মদীনা মুনাওয়ারায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিনে, যখন মক্কা মুকাররমা থেকে উৎপীড়িত মুসলিমগণ ও নবী কারীম (সা.) নিজে এখানে চলে আসেন এবং এখানে আনসার-মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপিত হয়। তাদের সেই প্রীতিবন্ধনে প্রভাবিত হয়ে এখানকার ইহুদি গোত্রসমূহ তাঁদের সংগে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়।

কে না জানে, মদীনা মুনাওয়ারায় ইসলামের এ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল পবিত্র মক্কায় দীর্ঘ তের বছর দাওয়াতী কার্যক্রমে অবিচলিত থাকা এবং তাতে বেঈমানদের জুলুম-নিপীড়ন উপেক্ষা করা ও সর্বপ্রকার জুলুম-অত্যাচারে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করার মাধ্যমে। আজও প্রতিটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের কর্তব্য ইসলামের সূচনাকালীন মু’মিনদের পথ অনুসরণ করা। অর্থাৎ তাদের মত কুরআন ও সুন্নাহ’র পথে অবিচলিত থেকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দাওয়াত জারি রাখা। বেঈমানদের কথায় কর্ণপাত করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। ইজ্জত-আব্রু এমনকি জান-মালের উপরও যদি তারা হামলা চালায়, তবে সেসব হামলা আপাতত আমাদের উপেক্ষাই করে যেতে হবে। চরম ধৈর্যের সাথে আমাদের আপন আদর্শে অবিচলিত থাকতে হবে। এ আয়াতে সে নির্দেশই আমাদের দেয়া হয়েছে।

দুর্বল মনে সন্দেহ জাগতে পারে, মন টলে উঠতে পারে এবং ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। তা যাতে না হয় তাই কুরআন তৃতীয় নির্দেশ দিয়েছে- আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। হ্যাঁ মু’মিনদের তো আল্লাহরই উপর ভরসা রাখতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাঁর ইবাদত-আনুগত্যের সর্বশেষ বিধিমালার নাম ইসলামী শরীআত, কুরআন-সুন্নাহ যার উৎস। এ বিধিমালার প্রচার-প্রতিষ্ঠায় যারা আত্মনিয়োগ করবে, তারা আল্লাহর কর্মী। আল্লাহর কর্মী ও তাঁর সৈনিক হওয়ার মতো মর্যাদাকর কাজ জগতে আর কী হতে পারে? এতবড় মর্যাদাপূর্ণ কাজে যারা আত্মনিয়োগ করবে, তারা আল্লাহর সাহায্য না পেয়ে পারে কি?

ইখলাসের সাথে এ কাজে অবতীর্ণ হলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যাবেই। তিনি অন্তরে হিম্মত ও মনোবল দেবেন, অটুট ধৈর্যশক্তি দেবেন, পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি দান করবেন এবং শত্রুদের মধ্যে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করে দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসার সাথে তাঁর কাজে নেমে পড়ে, তাকে সফলতায় পৌঁছানোর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। সফলতার যাবতীয় ইন্তিজাম তিনি করে দেন। কুরআনের বহু আয়াতে এ আশ্বাসবাণী শোনানো হয়েছে। এ আয়াতেও শেষকথা বলা হয়েছে- ‘কর্মসম্পাদনকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট’।
সুতরাং আমরা যারা মুসলিম, যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ^াস রাখি এবং নিজেদেরকে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর উম্মত বলে দাবি করি, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য এ আয়াতকে জীবনের মাইলফলক বানানো। এ দেশের প্রত্যেক মুসলিম চাষী, মুসলিম শ্রমিক, মুসলিম ছাত্র, মুসলিম শিক্ষক, মুসলিম ব্যবসায়ী, মুসলিম আইনজীবী, মুসলিম সাংসদ, মুসলিম মন্ত্রী এবং যে-কেউ নিজেকে একজন মুসলিমরূপে আল্লাহর সামনে দাঁড় করাতে চায়, তার কর্তব্য আপন-আপন স্থানে শরীআত মোতাবেক জীবনযাপন করা ও শরীআতী জীবনাদর্শ প্রচারে সংকল্পবদ্ধ থাকা।

এর বিপরীতে যে যেই কথাই বলুক না কেন, তাতে সে আদৌ কর্ণপাত করবে না এবং যে যেই পরামর্শই দিক না কেন, সে তা ঘৃণাভরে উপেক্ষা ও অগ্রাহ্য করবে। পরামর্শদাতা দেশি-বিদেশি যেই হোক না কেন এবং যতবড় শক্তিশালীই হোক না কেন, কুচ পরওয়া নেহী। শরীআতের অনুসারীকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাআলাই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককেই এ আয়াতের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফীক দান করুন।(আমীন)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-১
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-২
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-১
জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
আরও

আরও পড়ুন

প্রথম সামাজিক অনুষ্ঠানে নাচলেন ট্রাম্প-মেলানিয়া

প্রথম সামাজিক অনুষ্ঠানে নাচলেন ট্রাম্প-মেলানিয়া

ফেসবুকে যা লিখলেন আলোচিত অভিনেতা জয়

ফেসবুকে যা লিখলেন আলোচিত অভিনেতা জয়

শিল্পী সমিতি থেকে ফ্যাসিস্ট নিপুণের স্থায়ী বহিষ্কার

শিল্পী সমিতি থেকে ফ্যাসিস্ট নিপুণের স্থায়ী বহিষ্কার

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ, সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিল

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ, সিবিপি ওয়ান অ্যাপ বাতিল

টিকা না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন প্রবাসীরা

টিকা না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন প্রবাসীরা

তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানসিক অপ্রকৃতস্থ যুবকের মৃত্যু

তারাকান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানসিক অপ্রকৃতস্থ যুবকের মৃত্যু

সরকারী চাকুরীর প্রলোভনে টাকা আত্মসাৎ, ভুক্তভোগীকে মামলায় হেনস্থার অভিযোগ

সরকারী চাকুরীর প্রলোভনে টাকা আত্মসাৎ, ভুক্তভোগীকে মামলায় হেনস্থার অভিযোগ

ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন

ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেন

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে এক ফ্রেমে এক ট্রিলিয়ন ডলার

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে এক ফ্রেমে এক ট্রিলিয়ন ডলার

পর্তুগালে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "গ্রিনফিল্ড একাডেমী"র যাত্রা শুরু

পর্তুগালে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "গ্রিনফিল্ড একাডেমী"র যাত্রা শুরু

আগে সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন : জাতীয় নাগরিক কমিটি

আগে সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন : জাতীয় নাগরিক কমিটি

দীর্ঘ ৫৮বছরপর উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে কাপ্তাই বাইতুল ইলাহ শাহী জামে মসজিদের উন্নয়ন শুরু

দীর্ঘ ৫৮বছরপর উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে কাপ্তাই বাইতুল ইলাহ শাহী জামে মসজিদের উন্নয়ন শুরু

অভিষেকের দিনেই বিতর্কে ট্রাম্প, বাইবেলে হাত না রেখেই শপথ

অভিষেকের দিনেই বিতর্কে ট্রাম্প, বাইবেলে হাত না রেখেই শপথ

এবার প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াস্পোরা সেল’ গঠন করল নাগরিক কমিটি

এবার প্রবাসীদের জন্য ‘ডায়াস্পোরা সেল’ গঠন করল নাগরিক কমিটি

ইসরায়েলপন্থি মার্কো রুবিওকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ

ইসরায়েলপন্থি মার্কো রুবিওকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ

আমাদের এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে : জো বাইডেন

আমাদের এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে : জো বাইডেন

যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২

যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২

সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন

সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন

মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা

মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা

কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও

কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও