ইসলামে অতিথিসেবার শিক্ষা-১
২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে একবার এক লোক এসে বলল, আমি খুবই ক্ষুধার্ত। নবীজী (সা.) এ কথা শুনে তাঁর কোনো এক স্ত্রীর কাছে খাবারের জন্যে পাঠালেন। কিন্তু তিনি বলে দিলেনÑ যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর আরেকজনের কাছে পাঠালেন। তিনিও একই উত্তর দিলেন। এভাবে একে একে নবীজী (সা.)-এর সব স্ত্রীই একই কথা বললেন, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই।
এরপর সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে নবীজী (সা.) আগন্তুককে দেখিয়ে ঘোষণা করলেন, আজকের এই রাতে কে তার মেহমানদারি করতে পারবে? আল্লাহ তাকে দয়া করবেন! এক আনসারি সাহাবী দাঁড়িয়ে গেলেন- আমি পারব! এরপর তিনি তার মেহমানকে নিয়ে বাড়ি চললেন। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, তিনি আল্লাহর রাসূলের মেহমান, তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করো।
স্ত্রী বলল, আমার কাছে যে বাচ্চাদের জন্যে রাখা সামান্য খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই! সাহাবী বললেন, ঠিক আছে, তুমি ততটুকু খাবারই প্রস্তুত করো, বাতি জ্বালিয়ে দাও আর বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। মেহমান ঘরে এলে বাতি নিভিয়ে দেবে আর তার সামনে আমরা খাওয়ার ভান করব। তিনি যখনই খেতে যাবেন, তখনই তুমি বাতিটি ঠিক করার মতো কিছু একটা করতে গিয়ে তা নিভিয়ে দেবে।
এরপর এই পরিকল্পনা মোতাবেকই সবকিছু করা হলো। খাবার প্রস্তুত করা হলো। বাতি জ্বালানো হলো। বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো হলো। মেহমান যখন খেতে যাবেন এমন সময় ঘরনি গিয়ে কৌশলে বাতিটি নিভিয়ে দিল। আগন্তুক মেহমান দেখলেন, তার মেজবানও খাচ্ছে। তাই নিঃসঙ্কোচে তিনি খেয়ে নিলেন। কিন্তু আসলে তারা শুধু অন্ধকারে মেহমানের সামনে খাওয়ার ভান করছিল। পরিবারের সবাই সে রাতটি ক্ষুধার্তই কাটিয়ে দিল।
পরদিন সকালবেলা ওই সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী (সা.) তাকে দেখে বললেন, তোমাদের দু’জনের কা- দেখে আল্লাহ মুগ্ধ হয়েছেন। তখন নাজিল হলো পবিত্র কুরআনের এ আয়াতÑ ‘নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। নিজ মনের কার্পণ্য থেকে যারা বেঁচে রইল তারাই তো সফলকাম।’ (সূরা হাশর-৯, সহিহ বুখারী-৩৭৯৮)
ইসলাম আমাদেরকে এ অতিথিসেবাই শিক্ষা দেয়। তিনি একজন আনসারি সাহাবী ছিলেন। নাম আবু তালহা। তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন। আর এর মধ্য দিয়ে এ সাহাবী হয়ে উঠলেন আমাদের ইতিহাসের অংশ! পবিত্র কুরআনের এ আয়াত যথার্থ বুঝতে হলে তাঁর কাহিনীটি পড়তেই হবে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অতিথিসেবাকে ঈমানের অংশই বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে কেউ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে। (সহিহ বুখারী-৬০১৮)
খাবারের ব্যবস্থা করা অতিথিসেবার কেন্দ্রীয় বিষয় বলা যায়। আপ্যায়ন কেমন হবে- সে শিক্ষাও আমরা পবিত্র কুরআনে খুঁজে পাই। মহান নবী সায়্যিদুনা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে পাক কুরআনে। এক সুসংবাদ নিয়ে কয়েকজন ফেরেশতা মানুষের বেশ ধরে এসেছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে। তিনি তাদেরকে মেহমান মনে করে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন।
কুরআনের ভাষায় পড়–নÑ “আমার ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা ‘সালাম’ বলল। তিনিও বললেন, সালাম। অতঃপর তিনি অবিলম্বে একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন। এরপর তিনি যখন দেখলেন, তাদের হাত সেদিকে এগুচ্ছে না, তখন তাদের ব্যাপারে তাঁর খটকা লাগল এবং তাদেরকে তিনি ভয় করতে লাগলেন। তারা বলল, আপনি ভয় করবেন না, আমরা কওমে লুতের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। তাঁর স্ত্রী ছিল দাঁড়ানো, সে তখন হেসে উঠল। তখন আমি তাকে ইসহাকের এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম।” (সূরা হূদÑ৬৯-৭১)
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ সংক্ষিপ্ত ঘটনার ভেতর দিয়েও অতিথিসেবার বেশ কয়েকটি দিক খুঁজে পাব। যেমনÑ ১. অতিথিকে খাবারের কাছে নিয়ে না গিয়ে বরং তার কাছে খাবার নিয়ে আসা। নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এখানে তাই করেছেন।
২. দ্রুত খাবারের ব্যবস্থা করা। প্রথম বর্ণনায় স্পষ্টই বলা হয়েছে- তিনি খুব দ্রুতই একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এসেছিলেন।
৩. সাধ্যমত ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। খাবারের বর্ণনায় এক আয়াতে বলা হয়েছে মোটা-তাজা বাছুরের কথা, আরেক আয়াতে ভুনা করা বাছুরের কথা। এক আয়াতে বলা হচ্ছে খাবারের উৎকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় মানের কথা, আরেক আয়াতে পরিমাণ ও মান উভয়ের কথা। মেহমানের জন্যে খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাই সাধ্যমত ভালো এবং পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত। খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সময় ও পরিবেশও অবশ্য-বিবেচ্য বিষয়। দূর থেকে সফর করে আসা পরিশ্রান্ত কোনো অতিথিকে ভারি কোনো খাবার না দিয়ে ক্লান্তি দূর করে এমন কিছু দিয়ে প্রথমে আপ্যায়ন করা যেতে পারে। কখনো এক গ্লাস ঠা-া পানি বা শরবতও দামি দামি অনেক খাবারের তুলনায় অধিক তৃপ্তিদায়ক হতে পারে। তাই আপ্যায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেই হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পুকুর খনন নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত -৭ বাড়ীঘর, মটরসাইকেল ভাংচুর, লুটপাট
খুলনার উন্নয়নে স্ট্র্যাকচার প্ল্যান তৈরি ও আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়ে গুরুত্বারোপ
‘এপোস্টিল’ পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট সত্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় এবং ভোগান্তি কমবে
সদর থানার ওসিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ না করলে কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসিনার গণহত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত চলছে
ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত পূর্বদিকের সহকারি সম্পাদক রেদোয়ান
বেক্সিমকোর শ্রমিকদের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ
শীতের চাদরে ঢাকা সুন্দরগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত
কুয়েট পরিদর্শন করলেন বিআইটি, খুলনার প্রথম ডাইরেক্টর প্রফেসর এম এ হান্নান
তানজিদ ঝড়ে উড়ে গেল চট্টগ্রাম
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবি সাংবাদিকদের
বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান রিজভীর
ফ্যাসিবাদ আর যেন না আসে সে শপথ ও অঙ্গিকার নিয়ে মাঠে নেমেছি : এ্যানি
শ্যামনগরে পাইপগান,ককটেল ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ আটক দুই
নির্বাচন নিয়ে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিঠা উৎসব
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পিরোজপুরে সাইকেল র্যালি
আসিফ নজরুলের আশ্বাসে মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুকদের আন্দোলন স্থগিত
চাঁদপুর মেঘনায় অবৈধ বালুবহনকারী দুটি বাল্কডেসহ আটক ৮
ভিক্ষা না করার শপথ দিলেন ১৫ জন ভিক্ষুক