ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯ মাঘ ১৪৩১

ইসলামে অতিথিসেবার শিক্ষা-২

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম

অতিথিসেবার একটি বড় বিষয়- তার খাবারের ব্যবস্থা করা। কথা এতটুকু ঠিক। কিন্তু তাই বলে কেবল এ খাবারের ব্যবস্থা করাই অতিথিসেবা নয়। যিনি অতিথি, সাধ্যমত তার সবরকম আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। কী শারীরিক আর কী মানসিক- কোনো দিক থেকেই যেন তাকে কোনোরূপ কষ্ট পোহাতে না হয়। তাকে যেন কোনোরূপ বিড়ম্বনা কিংবা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয়; একজন মেজবানের জন্যে সেদিকে লক্ষ রাখাও জরুরি। বরং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। মোটকথা, আরামে রাখা এবং সম্মান করার যত পথ ও পন্থা, যথাসম্ভব সবই কাজে লাগাতে হবে অতিথির ক্ষেত্রে। এ সবকিছু মিলিয়েই পূর্ণতা পায় অতিথির আপ্যায়ন।
পবিত্র কুরআন এবং প্রিয় নবীজী (সা.) এর সীরাত ও হাদীস আমাদেরকে এ শিক্ষাই দেয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

তোমার ওপর তোমার মেহমানদেরও হক রয়েছে। (সহীহ বুখারী : ১৯৭৫)।
হযরত সালমান ফারসী রা. এবং হযরত আবুদদারদা রা.-এর মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা.) ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হযরত সালমান ফারসী রা. একদিন তার ভাই হযরত আবুদ্দারদা রা.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। আবুদদারদা রা. তখন ভাইয়ের জন্যে নিজ হাতে খাবার প্রস্তুত করলেন। তার সামনে খাবার পরিবেশন করে বললেন, আপনি খান, আমি রোযা রেখেছি। কিন্তু হযরত সালমান ফারসী রা. বললেন , আপনি না খেলে আমি খাব না। হযরত আবুদদারদা রা. তখন মেহমানের সম্মান রক্ষার্থে রোযা ভেঙ্গে তার সঙ্গে খেয়েছেন। (সহীহ বুখারী : ৬১৩৯)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) উপরোক্ত হাদীসে মেহমানের যে অধিকারের কথা বলেছেন, সে অধিকার পূর্ণ করতে গিয়েই তাঁর এক প্রিয় সাহাবী হযরত আবুদদারদা রা. সেদিন রোযা ভেঙ্গেছিলেন। বোঝা গেল, মেহমানের সঙ্গে বসে খাওয়াও মেহমানের একটি অধিকার। এটাও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ। তার সঙ্গে বসে খেলে সে একাকীত্ব অনুভব করবে না। খেতে লজ্জা ও সংকোচ বোধ করবে না। প্রসন্ন মন নিয়েই সে খেতে পারবে।

মেহমানের খাতিরে যে কোনো প্রকার কষ্ট স্বীকার করা, যেমন নিজে গিয়ে তার জন্যে বাজার থেকে খাবার কিনে আনা, প্রয়োজনে নিজ হাতে খাবার প্রস্তুত করার মধ্য দিয়েও তার প্রতি একপ্রকার সম্মান প্রদর্শন করা হয়। নিজের হাতের উপার্জিত খাবার, নিজের হাতে কেনা খাবার, নিজের হাতে রান্না করা খাবার ইত্যাদির স্বাদই যেন একটু ভিন্ন। নিজে খেতে ও কাউকে খাওয়াতেও এতে তৃপ্তি পাওয়া যায় বেশি। উপরোক্ত ঘটনাটিতেও আমরা এ দৃশ্য দেখতে পাই। হযরত আবুদদারদা রা. নিজ হাতে হযরত সালমান ফারসী রা.-এর জন্য খাবার প্রস্তুত করেছিলেন।
মেহমানের সঙ্গে বসে কথা বলাও মেহমানের একটি অধিকার। তাকে একাকী ঘরে বসিয়ে রেখে মেজবান যদি নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে এতে সে বিব্রত হতে পারে। মানসিক কষ্টের শিকার হতে পারে। তাকে সঙ্গ দিতে হবে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গোলাম হযরত ছাওবান রা. বর্ণনা করেছেন, একবার গ্রাম থেকে এক মেহমান আমাদের কাছে এল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন তাকে নিয়ে বাড়ির সামনে বসে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। বিভিন্ন বিষয় তিনি নিজে থেকেই তার কাছে জানতে চেয়েছেন- ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা এখন কেমন আছে ইত্যাদি। (আশশরীয়াহ, আজুররী পৃ. ৩৯৪)।

যখন বাইরের কোনো প্রতিনিধি দল নবীজী (সা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসত, তখন তিনি তাঁর কাছে থাকা সবচেয়ে সুন্দর কাপড়টি পরতেন। সাহাবীদেরকেও তা করতে বলতেন। হযরত জুনদুব রা. বর্ণনা করেন, একবার কিন্দার এক কাফেলা নবীজী (সা.) এর কাছে এসেছিল। তখন তাঁর পরনে ইয়ামেনি এক জোড়া কাপড় শোভা পাচ্ছিল। হযরত আবু বকর ও হযরত উমর রা.-ও সেদিন ইয়ামেনি কাপড় পরেছিলেন। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ৬/২৫৯)।

বোঝা গেল, ভালো কাপড় পরাও মেহমানের প্রতি একপ্রকার সম্মান। এতে মেহমান অনুভব করবে- মেজবান তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাকে অনাকাক্সিক্ষত বিবেচনা করছে না। সর্বশেষ মেহমানকে বিদায় দেয়ার সময় তার সঙ্গে একটু এগিয়ে যাওয়া উচিত। মেহমানের সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে তাকে একটু হলেও এগিয়ে দিয়ে এলে সে তৃপ্ত হবে আতিথেয়তায়।

আসলে কথা কী, অতিথিসেবার মধ্যে মনের উদারতাই হচ্ছে বড় বিষয়। মেজবান বিবেচনা করবে- কী করলে তার মেহমান একটু বেশি আরাম বোধ করবে। সাধ্যমতো তার জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে- এটা ঠিক। কিন্তু ভালো খাবারই শেষ কথা নয়। সাধ্যের খাবার যদি সাধারণও হয়, কিন্তু তার আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি না থাকে, তাহলে মেহমান এতে তৃপ্ত না হয়ে পারে না। আর যদি এর বিপরীত কিছু ঘটে, মেহমান তখন নিজেকে অপরাধীও মনে করতে পারে। হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার অভাবে তখন বড় বড় আয়োজনও মাটি হয়ে যেতে পারে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামে অতিথিসেবার শিক্ষা-১
আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-২
আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-১
ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী
ভালো কাজে দেরি করা উচিত নয়-২
আরও

আরও পড়ুন

ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?

ভারতকে ছেড়ে কেন চীনের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা?

রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান

রাজনৈতিক উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে জাপান

প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত

প্রবাসী উপদেষ্টার আশ্বাসে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুদের আন্দোলন স্থগিত

মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা

মহার্ঘভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা

পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার

পুরো বইমেলা মনিটরিং হবে ড্রোনে-ডিএমপি কমিশনার

যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা

যানবাহন চালক-পথচারীদের জন্য ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা

মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি

মাস্ক বা অন্য কেউ টিকটক কিনলে বিনিয়োগ করবে প্রিন্স তালালের কোম্পানি

মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?

মৃত বাবার রেখে যাওয়া ঋণ পাওনাদার নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে?

খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান

খেলাধুলার মাধ্যমে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক বিকশিত হয় -ডিসি তৌফিকুর রহমান

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবি বিএসএফ বৈঠক

জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে সিলেটজুড়ে স্বস্তি

৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী

৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি আবু রেজা নদভী

মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা

মাদারীপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবপাচারের আন্তঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মশালা

রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর

রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে সমন্বয়ককে মারধর

মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন

মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন

এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ

এক বছরে উখিয়া-টেকনাফে ১৯২ জন অপহরণ

‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি

‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ দেয়ালে লিখে হত্যার হুমকি

বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন

বিমানের এই কর্মকা- সহ্য করার মতো নয় -সিলেট সুধীজন

বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম

বাণিজ্যমেলায় শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম