স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার : যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নীরবে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৭ এএম

সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, কোনো সমাজে রাজনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাব ভয়াবহ হয়ে থাকে। রাজনৈতিক আগ্রাসনের ফলে হয়তো কিছু আন্দোলন হয়, বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, বিবাদ-বিসম্বাদ বাড়ে কিংবা হতাহতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে একেকটি জাতি ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছে। এ সমাজে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী একটি মাধ্যম হলো স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ এবং প্রায় পুরো বিশ্ব এখন এই আগ্রাসনের তীব্র ধাক্কায় বেসামাল। উত্তরণহীন অধঃপতনে মুমূর্ষু। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ক্ষতি বহুমুখী এবং বহু বিস্তৃত। এত ব্যাপক ক্ষতি ও আগ্রাসনের পেছনে সবচে বড় কারণ হলো- জীবনের সাথে স্মার্টফোনের ওতপ্রোত সংযুক্তি। জগৎ ও জাগতিক বিষয়ের সাথে ইন্টারনেটের ঘন সংমিশ্রণ। প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে অপ্রয়োজনীয় জিনিসের যে আশ্চর্য সম্পৃক্তি তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটে, সত্যিই তা নজিরবিহীন।
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ক্ষতি তালিকাবদ্ধ করতে গেলে উল্লেখযোগ্য শিরোনামে আসবে- সময়ের অপচয়, অর্থের অপচয়, চোখের গোনাহ, দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি, শারীরিক-মানসিক চাপ, চরিত্র ও চিন্তা-চেতনার বিপর্যয় এবং ঈমানের ভয়াবহ অধঃপতন। এছাড়া কত ঘর-সংসার যে এর মাধ্যমে টুকরো টুকরো হয়েছে, কত জীবন যে বিপন্ন হয়েছে, কত মা-বাবা সন্তান হারিয়েছেন, কত সন্তান হারিয়েছে তার ভবিষ্যৎ এবং কতভাবে কত মানুষ কত ভয়ঙ্কর জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে- সেই ফিরিস্তি শেষ হওয়ার নয়।
দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট প্রয়োজনীয় কাজের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি যারা কঠিনভাবে নিয়ম মেনে চলেন, মজবুত রুটিন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন, তারাও এখানে সময় বাঁচাতে ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হন কেবল প্রয়োজনীয় কাজের মধ্যেই তাকে সীমাবদ্ধ রাখতে। না চাইলেও এতে বিপুল সময়ের অপচয় হয়, লক্ষ্যমুখী কাজে বিঘœ ঘটে। এটা তো হলো সময়-সচেতন ও লক্ষ্যে অবিচল মানুষের ক্ষেত্রে। যারা অসচেতন কিংবা অসতর্ক- তারা যে কত রকমের ক্ষতির শিকার হয়, হিসাব করে বের করা যাবে না।
ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগুলোর একটি হলো চোখের গোনাহ। নেট ব্যবহার করেও এ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে- এমন মানুষ বোধহয় হাজারে একজন পাওয়া দুষ্কর হবে। কারণ এখানে সর্বব্যাপী আয়োজনটাই এমন যে, এই গোনাহমুক্ত হয়ে থাকা সম্ভব নয়। ফলে বার বার গোনাহটি করতে করতে একসময় খুব সহজ হয়ে যায় এবং এটিকে খুব স্বাভাবিক ধরে নেয়া হয়। অথচ হাদিস শরিফে কত কঠিন কথা বলা হয়েছে এ প্রসঙ্গে : দৃষ্টি নিক্ষেপ হলো চোখের যিনা। (সহিহ বুখারি-৬২৪৩) চোখের গোনাহের যেসব ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের মনোজগতে পড়ে, এখানেও তা পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
খুব তিক্ত হলেও সত্য যে, এর দ্বারা সীমাহীন ক্ষতির শিকার হয়েছে সমাজের দ্বীনদার শ্রেণি এবং পর্দানশীন পরিবারগুলো। ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে, দ্বীনী পরিবেশে বেড়ে ওঠা সন্তানেরা এবং পর্দানশীন নারীরা আগে অন্তত এই গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পেত না। বাবা, স্বামী, ভাই এবং মা ও সংসারের অন্য অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানেই তাদের জীবন পরিচালিত হতো। সম্পূর্ণ ঘরোয়াভাবে থাকার কারণে গায়রে মাহরাম কোনো পুরুষকে দেখা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু এই মোবাইল ইন্টারনেটের কারণে এখন আর কোনো তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ কিংবা কোনো নজরদারি তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
এ ক্ষেত্রে মোবাইলের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত অজুহাত সবচে বড় ভূমিকা পালন করে। আর ভূমিকা পালন করে ‘ইসলামিক ভিডিও’ ও ‘ইসলামী সঙ্গীত’ দেখার অজুহাত। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন, এইসব অজুহাত কতটা অনর্থ! এসব অজুহাতের নামে শয়তান আমাদেরকে কত মারাত্মক ধোঁকায় ফেলছে! একটু দরদের সাথে, পর্দানশীন নারীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অভিভাবকরা কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন?
দ্বীনদার অনেক মা-বাবার মুখেও শোনা যায়, শিশুরা নাকি ইউটিউবে মজার ভিডিও আর কার্টুন না দেখে খাবারই খেতে চায় না! ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন! একটু শান্তভাবে ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে- কী দুঃখজনক পরিস্থিতির পরিণতি এটি কিংবা এটি কত ভয়ঙ্কর ক্ষতির পূর্বাভাস! শুধু এক ইন্টারনেটের মাধ্যমেই দ্বীনদার বা দ্বীনদার নন, এমন কত পরিবারের কত সদস্যের চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটেছে এবং কতজনের জীবন ও ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে তা কি হিসাব করে বের করা সম্ভব?
এজন্য প্রথম কাজ হলো- যথাসম্ভব ঘরকে ইন্টারনেট মুক্ত রাখা। অন্তত সন্তানের সামনে মা-বাবার দীর্ঘ সময় নিয়ে নেট ব্যবহার ও মোবাইল ফোন দেয়া থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করা। মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেট এক বিষধর সাপ। এর এক ছোবলে যে কারো প্রাণনাশ হতে পারে। এর ছোবল থেকে বেঁচে থাকা তো সবার সাধ্যের বিষয় নয়!
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো