স্বাধীনতা আল্লাহর এক অনন্য নিয়ামত
২৬ মার্চ ২০২৫, ০২:১৫ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০২:১৫ এএম

স্বাধীনতা মানে হচ্ছে অপর কোনো শক্তির অধীনতায় না থাকা। মানুষ যেহেতু বিবেকবান, হৃদয় ও সুমস্তিষ্ক সম্পন্ন সবাক প্রাণী তাই স্বাধীনতার চেতনা তার মজ্জাগত। অপর কোনো সৃষ্টির কাছে সে নতি স্বীকার করবে না, অপর কোনো সৃষ্টির অধীনে তার জীবন ও অস্তিত্ব বাঁধা পড়বে নাÑ এটাই তার স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত আকাক্সক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু যেহেতু মানুষ নিজে স্রষ্টা নয়, বরং মহান স্রষ্টার এক অপূর্ব সৃষ্টি তাই তার স্বাধীনতার সব সীমানা প্রশ্নাতীত রকমের ব্যাপক ও বিস্তৃত নয়। স্রষ্টার আনুগত্যের পর তার স্বাধীনতার চেতনা পাখা মেলবে। এটাই হচ্ছে মানুষের স্বাধীনতার চূড়ান্ত সীমানা।
যুক্তিসঙ্গত এই সীমানা ও নীতিকে গ্রহণ করার পর স্বাধীনতা মানুষের প্রতি মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার এক মস্তবড় দান। খোদা তাআলার এক মহা নেয়ামত। মানুষকে আল্লাহ তাআলা স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন। মানুষের আসল স্বভাবগত অবস্থা হচ্ছে তার স্বাধীন থাকা। এজন্য মানুষের ওপর একটি করণীয় বা দায়িত্ব অর্পিত হয়। সেটি হচ্ছে এই মহা নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, এই মস্ত দানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
আর তার রূপ হলো, মানুষের স্রষ্টা এবং মানুষকে স্বাধীনতা দানকারী মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা, কাজ-কর্মে, কথায় জীবনের সব ক্ষেত্রে। মানুষ যখন তার এই দায়িত্ব ও করণীয় ভুলে যায়, কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কৃপণ হয়ে পড়ে তখনই তার উপর আসে পরাধীনতার শাস্তি। দাসত্ব, গোলামী ও পরাধীনতা মূলত মানুষের জন্য শাস্তিদায়ক একটি অবস্থা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতার এই নেয়ামতের কদর, মূল্যায়ন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কীভাবে মানুষের পক্ষে সহজে সম্ভব হবে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, যারা স্বাধীনতার তাৎপর্য ও হাকীকত বুঝে, স্বাধীনতা-পরাধীনতার পার্থক্য বুঝে, স্বাধীনতা নেয়ামত হওয়ার জন্য যেসব নীতিমালার অনুসরণ অপরিহার্য সেগুলো সম্পর্কে জানে তাদের পক্ষেই স্বাধীনতার মূল্য দেয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্ভব। স্বাধীনতা-পরাধীনতার দ্বিমুখিতা ও স্বাধীনতার নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জরুরি ইলম থাকলেই কৃতজ্ঞতার আচরণ সংঘটন সহজে সম্ভব।
ইসলাম বিভিন্ন দিক থেকে স্বাধীনতার সবক ও চেতনার শিক্ষা দিয়েছে। স্বাধীনতার প্রথম সবক হচ্ছে নফস ও শয়তানের প্ররোচনা ও দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকা, স্বাধীন থাকা। সূরায়ে ইয়াসিনের ৬০, ৬১ ও ৬২ নম্বর আয়াতের আলোকে এ শিক্ষার মর্ম অনুধাবন করা যায়। আয়াতগুলোর তরজমা হলোÑ ‘হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর আমারই ইবাদত কর, এটিই সরল পথ। শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল, তবুও কি তোমরা বুঝোনি?’
স্বাধীনতার দ্বিতীয় সবক হচ্ছে, বিজাতিদের গোলামী থেকে স্বাধীন থাকা। এ গোলামী কেবল ভৌগোলিক দখল-বেদখলেরই নয়, বরং এর মধ্যে সাংস্কৃতিক দাসত্বও অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম সূক্ষ্ম সে সাংস্কৃতিক দাসত্বকেও ঘৃণা করে। হাদিসে রাসূলে উল্লেখ হয়েছেÑ ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ : ৪০২৭)
স্বাধীনতার তৃতীয় সবক হচ্ছে, অমূলক রুসম-রেওয়াজ ও বেদআত থেকে মুক্ত থাকা, স্বাধীন থাকা। মূলত আল্লাহর আনুগত্যের পাশাপাশি দেহের ও চিত্তের সব ধরনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি ও আযাদির নামই স্বাধীনতা।
ইসলামের নীতি ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলাম মূলত ‘হুররিয়্যত’ বা স্বাধীনতারই ঝান্ডাবাহী। মানুষের স্বাধীন জীবনযাত্রা অক্ষুণœ রাখার স্বার্থেই মানুষের রক্ত, সম্পদ, সম্ভ্রমকে অপর মানুষের জন্য সম্মানিত করে দেয়া হয়েছে। এই তিনটির উপর যেকোনো আঘাতকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের অভিযোগ ও কষ্ট দূর করার ক্ষেত্রগুলোতে ‘গীবত’-এর মতো নিকৃষ্ট বিষয়কেও জায়েয আখ্যা দেয়া হয়েছে। অপরের আরাম ও নিরাপত্তায় যেন সামান্য পরিমাণও বিঘœ না ঘটে সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলামে ঘোষণা করা হয়েছে ‘নিশ্চয়ই হকের প্রাপকের জন্য কথার সুযোগ রয়েছে।’
এ ঘোষণা দিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে ব্যাপক বাক-স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং ব্যক্তির অন্তর ও বাহ্যিক জগতের সব পর্যায়ে ইসলাম স্বাধীনতার নিশান উড়িয়ে দিয়েছে। সে স্বাধীনতায় স্রষ্টার আনুগত্য এবং অপরের হক ক্ষুণœ না করার পর্বটিকেও উজ্জ্বল রাখাকে স্বাধীনতার অংশ সাব্যস্ত করা হয়েছে। নফস-শয়তানের পরাধীনতামুক্ত থাকা অপরিহার্য। সে স্বাধীনতার জন্য কৃতজ্ঞতার মৌখিক ও আচরণগত ভাষা প্রকাশিত হওয়া অনিবার্য। তবেই সে স্বাধীনতা হবে সার্থক ও সফল।
শেষ কথা হলো, আল্লাহ তাআলা যখন কোনো ভূখ- কাউকে বা কোনো জাতিকে দান করেন, তখন সে ভূখ--প্রাপকদের উচিত তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা। আর সে শুকরিয়া আদায়ের রূপ হলো- ক. সমাজের সর্বস্তরে ইনসাফ কায়েম করা, খ. সমাজে দ্বীন ও শরীয়ত কায়েম করা। সূরায়ে হজ্বের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি সম্পর্কে ইরশাদ করেন- ‘আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎ কাজের আদেশ দেবে, অসৎকাজের নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে।’
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মারা গেছেন 'ব্যাটম্যান'-'জিম মরিসন' চরিত্রে অভিনয় করা ভ্যাল কিলমার

হিন্দুদের কাছ থেকে মুসলিমদেরকে ধর্মীয় শৃঙ্খলা শেখা উচিত : যোগী আদিত্যনাথ

দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে সরকার অবশ্যই হার্ডলাইনে যাবে

মানবিক সহায়তাকর্মীদের জন্য গাজা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান: যুক্তরাজ্য

লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়ায় তিন দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো ১৩ জন

হবিগঞ্জের বাহুবলে ১২ গ্রামের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত অর্ধশত

ইসরাইলের কাছে বড় ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল

যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীতে আবারও হামলা ইয়ামেনের

কাল থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

বরিশালের উজিরপুরে যুবক-যুবতিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহত ২৭০০ ছাড়াল

৩২ শহীদ পরিবারের সঙ্গে জামায়াত আমিরের ঈদ উদযাপন

ঘিবলি ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন? দেখুন কোন বিপদ ডেকে এনেছেন আপনি!

জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, ৩ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

গাজীপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাইভেটকার চালকের মৃত্যু

লোহাগড়ায় ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

পাকিস্তানকে উড়িয়ে সিরিজ নিউজিল্যান্ডের

মির্জাপুরে মসজিদের ইমামের রাজকীয় বিদায়

মধ্যপ্রাচ্যে আরও বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, উত্তেজনা বাড়ছে

লোহাগাড়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১০