বিবাদ-বিসংবাদে করণীয়-১
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন : হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যর্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা : ৫৯)। এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মুমিন বান্দাদের সম্বোধন করে আদেশ করেছেন, তারা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করে এবং দ্বীনী ও দুনিয়াবী ক্ষেত্রে কর্তা ও দায়়িত্বশীলদের আনুগত্য করে। এরপর কোনো বিষয়ে তাদের মাঝে বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হলে তা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর সামনে পেশ করে। এটি কল্যাণকর এবং পরিণামের দিক থেকে উত্তম।
কুরআন মাজীদ আমাদেরকে আমাদের জীবনের সকল কথা ও কাজের মূলনীতি জানিয়ে দিয়েছে। মুমিন তার জীবনের সকল কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুম অনুযায়ী করবে। রাসূলে কারীম (সা.)-এর আনুগত্যের মধ্যদিয়ে করবে। দ্বীনী ক্ষেত্রে ও দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাদের দায়িত্বশীল বানিয়েছেন তাদের আনুগত্য করবে। এই আনুগত্য উপরের আনুগত্যের অধীন। এরপর কোনো বিষয়ে তাদের মাঝে বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর সামনে পেশ করবে। ওখান থেকে যে ফায়সালা আসে তা সর্বান্তকরণে মেনে নিবে। এটি তাদের দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানে জন্য কল্যাণকর। তো মুসলিম-জীবনের নীতি হচ্ছে শান্তিতে-বিবাদে সর্বাবস্থায় আল্লাহর হুকুমের সামনে সমর্পিত থাকা।
মুসলিমের জীবনাদর্শ ইসলাম। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সে ইসলামেরই অনুসারী। ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ-জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধানেরই অনুগত। ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে লেনদেন, বিয়ে-শাদী, পর্ব-উৎসব, আদব-আখলাক, নীতি-দর্শন, বেশ-ভ‚ষা, লাইফস্টাইল সকল ক্ষেত্রে সে উসওয়ায়ে রাসূল (সা.) তথা নবী-আদর্শের অনুসারী।
মুসলিমের এই আনুগত্য ও অনুসরণ শুধু শান্তি ও সৌহার্দের অবস্থাতেই নয়, অশান্তি ও বিবাদের ক্ষেত্রেও। মুসলিমের বিচার-সালিশ, রায়-ফায়সালা সবই হবে আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুসারে, আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর শরীয়ত অনুসারে। এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। (সূরা নিসা : ৬৫)।
এই আয়াতে কসমের সাথে বলা হয়েছে যে, নিজেদের বিবাদ-বিসংবাদের বিচারের ভার নবী (সা.)-এর উপর অর্পণ করার আগ পর্যন্ত এবং তাঁর রায় সর্বান্তকরণে মেনে নেয়ার আগ পর্যন্ত মুমিন হওয়া যায় না। কাজেই বিবাদ-বিসংবাদের ক্ষেত্রেও মুসলিমের করণীয় দ্বীন ও শরীয়তের পাবন্দ থাকা। শরীয়ত এ অবস্থায় যে করণীয় সাব্যস্ত করে তা পালন করা, যা বর্জনীয় সাব্যস্ত করে তা বর্জন করা। ইসলামী জীবনের এটি অনেক বড় মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
এই আয়াতে যে মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন ও সুন্নাহয় আছে, ফিকহে ইসলামীতে আছে। সেই শিক্ষা যদি মুমিনগণ অবলম্বন করেন তাহলে তাদের দুনিয়ার জীবনও সুন্দর হবে, শৃঙ্খলাপূর্ণ হবে, আখেরাতের জীবনেও নাজাত পাওয়া যাবে, শান্তি পাওয়া যাবে।
কুরআন মাজীদের এই আয়াত থেকে আমরা জীবনের এক বাস্তবতা এবং সেই বাস্তবতায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা পাই। ‘তানাযূ’- পরস্পরে বিবাদ-বিসংবাদ মানবজীবনের এক বাস্তবতা। বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তা যতই অপ্রিয় হোক। অপ্রিয় বাস্তবতার ক্ষেত্রেও সঠিক করণীয় জানতে হয় এবং সেই করণীয় অনুসরণ করতে হয়। তাহলেই জীবন ও কর্ম সুন্দর হয়। আমরা যদি বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাই, চোখ বন্ধ করে রাখি, এতে সমস্যার সমাধান হবে না।
সমস্যাটি যদি হয় সামষ্টিক জীবনের সমস্যা তাহলে চোখ বুজে থাকার দ্বারা তো সমস্যার সমাধান হবেই না, এক্ষেত্রে নিজের কর্ম ও অবস্থান কী হওয়া উচিত সেটাও সঠিকভাবে বুঝতে পারব না। এ কারণে জীবনের বাস্তবতা অপ্রিয় হলেও তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়; বরং সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদ যে বিধান দান করেছে সেই বিধান ও নির্দেশনা সঠিকভাবে জানতে হবে ও বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে চালাতে হবে।
তো এখানে এই আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমাদের পরস্পরে বিবাদ-বিসংবাদ হয় তাহলে বিষয়টিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর উপর ন্যস্ত করো। ওখান থেকে যে ফায়সালা আসে সেই ফায়সালাকে শিরোধার্য করো। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.)-এর উপর ন্যস্ত করার অর্থ কী? যে পর্যন্ত রাসূলে কারীম (সা.) উম্মতের মাঝে ছিলেন ঐ পর্যন্ত সরাসরি তাঁর নিকট থেকে ফায়সালা নেয়ার সুযোগ ছিল। যখন রাসূলে কারীম (সা.) এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তখন তাঁর উপর ন্যস্ত করা ও তাঁর ফায়সালা গ্রহণ করার অর্থ হল, কুরআন ও সুন্নাহর উপর ন্যস্ত করা এবং কুরআন-সুন্নাহর সঠিক ভাষ্যের ভিত্তিতে ফায়সালা গ্রহণ করা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত
কুরস্ক অঞ্চলের ৪০ ভাগ খোয়ানোর স্বীকারোক্তি ইউক্রেনের
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ চীনের সাথে কাজ করতে আগ্রহী: বাণিজ্য উপদেষ্টা
হাজীদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন
শরীয়তপুরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মী সভা
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় সিকিউরিটি গার্ড নিহত
পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল জিম্বাবুয়ে
১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক
লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন
নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটিতে অচেনা ৭ জন
মৌলভীবাজারে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা শুরু
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উদ্ভাবন
ব্রহ্মপুত্রে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু ব্যবসা
বাঘায় কৃষি শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা
কেশবপুরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ
হামলার শিকার হয়েও মুখ খুলতে পারছে না বোয়ালমারীর বহু পরিবার
ইসলামী আন্দোলনের গণসমাবেশে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি
বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান
সাগরে মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ হতাশায় মীরসরাইয়ের জেলেরা