ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আত্মপ্রচার : ধ্বংস করে ঈমান ও আমল-২

Daily Inqilab মাওলানা ইমদাদুল হক

২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম

সাহাবী মাহমুদ বিন লাবীদ (রা.) বলেন, নবীজী (সা.) ইরশাদ করেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করি শিরকে আসগরকে (ছোট শিরক)। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, শিরকে আসগর কী, ইয়া রাসূলুল্লাহ? নবীজী ইরশাদ করেন, রিয়া। আল্লাহ তা‘আলা কেয়ামতের দিন যখন মানুষের আমলের প্রতিদান দেবেন তখন তাদেরকে বলবেন, তোমরা দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে কোনো প্রতিদান পাও কি না? (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৬২৯।)।

একদিন কয়েকজন সাহাবী নিম্ন আওয়াজে পরস্পরে কথা বলছিলেন। নবী কারীম (সা.) তা দেখে বললেন, তোমাদেরকে তো পরস্পর কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছে? তারা বললেন- হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তওবা করছি। আমরা তো দাজ্জাল নিয়ে কথা বলছি। তার বিষয়ে খুব ভয় পাচ্ছি। তখন নবীজী (সা.) বললেন : ‘তোমাদের ব্যাপারে আমি দাজ্জালের চেয়েও যে বিষয়টি বেশি ভয় করি- তা কি বলব না?

তারা বললেন, অবশ্যই বলুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন : তা হলো গুপ্ত শিরক। মানুষ আমল করবে অন্যকে দেখানো বা তার থেকে সম্মান পাওয়ার জন্য। (মুসনাদে আহমাদ : ১১২৫২)। লক্ষ্য করি, নবীজী (সা.) গুপ্ত শিরককে কেন দাজ্জাল থেকে বেশি ভয়ংকর মনে করেন? দাজ্জাল বিশেষ একটি সৃষ্টি, নির্দিষ্ট সময় আসবে। সে পৃথিবীতে দেড় বছরও থাকবে না। এ সময় যারা পৃথিবীতে থাকবে, তারাই শুধু তার ফেতনার সম্মুখীন হবে। তাও আবার সে সময়ের সব মানুষ নয়। কিন্তু গুপ্ত শিরক তথা রিয়া ও প্রসিদ্ধি কামনা তো যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে, যেকোনো মুমিনের অন্তরে ঢুকে তাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এজন্য নবীজী (সা.) একে দাজ্জাল থেকেও বেশি ভয়ংকর বলেছেন।

সাহাবী মাহমুদ ইবনে লাবীদ থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন : তোমরা গুপ্ত শিরক থেকে খুব ভয় কর। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! গুপ্ত শিরক কী? নবীজী বলেন, সেটি হলো, তোমাদের কেউ সুন্দর করে নামায পড়ে, আর চায় মানুষ যেন তা দেখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৮৪৮৯)।
দুনিয়াটা হলো ধোঁকার বস্তু। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে একাধিকবার দুনিয়াকে ধোঁকার বস্তু বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলার দেয়া শক্তি-সামর্থ্য, সময় দুনিয়া অর্জনের পেছনে নিঃশেষ করে খালি হাতে মৃতের খটিয়ায় ওঠা কত বড় ধোঁকার জীবন, তা তো বলার প্রয়োজন নেই। দুনিয়ার ধোঁকার আরেক বস্তু হলো আত্মপ্রচারের নেশা। যে আমল দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে পেতাম, যে আমল দ্বারা জান্নাত পেতাম, সে আমল দ্বারা আল্লাহ ও জান্নাত না নিয়ে মানুষের প্রশংসা নিলাম; এর চেয়ে অজ্ঞতা ও ধোঁকার বিষয় কী হতে পারে? আর এজন্য বরাদ্দকৃত শাস্তি তো আছেই।

আচ্ছা, আমাকে যদি পৃথিবীর সকল মানুষ চেনে, তাতে আমার কী লাভ হলো? তাতে কি আমার সকল পেরেশানী দূর হয়ে যাবে? শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে? আমি দুনিয়া-আখেরাতে সফল হয়ে যাব? একটু চিন্তা করি, যা পোস্ট করার কারণে আমি ফেমাস হয়ে গেলাম, সেটি পোস্ট করার আগের দিন আমি যে মানুষটি ছিলাম, পরের দিনও তো সে মানুষটিই আছি। আমার নিজের মধ্যে কী পরিবর্তন এসে গেল? হ্যাঁ, শুধু এতটুকু হলো যে, এখন আমাকে বা আমার কাজটি মানুষ জানছে।

আল্লাহ ও জান্নাত বাদ দিয়ে মানুষের কমেন্ট নিচ্ছি, এতে নিজের মহামূল্যবান সম্পদ জান্নাত নিজেই নষ্ট করছি, বদলায় নিচ্ছি মানুষের সাময়িক প্রশংসা, যার দু-পয়সাও মূল্য নেই। একদিন গ্রামের এক সহজ-সরল লোক খুব চমৎকার বললেন। তিনি বললেন, ভাই, মানুষ আমাকে চিনলে আমার কী ফায়দা হবে? এর দ্বারা কি দুই টাকার মরিচও কিনতে পারব?

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহ.) তাঁর ‘কিতাবুয-যুহ্দ’-এ সালেহ ইবনে খালিদ হতে বর্ণনা করেন : যখন তুমি কোনো নেককাজ করার ইচ্ছা করো, তখন মানুষকে গরুর স্তরে রাখবে। বাকি তাদেরকে তুচ্ছ ভাববে না। (কিতাবুয যুহ্দ, ইমাম আহমাদ ৩/৩১৯)। অর্থাৎ মানুষ কি কোনো নেককাজ করতে গিয়ে গরুর প্রতি লক্ষ্য রেখে করে যে, গরু আমাকে দেখছে, কি দেখছে না? গরু থাকে গরুর জায়গায় আর মানুষ থাকে মানুষের জায়গায়। মানুষ আপন গতিতে তার কাজ করে যায়।

তেমনিভাবে মানুষ কি গরু-ছাগলের প্রশংসা কুড়ানোর কথা কোনোদিন চিন্তা করে! সারা পৃথিবীর সব গরু মিলে যদি কারো প্রশংসা করে, এতে কি সে কোনো ধরনের আনন্দ অনুভব করবে, নাকি নিজের জন্য এটা লজ্জাজনক মনে করবে? ঠিক তেমনিভাবে কোনো নেক কাজ করতে গিয়ে এ কৌশল অবলম্বন করলে মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর কোনো চিন্তাই আসবে না।

সালেহ ইবনে খালেদ-এর বক্তব্যে আত্মপ্রসিদ্ধির হাকীকত ও বাস্তবতা যেমন ফুটে উঠেছে, সাথে সাথে তার থেকে বাঁচার উপায়ও বের হয়েছে। অর্থাৎ কোনো নেক আমল করতে গেলে মানুষের প্রশংসাকে এমন প্রাণীর প্রশংসা মনে করলে আর আত্মপ্রসিদ্ধির কামনা আসবে না- ইন শা আল্লাহ।

 

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত

নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় শিশু নিহত

আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে

আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে

মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

মহাখালীতে এটিএম বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস

শুধু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাস লালনকারী দলটিরও বিচার হতে হবে - খেলাফত মজলিস

চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স

চাপ মেনে নিয়েই হুঙ্কার ছাড়লেন কামিন্স

৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু,  কমেনি যানজট

৬ ঘণ্টা পর মহাখালীতে যান চলাচল শুরু, কমেনি যানজট

খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত

খাগড়াছড়িতে দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত

ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া

ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করল রাশিয়া

সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২

সখিপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর হামলার মামলায় গ্রেফতার ২

সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা

সাফজয়ী ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা

শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা

শিক্ষার্থীদের ওপর অটোরিকশা চালকদের হামলা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ এ পদার্পণ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য

বিশ্ব ওয়ান হেলথ দিবসের প্রতিযোগিতায় সিভাসু’র শিক্ষার্থীদের সাফল্য

নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী

নতুন লুকে দর্শকদের নজর কেড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী

পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার

পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপি শেরপুর চেম্বার অবকমার্সের সাবেক সভাপতি সেলিম গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন

সাতক্ষীরা খেলোয়াড় তৈরির উর্বর ভূমি: অধিনায়ক সাবিনা খাতুন

বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া

বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া

যৌক্তিক সমালোচনা মানতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের নতুন কোচের

যৌক্তিক সমালোচনা মানতে সমস্যা নেই পাকিস্তানের নতুন কোচের

সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

সেনাকুঞ্জে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ

ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহত, মহাসড়ক অবরোধ

Veet