ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হাস্য কৌতুকে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ

Daily Inqilab জোবায়ের আলী জুয়েল

০৪ মে ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

রবীন্দ্রনাথের রসবোধ ছিল অতি উচ্চমানের। রবীন্দ্রনাথ হাস্য কৌতুক খুব ভালোবাসতেন। সাহিত্যের একটা বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের হাস্য-কৌতুক। শুধু সাহিত্যেই বা বলি কেন? ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনে আলাপ আলোচনায়ও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন হাস্য রসের নিপুন কারিগর। রবীন্দ্রনাথের বুদ্ধি দিপ্ত কৌতুক ছিল অতি উচ্চমানের। তিনি শুধু কবি স¤্রাট ছিলেন না, ছিলেন হাস্য রস-স¤্রাটও। সেটা সাহিত্যে যেমন, ব্যক্তি জীবনেও তেমনি। তবে রবীন্দ্রনাথের ব্যঙ্গ ও হাস্য রস ছিল মার্জিত, সুক্ষè, সহজ-সরল আনন্দ। এই প্রবন্ধে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের প্রায় অর্ধ শতাধিক হাস্য কৌতুক তুলে ধরা হলো-

গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় সে আমলে একজন বিখ্যাত নামকরা সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। তাঁর নাকের নিচে গোঁফ জোড়াটি ছিল বিরাট বড় ও সুন্দর। প্রচুর ভক্ত শ্রোতা, খুব নাম ডাক তাঁর। কলকাতার জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়ীতেই একবার বসেছে তাঁর বিখ্যাত গানের জলসা। রবীন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন সেই আসরে তাঁর একজন ভক্ত শ্রোতা হিসেবে। গোপেশ্বর বাবু গান শুরু করলেন। এবার শ্রোতারা ধরলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একখানা গান গাইতে হবে। তা’ না হলে তাঁর নিস্তার নেই। কবি অগত্যা রাজী হলেন, হাসি মুখে বলতে লাগলেন- গোপেশ্বরের পর কি এবার দাড়িশ্বরের পালা?
রবীন্দ্রনাথ তখন শান্তি নিকেতনে অব¯’ান করছিলেন। কি ব্যাপারে যেন একটা সভা বসেছে শান্তি নিকেতনে। সভার শুরুতে যে ঘরটিতে সভা বসেছে তাঁর সন্মন্ধে কেউ কেউ আলাপ করছিলেন ঘরটি বেশ জাঁক জমক ও সুন্দর। রবীন্দ্রনাথ হঠাৎ বল উঠলেন এ ঘরটিতে একটা বাঁ-দোর আছে। কবির কথা শুনে ঘর শুদ্ধ লোক একেবারে হতবাক, এ’ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের অব¯’া দেখে মুচকি হেসে ফেললেন। বললেন, বাঁদর নয়, আমি বাঁ-দোরের কথা বলছি। দেখছো না ঘরটির ডান দিকে একটা দরজা ও বাঁ দিকেও একটা দরজা রয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ এক গ্রামে গেছেন বেড়াতে। আপ্যায়নের মহা আয়োজন। খাওয়ার দাওয়াত পড়লো এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বহু আইটেম দিয়ে গৃহস্বামী খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। কবি বসলেন খেতে। সঙ্গে আছেন শান্তি নিকেতনের ক্ষিতি মোহন সেন শাস্ত্রী। গৃহস্বামী নিজে পরিবেশন করছেন। শাস্ত্রী মশাই ডিম খেতে গিয়েই বুঝলেন ডিমটা পচাঁ। কী করবেন আড় চোখে দেখছিলেন কবি কী করেন। কবিও ডিমটা পচাঁ বলে বুঝলেন। বুঝেও তিনি ডিমটা ভাতের সঙ্গে মুখে দিয়ে দিলেন। শাস্ত্রী মহাশয় পড়লেন মহা বিপদে, পচাঁ ডিম তিনি খাবেন কি করে? গুরুর দেখা দেখি অগত্যা ওই পচাঁ ডিমটাই তাকে গিলতে হলো। কিন্তু তাঁর পেট টা তৎক্ষণাৎ প্রমাদ গনলো। সেই পচাঁ ডিমটা একমূহুর্তও সহ্য করলোনা, শাস্ত্রী মশাই সঙ্গে সঙ্গেই করলেন বমি। পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে কবিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই পচাঁ ডিমটা হজম করলেন কী করে? আমি তো খেয়েই বমি। রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন- “আমি তো পচাঁ ডিম খাই নি তাই বমিও করিনি”। শাস্ত্রী মশাই অবাক হয়ে বললেন সে’ কী কথা, আমি স্বচক্ষে দেখলুম ডিমটা আপনি মুখে দিলেন। কবি উত্তরে বললেন- “আমিও কি সেই ডিম খেয়েছি নাকি? আমি আমার সাদা দাড়ির ভেতর দিয়ে ডিম চাপকানের মধ্যে চালান করে দিয়েছি। এখন মানে মানে বাড়ী ফিরতে পারলেই বাঁচি।”

এক সাহিত্য সভায় রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন, সেই সভায় সাহিত্যিক বনফুল অর্থাৎ বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় ও উপস্থিত ছিলেন। সেই সাহিত্য আসরে বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় একটি অসম্ভব ভাল বক্তৃতা দিলেন। সভায় উপ¯ি’ত সবাই তাঁর বক্তৃতার খুব প্রশংসা করতে লাগলো। রবীন্দ্রনাথ তখন বললেন- “বলাই তো ভাল বক্তৃতা দেবেই কারণ বলাই তো ওর কাজ।

একবার এক বৈজ্ঞানিকের পুত্র কবির (রবীন্দ্রনাথ) সাথে দেখা করতে আসেন। ছেলেটি ছিল মস্তিষ্ক বিকৃত। কবির কাছে সে বায়না ধরলো কবি কে “হাপু” গান শোনাবে। কবি ধৈর্য্য ধরেই ছেলেটির গান শুনলেন। গান গেয়ে ছেলেটি বিদায় নিলে কবি বললেন গানই বটে একেবারে মেশিন গান।

রবীন্দ্রনাথ তখন অস্তাচলে প্রায় শেষ শয্যায়। একদিন রবীন্দ্রনাথের ভক্ত সৌমেন্দ্র নাথ ঠাকুর তাঁর স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে অসুস্থ রবীন্দ্রনাথকে বললেন “আমরা আপনার শতবাষির্কী করবো”। রবীন্দ্রনাথ উত্তরে বললেন শতবাষির্কী মানে তা’ মাত্র পঁচিশ টাকা। ওতে আমার কোনও মোহ নাই। কিন্তু শত বাষির্কী মানে পঁচিশ টাকা কেন? হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর স্টাইলে রবীন্দ্রনাথ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন শত বাষির্কী মানে শতবারসিকি মানে পঁচিশ টাকা তাই তো?

শান্তি নিকেতনে অধ্যাপনা করতে এসেছিল ক্ষিতি মোহন সেন। অধ্যাপনায় মন লাগাতে না পেরে ভাবলেন অধ্যাপনা ছেড়ে কবিরাজী করবেন। বৈদ্যের ছেলে অতএব বাবার ব্যবসাই করবেন। রবীন্দ্রনাথ তখন ইউরোপে প্রবাসে। কবির অনুপস্থিতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। তিনি কবির জন্য আগমনের অপেক্ষায় রইলেন। যথা সময়ে কবি ইউরোপ থেকে ফিরে এলেন। এসেই তিনি শান্তি নিকেতনের অন্য এক অধ্যাপকের কাছে শুনতে পেলেন, ক্ষিতি মোহন বাবু অধ্যাপনা ছেড়ে কবিরাজী করবেন। শুনে তা কবি বিস্ময়ে হতবাক। কবি তৎক্ষণাৎ ক্ষিতি মোহন বাবুকে ডেকে পাঠালেন। কবির মনোভাব বুঝতে পেরে ক্ষিতি মোহন বাবু চিন্তায় পড়লেন। তিনি কবির কাছে এসে উপ¯ি’ত হলেন কবি তাঁকে বললেন “আপনি নাকি অধ্যাপনা ছেড়ে কবিরাজী করবেন বলে স্থির করেছেন? কবির এ কথার উত্তরে ক্ষিতি মোহন বাবু এবার হাসতে হাসতে বললেন কি আর করি, কবি যেখানে রাজি নন। “কবিরাজী” আর সেখানে কী করা হয়।

চারু চন্দ্র বন্ধোপাধ্যায় তখন বিখ্যাত “প্রবাসী” পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। তিনি শিলাইদহ গেছেন রবীন্দ্রনাথের লেখা আনতে। রবীন্দ্রনাথ তখন রয়েছেন পদ্মার ওপরে বজরায়। নদীর ঘাট অবধি একটা তক্তার সাকোঁ বজরা অবধি পেতে দেয়া আছে। পা, টিপে টিপে সেই তক্তা ধরে চারু চন্দ্র নৌকায় উঠে আসছেন। বজরার ছাদ থেকে রবীন্দ্রানাথ সাবধান করলেন চারু, সাবধানে পা ফেলো। এ জোড়া সাঁকো নয়।

সাহিত্যিক বনফুলের ছোটভাই একবার কবির (রবীন্দ্রনাথ) সঙ্গে দেখা করার জন্য শান্তি নিকেতনে আসেন। কবি তখন কানে ভাল শুনতে পান না। কবির সেক্রেটারী অনিল কুমার তাই তাকে বলে দিলেন কবির সাথে একটু জোরে কথা বলতে। কবি এখন কানে ভালো শুনতে পান না। কবিকে বলা হলো- ইনি সাহিত্যিক বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ছোট ভাই। কবি তৎক্ষণাৎ ঠাট্টা করে বললেন তুমি বলাই এর ভাই কানাই নাকি? ভদ্রলোক কবির সেক্রেটারীর পূর্ব নিদের্শ মোতাবেক চেঁচিয়ে বললেন না আমি অরবিন্দ। কবি এক গাল হেসে বললেন “কানাই নয় এ দেখছি একেবারে সানাই”।

প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় তখন শান্তি নিকেতনের গ্রš’াধ্যক্ষ। এক বিকেলে তিনি বগলে কয়েকটি বই নিয়ে একমনে বারান্দা দিয়ে যাচ্ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে দেখে ডাকলেন, “ওহে বৈবাহিক”, শোন শোন। প্রভাত কুমারকে তাঁর বন্ধুরা রসিকতা করে “বৈবাহিক” বলতেন। কিন্তু গুরুদেবের মুখে সেই রসিকতা শুনে তিনি খুব অবাক হলেন। বললেন, গুরুদেব আপনিও বলছেন। রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন, আরে না না, “বৈবাহিক নয়”, তোমায় আমি ডেকেছি “বই-বাহিক বলে”।

একবার রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজি একসঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন। গান্ধীজি সকালের নাস্তায় লুচি পছন্দ করতেন না, তাই তাঁকে ওটসের পরিজ খেতে দেওয়া হয়েছিল আর রবীন্দ্রনাথ খা”িছলেন গরম গরম লুচি। গান্ধীজি তাই না দেখে বলে উঠলেন “গুরুদেব তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ”। উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন- “বিষই হবে” তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে। কারণ আমি বিগত ৬০ বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।

রবীন্দ্রনাথের একটা অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো নাটক বা উপন্যাস লিখতেন সেটা প্রথম দফা শান্তি নিকেতনে গুণিজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এ রকম পাঠের আসরে যোগদান করতেন। তা’ একবার আসরে যোগদান কালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি হয়ে গেল। অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগল দাবা করে আসরে আসতে শুরু করলেন। রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন। তাই একদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন- “শরৎ তোমার বগলে ওটা কি “পাদুকা-পুরাণ”? এ নিয়ে সেদিন প্রচন্ড হাসাহাসি হয়েছিল।

একবার রবীন্দ্রনাথ এক অ-বাঙালি মেয়ে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে মেয়েটির সম্বন্ধ ঠিক করার জন্য, এর পরের ঘটনার কথা রবীন্দ্রনাথের মুখেই শোনা যাক। “মেয়ের বাবা অনেক পয়সা-কড়ির মালিক। বাসায় যাবার পর, দুটো অল্প বয়সী মেয়ে এসে উপস্থিত হলো। একটি মেয়ে নেহাৎ সাধাসিধে, জড়ভরতের মতো এক কোণে বসে রইল এবং অন্যটি যেমন সুন্দরী তেমনি স্মার্ট। কোন জড়তা নেই। শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজীতে কথা বলছে। ওর সঙ্গে কথা হলো। আমাদের পিয়ানো বাজিয়ে শোনালো। আমি মুগ্ধ, বিস্মিত। মনে মনে ভাবছি, সত্যিই কি আমি ওকে পাব। ভাবনায় ছেদ পড়লো। বাড়ির কর্তা তখন ঘরে ঢুকলেন। ঘরে ঢুকেই তিনি মেয়েদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েটিকে দেখিয়ে তিনি বললেন- ঐব রং সু রিভব। আর জড় ভরতটিকে দেখিয়ে বললেন- ঐবৎব রং সু ফধঁমযঃবৎ। আমি তো শুনে “থ” হয়ে গেলাম। যা হোক বিয়ে হলে মন্দ হতো না। সাত লাখ টাকা পাওয়া যেত। বিশ্বভারতীর কাজে ব্যয় করতে পারতাম। তবে শুনেছি মেয়েটি নাকি বিয়ের দু’বছর পরই বিধবা হয়। হাস্যরসিক রবীন্দ্রনাথ পরে বন্ধু বান্ধবদের বলতেন- ঐ বিবাহটি না হয়ে ভালোই হয়েছিল, আমার স্ত্রী বিধবা হলে আমার যে তখন প্রাণ রাখাই মুশকিল হয়ে যেত। জমিদারী ভোগের তো প্রশ্নই উঠে না”।

রবীন্দ্রনাথ কুলি পিঠে খেতে খুব ভাল বাসতেন। খুলনা দক্ষিণ ডিহির মৃণালিনী দেবী বানাতেন ও খুব নরম করে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর শান্তি নিকেতনের এক গৃহিনী তা জেনে নিজেই কিছু কুলি পিঠে বানিয়ে নিয়ে গেলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। খেতে দেন কবি গুরুকে। খাওয়া শেষে মহিলা জিজ্ঞেস করলেন- “পিঠা কেমন লাগলো কবিগুরু”? রবীন্দ্রনাথ মুচকি হেসে বললেন-

লৌহ কঠিন, প্রস্তর কঠিন
আর কঠিন ইস্টক,
তাহার অধিক কঠিন কন্যা
তোমার হাতের পিস্টক।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে একবার রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটকে মহড়া চলছিল। নাটকে রঘুপতি সেজেছিলেন দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর জয়সিংহের ভূমিকায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। একটা দৃশ্য ছিল এমন জয়সিংহের মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়বে শোক বিহ্বল রঘুপতি। দৃশ্যটার মহড়া চলছিল বার বার। দীনেন্দ্রনাথ বাবু ছিলেন কিছুটা স্থলকায়। বার বার তাঁর ভার বহন করা কবি গুরুর জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল। একবার দীনেন্দ্রনাথ একটু বেকায়দায় রবি ঠাকুরের ওপর আছড়ে পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ কঁকিয়ে উঠে বললেন “ওহে দিনু, মনে করিস নে আমি সত্যি সত্যিই মারা গেছি”।

রবীন্দ্রনাথ একদিন বেড়াতে গেছেন তাঁর কোনো এক ভক্তের বাড়িতে। কবি কে বসবার জন্য একটা চেয়ার দেয়া হলো। কবি ভক্তকে জিজ্ঞেস করলেন “চেয়ার টা বেশ সুন্দর”। তা চেয়ার টা সজীব তো? ভক্ত বুঝতে না পেরে কবির মুখের দিকে হা’ করে তাকিয়ে রইল। তখন কবি বললেন, “বুঝতে পারনি বুঝি”? আমি জিজ্ঞেস করছি “চেয়ার টা সজীব কি না? মানে এতে ছাড়পোকা আছে কি না।”

একবার বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে এক সদ্য বিলেত ফেরত বন্ধু তাঁর সাথে দেখা করতে এলে দেখেন টেবিলে একগ্লাস সবুজ রঙের পানীয়। তিনি ধারণা করেন কবি বুঝি নতুন কোন ব্রান্ডের পানীয় পান করছেন। তিনি কবির দিকে তাকালে কবি জিজ্ঞেস করেন “চলবে নাকি”? ভদ্রলোক কাল বিলম্ব না করে সম্মতি জানান। কবি ঘরের ভেতরের দিকে তাকিয়ে পরিবেশন কারীকে বললেন সাহেবের জন্য একগ্লাস কড়া করে নিয়ে এসো। সে কবির কথা মতো পানীয় তৈরি করে টেবিলের উপর রাখে। ভদ্রলোক আগ্রহ করে গ্লাসটা হাতে নিয়ে বড় করে একটা চুমুক দেন। এরপর মুখটা বাঁকা করে গ্লাস রেখে পথ ধরতে উদ্যত হন। কবি তাঁকে বলেন “কি হলো”? ভদ্রলোক কোন উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। উল্লেখ্য যে, কবি সেদিন নীম পাতার তিতা পানি পান করছিলেন।

জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ একটু সামনের দিকে ঝুঁকে উবু হয়ে লিখতেন। একদিন তাঁকে ওভাবে উবু হয়ে লিখতে দেখে তাঁর এক শুভাকাঙ্খী তাঁকে বললো- “আপনার নিশ্চয় ওভাবে উপুড় হয়ে লিখতে কষ্ট হ”েছ। লোকটার দিকে খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন- তা’ তো হচ্ছেই। তবে কি জানো, এখন উপুড় হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়। পাত্রের জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়।”

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ তখন খুবই অসুস্থ। শান্তি নিকেতন থেকে কবিকে তখন কলকাতার জোঁড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। ঠিক সে সময় একটি ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে বায়না ধরে বসলো কবিকে তাঁর অটোগ্রাফ দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ তার খাতায় কাঁপা হাতে অটোগ্রাফ লিখে দিলো তবু মেয়েটির মন ভরলো না। মেয়েটি কেঁদে কেটে বায়না ধরলো কবির অটোগ্রাফের পাশে কবিতা লিখে দিতে হবে। কবি ছোট্ট মেয়েটিকে নিরাশ করলো না। কবি তাৎক্ষণিক লিখলেন-

মোর কাছে চাহ তুমি পদ্য/চাহিলেই মিলে কি তা’ সদ্য
তাই আজ শুধু লিখিলাম/নিজের নাম
এর বেশি কিছু নহে অদ্য।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প
গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪ : সাহিত্য সংস্কৃতি ভাবনা
প্রার্থনার মূল কাজ সংযোগ স্থাপন
গ্রাফিতি বাংলাদেশ
তোমাকে
আরও

আরও পড়ুন

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

ভোটের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ঐক্যবন্ধ থাকতে হবে-লুৎফর রহমান আজাদ

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

গফরগাঁওয়ের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবদুছ ছালামের ইন্তেকাল

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

আওয়ামী দোসররা মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে: তানভীর হুদা

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

ফিলিস্তিনিদের জন্য কোটি টাকার সহায়তা নিয়ে মিশরে পৌঁছেছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

১৭টি বছর শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা- কেন্দ্রীয় সভাপতি

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

ছয় বছর পর স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি পাকিস্তান

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

টানা তিন সেঞ্চুরিতে তিলাকের বিশ্ব রেকর্ড

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ

না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন

‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী