রসগোল্লার সন্ধানে নতুন ধারা
১৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৮ এএম
আমি মিষ্টি ভক্ত মানুষ। কিশোরবেলা বহুবার মিষ্টি চুরির অপবাদ লাভ করেছি আমার কর্ম গুণে। ছোট খালার বিয়ে হচ্ছে। পাত্রপক্ষ আগের দিন মিষ্টি পাঠিয়ে দিয়েছেন। মিষ্টিগুলো রাখা হয়েছে খাটের নিচে। উপরে বধূ বেশে বসে আছেন ছোট খালা, যাঁকে আমরা তাঁর বোনের সন্তানেরা খালামনি ডাকি। খালামনি খাটের উপরে আর আমি খাটের নিচে। চলছে আমার চৌর্যবৃত্তি। এখনো ভাগে চারটে মিষ্টি না হলে আমি খাই না।
উপরের কথাগুলো বলার কারণ হলো, আমি জীবনের সবকিছুতেই মিষ্টির স্বাদ পেতে চাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই স্বাদ আমি আহরণ করে নিতেও পারি, খুব একটা বিফল হইনি।
বাবা ছিলেন নিরেট পাঠক মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। বই রাখার সুব্যবস্থা না থাকায় বস্তায়ও বই রাখতেন, আমি এখনও রাখি। তাঁর সংরক্ষিত বই দিয়ে আমার পাঠক জীবন শুরু। সে ১৯৮২ সালের কথা। পাঠক হিসেবে আমার চরম যাত্রা শুরু হয় বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা দিয়ে। ১৯৮৭ সালে হলাম চট্টগ্রামবাসী। সেখানে গিয়ে পেলাম ফুফাতো ভাই আলী আহমদ চৌধুরী সোহেল এর সংগ্রহে প্রচুর বই। প্রথমেই শুরু করলাম শরৎচন্দ্রের রচনাবলি দিয়ে। একে একে শেষ হলো অসংখ্য বই। এখনো সে পাগলামি অব্যাহত রয়েছে। এতো এতো বই পড়ে জ্ঞানের পারদ ঊর্ধ্বমুখী করতে না পারলেও চোখের বারটা বাজাতে সক্ষম হয়েছি। এখন চোখে তুলতে হয়েছে ৩৫০+ চশমা। আমার অগ্রজ বিশিষ্ট গবেষক হাবিব আহমদ দত্তচৌধুরী পেশায় একজন ব্যাংকার। পেশাদারি জীবনকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের লেখালেখিকে গুরুত্ব দেন বেশি। প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ এক ডজনের অধিক। আমরা পাঁচপুরুষ থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত। পড়তে হয় প্রচুর। ১৯৮৯ সালে পঞ্চখ- রতœ কবি ফজলুল হক এর সৌজন্যে পরিচিত হই টিএস ইলিয়টের কবিতার সাথে। সেই থেকে নিজের মধ্যে অন্যরকম এক পাগলামি শুরু হয়, কবিতার পাগলামি। নিজেকে কখনো জীবনানন্দ, কখনো সুকান্ত এমনকি কালের শামসুর রহমান, আল মাহমুদ ভাবতে শুরু করি। ১৯৯২ সালে সিলেটের ডাক পত্রিকার সাহিত্য পাতায় আমার প্রথম লেখা অন্তে অন্তস্থয় প্রকাশ পায়। নিজেকে কবি ভাবার রোগ পেয়ে বসে চরমভাবে। ধ্বংস হতে থাকে নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন। প্রকাশ হতে থাকে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক যুগভেরী, জালালাবাদ পত্রিকায় আমার লেখা। দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় প্রথম প্রকাশ হয় মানুষের আনন্দে শিরোনামের কবিতাটি। দৈনিক যুগভেরীর সাহিত্য পাতায় প্রকাশ পায় আমার জীবনের প্রথম প্রবন্ধ রসস্রষ্টা দাদাঠাকুর। প্রকাশিত গ্রন্থ মাত্র দুটি হলেও প্রকাশিতব্য গ্রন্থের সংখ্যা এক হাতের আঙুলের কড় গোনে শেষ হবেনা।
এতকিছু লেখার কারণ নিজেকে তুলে ধরা নয়। প্রথমেই বলেছি আমার মিষ্টির প্রতি দুর্বলতার কথা। সাহিত্য থেকেও আমি বাঙালির বিখ্যাত রসগোল্লার স্বাদ নিতে চাই, বিশেষ করে কাব্য সাহিত্য থেকে নিতে চাই একটু বেশি। পাগলাটে মানুষ! কবিতায় সবসময়ই নতুনত্ব খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে পেলাম নতুন ধারার সন্ধান। ভালো লাগলো নতুন ধারাকে। পরিচিত হলাম নতুন ধারার প্রবর্তকের সাথে, সংশ্লিষ্ট হলাম নতুন ধারায়। সাহিত্য সকলের, সকল সাহিত্যের। সাহিত্য সকলের জন্য উন্মুক্ত।
নতুন ধারার প্রয়োজন সময়ের দাবি। কালে কালে বাংলা কবিতার বাঁক বদলের ইতিহাস খুব একটা সংক্ষিপ্ত নয়। আজকের কবিদের দেড় হাজার বছর আগের চর্যাপদীয় ধারায় কবিতা লিখলে চলবে কেনো! অতীতকে অস্বীকার করে নয়, কালের পরিক্রমায় অতীতের সাথে নতুন যুক্ত হোক, নতুন নতুন ধারা আসুক। এটাই হলো কবিতার আধুনিকায়ন। আজ নতুন ধারা এসেছে, আগামীতে আরো আরো নতুন কিছু নিয়ে আসবেন সময়ের সারথি কবিদের কেউ, তবে আসবেন কি না তবে তা বলা মুশকিল। বর্তমানে ইস্তেহারসহ (২০২৩) নতুন ধারাই নতুন শতাব্দীর নেতৃত্ব দেবে বলা যায়।
উপস্থিত নতুন ধারার নতুনত্ব হলো- কবিতায় অবহেলিত চরিত্র নিয়ে আসা (প্রতিবেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম ব্যবহার), সম্পর্ক বাচক শব্দের প্রয়োগ, আঞ্চলিক শব্দের কারুকাজে কবিতাকে শ্রুতিমধুর / পঠনমধুর করে তোলা, ইতিহাসের আস্তাকুঁড় থেকেও বিষয় নিয়ে আসা (এক্ষেত্রে ইতিহাসের উপর অধিক নির্ভরশীল না হয়ে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের দ্বারস্থ হওয়া, কেননা ইতিহাস অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যাশ্রয়ী), একপেশে চিন্তাকে বিসর্জন দিয়ে সর্বজনীন কবিতার স্রোত প্রবাহিত করা।
একটি কথা বিশেষ করে উল্লেখের দাবি রাখে, তা হলো - কবিতা হবে পৃথিবীর তাবৎ বিষয়ে, যার স্রষ্টা কবি। কবিরা মানুষ, তাই কবিতায় এমন কিছু থাকবে না যা মানুষের মধ্যে বিভেদের কারণ হয়। কবিদের সংকীর্ণ মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে করতে হবে সুন্দরের চাষ। কবিতা নিজে সুন্দর তাই সুন্দরকে নিয়ে হোক কবিতার পথচলা।
আসুক নতুন, আসুক নতুন নতুন ধারা। পৃথিবী সুন্দরের হোক, পৃথিবী কবিতার হোক। আমৃত্যু আমি যেনো আমার প্রিয় রসগোল্লার স্বাদ নিতে পারি কবিতায়। জয়তু নতুন ধারা।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ