‘প্রগতি’ প্রথম সংখ্যা
০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রগতি পত্রিকার পুরো ইতিহাস পাওয়া যায় না । বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যুর পরে বাংলা একাডেমী থেকে ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকার ‘বুদ্ধদেব বসু সংখ্যা’ মহাপরিচালক অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমের সম্পাদনায় ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ।
ওই বিশেষ সংখ্যায় বুদ্ধদেব বসুকে নিবেদিত কবিতাসহ ৩৪টি রচনা স্থান পেয়েছে। রয়েল সাইজে ২৫৬ পৃষ্ঠার সংকলনে প্রগতি সম্পর্কে কোনো আলোচনা নেই।
কোথায়োই পাওয়া যায় না ‘প্রগতি’র সন্তোষজনক বিবরণ।
এটা খুবই হতাশাজনক বুদ্ধদেব-চর্চা বলে আমার মনে হয়েছে।
বাংলা সহিত্যের একজন প্রধান সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কোনো আলোচনা কী করে তাঁর প্রথম জীবনের ইতিহাসের মাইল ফলক একটি সাহিত্যিক-কর্মের বিবরণ ছাড়া সম্পন্ন হতে পারে তা ভাবা যায় না।
বস্তুত: প্রগতির মধ্যদিয়ে তাঁর একান্ত নিজস্ব সাহিত্যবোধ বা জীবন-দর্শন কিংবা সাহিত্য-দৃষ্টি সম্পর্কে নিজেই সবিস্তারে ব্যক্ত করে গিয়েছেন। সেসবের উল্লেখ ব্যতিরেকে কি করে বুদ্ধদেব বসুর মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়- তা-ও আমার বুদ্ধিতে আসেনা।
আমরা জানি, তিন বছর ধরে দেড় হাজার পৃষ্ঠার প্রতিটি লাইনের মধ্যদিয়ে ‘প্রগতি’র (১৯২৭-২৯) অব্যবহিত পূর্ব ও পরবর্তী সাহিত্যিক-কর্ম ও ধর্ম সম্পর্কে প্রচুর প্রচার-প্রোপাগান্ডা তিনি পরিচালনা করেছিলেন।
বুদ্ধদেব-অনুধ্যানে অত্যাবশ্যকীয় তাই তাঁর প্রথম যৌবনের চিন্তার আকর তথ্যভান্ডার মাসিক ‘প্রগতি’র নথিপত্র পুরোটা নেড়েচেড়ে দেখা।
প্রগতির ইতিহাস সংকলনের অংশ হিসাবে আজ এ-পত্রিকার প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যার পূর্ণাঙ্গ সূচিপত্র উপস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় প্রগতি কার্যালয় ৪৭ নম্বর পুরানা পল্টন রমনা ঢাকা থেকে । সম্পাদক ছিলেন শ্রীবুদ্ধদেব বসু ও শ্রীঅজিতকুমার দত্ত।
প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা আষাঢ় ১৩৩৪
(প্রগতি প্রকাশ-কালে এবং বেশ কিছু কাল যাবৎ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ছিলেন বুদ্ধদেব বসুর খুব কাছের মানুষ, শ্রদ্ধাস্পদ স্বজন। প্রগতির প্রথম সংখ্যার শুরু ও শেষটা হয়েছে তাঁরই কবিতা দিয়ে, এটা বিশেষ করে চোখে পড়বে সকলের)
শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (কবিতা ) আমার পরাণ মুখর হয়েছে সিন্ধুর কলরোলে ( কতিপয় চরণ নিচে)
‘আমার পরাণ মুখর হয়েছে সিন্ধুর কলরোলে,
প্রভঞ্জনের প্রতি পদ-পাতে আমার পরাণ দোলে।
আমার পরানে ভাই,
কোটি মানবের অশ্রু-“জলের জোয়ার শুনিতে পাই।
সূর্যের বুকে কী ভূখ্ জাগিছে আমার পরাণ জানে,
কীটের পাখার অস্ফুটতম বেদনা আমারে হানে।’
শ্রীসমরেন্দ্র গুপ্ত (গল্প) ভোর হল যেই শ্রাবণ-শর্বরী
শ্রীপ্রভুগুহ ঠাকুরতা (প্রবন্ধ) লুইজী পিরাণ্দেল্লো
শ্রীপরিমল রায় ( কবিতা) অশ্রু
শ্রীবালারানী গুহ (গল্প) বাতাসীর মৃত্যু
শ্রীমণীশ ঘটক (কবিতা) প্রতীক্ষায় (ইংরেজি থেকে অনুবাদ)
শ্রীগায়ত্রী দেবী (গল্প) অন্দরের চিঠি
শ্রীবুদ্ধদেব বসু (কবিতা) ক্ষণিকা (কয়েকটি লাইন)
“আজ মোরা পথে প্রান্তে বাঁধিয়াছি বাসা,
আকাশ বাতাস ভরি’ ছড়ায়ে দিয়েছি শত মুকুলিত আশা,
অনাগত দিবসের স্বপ্ন দিয়ে ফুটায়েছি কল্পনার আনন্দ কুসুম,
সর্বদেহে মাখিয়াছি প্রণয়ের চন্দন-কুসুম,
গাহিতেছি অর্থহীন, উদ্দাম সংগীত,
মদ্য-সিক্ত কুসুম ছিটায়ে ধরণীরে করেছি লোহিত !
ক্ষণিক আবেশ-মাঝে পড়েছি ঘুমায়ে
রচিতেছি সুখ-স্বপ্ন-জাল,
পশ্চাতে নিষ্ঠুর কাল বসন্তের অন্তিম বিদায়ে
মিলিয়াছে বদল করাল ! “ (পৃষ্ঠা ২৪)
আলেকজান্ডার চেহভ্ (একটি ঘটনা) সওদা
(অনুবাদকের নাম উল্লেখ নেই । বুদ্ধদেব বসু হতে পারেন । লেখক আলেকজান্ডার চেহভ্ আন্তন চেহভের সহোদর। লিখেছেন এক ভাই , আরেক ভাইয়ের সম্পর্কে ।)
শ্রীঅজিতকুমার দত্ত (কবিতা) একটি মেয়ে
শ্রীদেব দত্ত (গল্প) আষাঢ়ে (অজিত দত্তের ছদ্মনাম)
শ্রীবুদ্ধদেব বসু (ধারাবাহিক উপন্যাস) চৌরঙ্গী
(একেকবার একেকজন লিখবেন)
শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (কবিতা) মৃত্যুর সাথে বিয়া (কিছু নমুনা)
‘‘কাফুরের মত ফুরায়ে ফতুর আমি যবে যাব উবে’
মুচকি ‘ হাসিয়া চাঁদ যেন ওঠে ; রবি যেন ওঠে পূবে।
নয়নে কাজল দিয়া
উলু দিয়ো, সখি, তব সাথে নয়, মৃত্যুর সাথে বিয়া ।
জুঁই আর ভুঁইচম্পা করবী কবরীতে গেঁথে নিয়ো,
তোমার হাতের মাটির বাতিটি জানালায় জালি’ দিয়ো
হৃদয়ের লালে চরণ রাঙিয়ো ভুরু ভেঙো নীল টিপে,
খোলো সে খয়েরি শাড়িখানি পরো মানাবে সন্ধ্যাদীপে।
হব যবে অবসান শীতলক্ষ্যা লক্ষ্মী নদীটি চলে যেন গেয়ে গান । মাঝি যেন তা’র গুণ টেনে যায় মাছি ফেরে দ্রোণ-ফুলে,
পাতার আড়ালে মুখ ঢাকে যেন লজ্জাবতীরে ছুঁলে ছুঁলে।
তোমাদের তরে ভাই
অক্ষয় থাক্ বুড়ি পৃথিবীর অফুরান্ পরমাই।
সন্ধ্যামণিতে সন্ধ্যাতারার সুদূর স্বপ্ন-লেখা,
বিধুর বিধূর অধরে ভানুর গোপন চুম্বন-রেখা।
আমি যবে যাবো মরে’
ডালিমের ডাল নুয়ে’ পড়ে যেন নবীন পুষ্প-ভরে।” (১৮ লাইনের কবিতা)
মাসিকী ( সম্পাদকীয়): আজকের দিনে বাংলাদেশে যে একটি বিশিষ্ট ধারার তরুণ সাহিত্য গড়ে উঠেছে, একথা অস্বীকার করবার আর উপায় নেই। এই সাহিত্যকে নিন্দা করে যারা আনন্দ পান, সাহিত্য সমালোচনায় তাদের অধিকার আছে কিনা – অথবা তাদের কটূক্তির পেছনে কোন যুক্তি আছে কিনা, সে-সব কথা এখানে তুলবো না। শুধু এই কথাটাই আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে, এই তরুণ সাহিত্যের একটা যথার্থ অস্তিত্ব আছে— তার ভঙ্গি বিভিন্ন, তার সুর নূতন, তার আদর্শ আলাদা।
এই সাহিত্য হয়তো এখন পর্যন্ত একটা সুস্পষ্ট মূর্তি ধারণ করতে পারেনি, কিন্তু প্রাণের স্পন্দন তো পাওয়া যাচ্ছে, নির্ঝরের গতিচ্ছন্দের মত তার ষড়বর্গের চক্র-ঘর্ষণে দিগন্ত মুখর হয়ে উঠ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে যে এই অস্পষ্ট অস্ফূট ভাব-পুঞ্জের নীহারিকা এক বিরাট জ্যোতিস্মান নক্ষত্র প্রসব করবে, সে আশা দুরাশা নয়।
তাই এই আধুনিক সাহিত্যের বিচার করতে গিয়ে কেবল মাল-মশল্লাকে দাঁড়ি-পাল্লায় চাপিয়ে নিক্তির ওজনে মেপে দেখলে চলবে না, এর পেছনে যে নব-জাগরণের অনুভূতি, যে নূতন সাহিত্যিক যুগোন্বেষের আভাস রয়েছে, তা-ও গণনা করতে হবে।
তাছাড়া ‘আমার ভালো লাগলো বা লাগলো না’ এ-কথা বললেই প্রকৃত সাহিত্য-সমালোচনা হয়না; সকল দেশের সকল সময়ের বিশ্ব-সাহিত্যের যে-একটি সর্বজন স্বীকৃত আদর্শ রয়েছে, তা-ই সাহিত্য বিচারের আসল নিকষ মণি । রস-সৃষ্টি কারো ব্যক্তিগত রুচি-গর্হিত হ’ল কিনা সে কথা চিন্তা করবার অবসর বা প্রয়োজন স্রষ্টার নেই। বাঙ্লার কলা-লক্ষ্মী যে নবযুগের প্রতীক্ষায় চঞ্চলা, বর্তমান লেখকরা তারই দূত মাত্র। তাঁরাই জঙ্গল কেটে, বন-বাদাড় ভেঙে পথ তৈরি করে রাখ্ছেন বন্ধুর যাত্রা সুগম করতে। ইতিহাসে তাঁদের নাম হয়তো থাকবে না, কিন্তু এই হিসেবে তাদের যে একটা মূল্য আছে, সেটা ভুলে গেলেই সমালোচনা লাঞ্ছনাতে পরিণত হয় । নূতন মানে অবশ্যি সদ্য আকাশ থেকে পড়েছে, এমন একটা কিছু নয় । সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে সংসারে কিছুই নূতন নয়। আদিম যুগের বর্বর মানুষ শিলার কঠিন বুক কেটে ঋজু ও বক্র রেখায় যে কথা বলতে চেয়েছিলেন, এই বিংশ শতাব্দীর সভ্য মানুষ ছাপার হরফে মার্জিত ভাষায় সেই কথাই হয়তো বলতে চায়। কিন্তু প্রতি যুগে, প্রতি দেশে মানুষের অন্তর্নিহিত সমস্যার রূপান্তর হয়, তার মীমাংসাও বিভিন্ন উপায়ে সাধিত হয়। তাই কালের সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশের ভঙ্গির পরিবর্তন হয়; সমাজের প্রভাব সংস্কারের প্রভাব মানুষের স্বভাবে ভাবান্তর ঘটায়, সেই ভাবান্তরকে স্বীকার করে নেয়াই মনের সজীবতার লক্ষণ। (সংগৃহীত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমতলীতে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা। আহত -২
শিবালয়ে পরকিয়া প্রেমের বলি নুরজাহান ৪দিন পর পাষ-প্রেমিক আলিফ গ্রেফতার
ভূঞাপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ময়লা-আবর্জনার ভাগার
শাহজাহান ওমরের বিরুদ্ধে আরও এক মামলা
ধর্মগ্রন্থের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো - বিটিভি মহা পরিচালক
নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারে ‘প্রস্তুত’ ইউরোপের যে ৭টি দেশ
প্রথম বার চার দরজার বিলাসবহুল গাড়ি আনছে জাগুয়ার
৪ মাস যেতে না যেতেই ভেস্তে গেছে কোটি টাকার সোলার ফেনসিং প্রকল্প!
২৯ বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখলো শেরপুর আন্তঃজেলা পৌর বাস টার্মিনাল
মোটরসাইকেলের ভয়ংকর নেশা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, ৫ মাসে নিহত হয়েছে ১৪ জন
বড় দরপতনের পর সোনার দামে আবার বড় লাফ
রাজবাড়ীতে ছাত্রদল নেতা অপহরণ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
ফার্মগেট মানসী প্লাজায় আগুন, নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট
মাদকের টাকা না পেয়ে মাকে কুপিয়ে হত্যা করে থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ
তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি হিন্দু সম্প্রদায়ের
সুরমা-কুশিয়ারার জন্য ১৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প
নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ
পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত
দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক