২৫ মে কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী
২৫ মে ২০২৩, ০৬:০৮ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ০৬:০৮ পিএম
কাজী নজরুল ইসলাম এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমা’র চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাযারের খাদেম।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তার রচিত “চল্ চল্ চল্,” বাংলাদেশের রণসংগীত। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং বাঙালী মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে “বিদ্রোহী কবি” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক। কবি নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪৯ নম্বর বাঙালী পল্টনে যোগ দেন। এরপর থেকে ১৯২০ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর; সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। কাজী নজরুল ইসলামের লিখা “বাঁধনহারা” বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস। তিনি ইসলামী সঙ্গীত এর পাশাপাশি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। কাজী নজরুল ইসলাম ৩ হাজারেরও অধিক গান রচনা করেছেন। অধিকাংশ গানে তিনি নিজেই সুরারোপ করেছেন। যা এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুলগীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। তিনি আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত।
মধ্যবয়সে কাজী নজরুল ইসলাম পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয় এবং জাতীয় কবি হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় “নজরুল অ্যাকাডেমি” নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে “কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়” স্থাপিত হয়েছে। আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর” থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কের নাম, কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম কাজী নজরুল ইসলামের নামে রাখা হয়েছে। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত “ত্রিশালে” (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়” নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে “নজরুল একাডেমি”, “বুলবুল ললিতকলা একাডেমী” ও শিশু সংগঠন “বাংলাদেশ নজরুল সেনা” স্থাপিত হয়। সরকারিভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান “নজরুল ইন্সটিটিউট”।
১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার “জগত্তারিণী” স্বর্ণপদক নজরুলকে প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের “পদ্মভূষণ” সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক “ডি.লিট” উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে “একুশে পদকে” ভূষিত করে। দীর্ঘ ৩৪ বছর নির্বাক থাকার পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
তার কাব্যগ্রন্থ- অগ্নিবীণা (১৯২২), দোলন-চাঁপা (১৯২৩), বিষের বাঁশি (১৯২৪), ভাঙ্গার গান (১৯২৪), ছায়ানট (১৯২৫), চিত্তনামা (১৯২৫), সঞ্চিতা (১৯২৫), সাম্যবাদী (১৯২৬), পুবের হাওয়া (১৯২৬), সর্বহারা (১৯২৬), সিন্ধু হিন্দোল (১৯২৭), ফনীমনসা (১৯২৭), জিঞ্জীর (১৯২৮), চক্রবাক (১৯২৯), প্রলয় শিখা (১৯৩০), সাতভাই চম্পা (১৯৩৩), নির্ঝর (১৯৩৯), নতুন চাঁদ (১৯৩৯), মরুভাস্কর (১৯৫১), সঞ্চয়ন (১৯৫৫), শেষ সওগাত (১৯৫৮), ঝড় (১৯৬০)। গল্পগ্রন্থ- ব্যথার দান (১৯২২), রিক্তের বেদন (১৯২৪), শিউলিমালা (১৯৩২)। উপন্যাস- বাঁধনহারা (১৯২৪), মৃত্যু-ক্ষুধা (১৯২৭), কুহেলিকা (১৯২৮)। প্রবন্ধগ্রন্থ- যুগবাণী (১৯২২), দুর্দিনের যাত্রী (১৯২২), রাজবন্দীর জবানবন্দী (১৯২৩), রুদ্র-মঙ্গল (১৯২৩)। নাটক- ঝিলিমিলি (১৯৩১), আলেয়া (১৯৩২), পুতুলের বিয়ে (১৯৩৪) ইত্যাদি। সঙ্গীতগ্রন্থ- বুলবুল (১৯২৮), সন্ধ্যা (১৯২৯), চোখের চাতক (১৯২৯), নজরুল গীতিকা (১৯৩০), নজরুল স্বরলিপি (১৯৩১), চন্দ্রবিন্দু (১৯৩১), সুরসাকী (১৯৩২), বনগীতি (১৯৩১), জুলফিকার (১৯৩১),গুল বাগিচা (১৯৩৩), গীতি শতদল (১৯৩৪), সুর মুকুর (১৯৩৪), গানের মালা (১৯৩৪), স্বরলিপি (১৯৪৯), বুলবুল (দ্বিতীয় ভাগ; ১৯৫২), রাঙ্গা জবা (১৯৬৬)।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত
আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা