ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া বাংলাদেশের যেসব বিষয় নিয়ে হৈচৈ করছে সেগুলো ভিত্তিহীন: কর্নেল অলি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৩ পিএম

 

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ডক্টর কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, বিগত ৫ আগস্ট থেকে অদ্যবধি ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ায় বাংলাদেশে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর জুলুম হচ্ছে, তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে হৈচৈ করছে এবং যে ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে সেগুলো ভিত্তিহীন। তবে, দেশে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু জায়গায় ক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী জুলুমবাজ এবং গণহত্যাকারীদের উপর চড়াও হয়েছে। জনগণ ধর্মের বিবেচনায় কারো ক্ষতি সাধন করেনি। বরং গণহত্যাকারীর দোসরদের উপর আক্রমণ করেছে। এটা যুগে যুগে অনেক দেশে হয়েছে। আমি আবারও বলছি বাংলাদেশ হল- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।

 

তিনি শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

 

কর্নেল অলি বলেন, বিগত ১৫ বছর যাবৎ আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক প্রত্যেক স্তরে কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল, ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন, দুর্নীতি, টাকা পাচার, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য, বিরোধী দলগুলির উপর অমানবিক অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, জায়গা দখল, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতি, মানব অধিকার লঙ্ঘন, সকল ক্ষেত্রে বিচারহীনতার পুঞ্জীভূত বেদনা সহ্য করে মানুষ নিরব ছিল।

 

তিনি বলেন, কিন্তু ৫ই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে এদেশের মানুষ আরেক বার দেশ স্বাধীন করেছে। এ ধরণের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমাদের ছেলে মেয়েরা এদেশের উপযুক্ত উত্তরসূরি। বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে আমরা গর্বিত।

 

কর্নেল অলি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের পর থেকে অদ্যবধি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সদস্যরাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখল করেছে, উপাসনালয় ধ্বংস করেছে, পক্ষান্তরে তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উপর তার দোষ চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, এখনও রয়েছে। আশা করি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা আর নতুনভাবে বিভ্রান্ত হবে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে একটি স্বর্গরাজ্য, কারণ এদেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৯২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আমরা পবিত্র কোরআন শরীফ মেনে চলি, অন্যদের উপর জুলুম করা কোরআন শরীফে নিষেধ আছে। আবারও বলি বাংলাদেশ হল- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজি প্রমুখ।

 

ইতিপূর্বে এল.ডি.পি'র পক্ষ থেকে বিগত ৮ই আগস্ট ২০২৪ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে কিছু পরামর্শ আমরা দিয়েছিলাম, কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেকগুলি এখনও হয় নাই।

 

সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের নিকট দাবিসমূহ:

 

১. ২০০৯ সালের পর হতে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আমলে গণহত্যাকারী, দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারী, দুর্নীতিবাজ নেতা, চেয়ারম্যান, মেম্বার, এম.পি, সাবেক এম.পি, সাবেক মন্ত্রীসহ সকল অবৈধ সুবিধাভোগীদের গ্রেফতার করার পূর্ণ মাত্রায় কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে তাদের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাও প্রয়োজন।

২. হেফাজত ইসলামের আন্দোলনের সময় যে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল তাদের বিচারের জন্য কমিশন

গঠন করা হউক।

৩. পিলখানায় তৎকালীন বি.ডি.আর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন অফিসারসহ অন্যান্যদের হত্যার বিচারের জন্য কমিশন গঠন করা হউক।

৪. গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ দায়ী মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের পদক্ষেপ নেওয়া হউক।

৫. সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব খাইরুল হক ও বিচারপতি জনাব মানিক, জন-বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই দুইজনের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. ২০০৯ সালের পর হতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা বা গায়েবী মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

৭. পুলিশে অসংখ্য আওয়ামী ক্যাডার লুকিয়ে আছে। যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী গণহত্যার জন্য উস্কানি দিয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৮. স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনগুলি গণহত্যাকারী, দুর্নীতিগ্রস্থ, টাকা লুন্ঠনকারী ও টাকা পাচারকারী সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা বিগত ৮ই আগস্ট সর্ব প্রথম দাবী জানাই।

 

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এল.ডি.পি এবং জনগণের পক্ষে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সুপারিশ সমূহ:

 

১. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ খুবই জরুরী, ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে আমাদেরকে প্রয়োজনে কয়েকটি প্রদেশ করতে হবে এবং ঐ আলোকে নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। তাহলে ঢাকা বসবাসের উপযুক্ত নগরী হবে। জনগণের সমস্যার লাঘব হবে। একজন ঝাড়ুদারের চাকুরী হলেও ঢাকা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তাহলে নতুন বাংলাদেশ কিভাবে বিনির্মাণ করবে।

 

২. প্রত্যেক বিভাগে হাইকোর্ট স্থাপন করতে হবে।

 

৩. স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেক বিভাগে অন্ততঃ ৩/৪টি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। সেই সাথে বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ বাংলাদেশী ডাক্তারদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে ৪. বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সমস্ত কমিশনগুলোকে স্বাধীন এবং রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। একইসাথে তাদের দায়বদ্ধতা ও জাবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

১. ডি.জি.এফ.আই ও ডি.জি.এন.এস.আইসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার কাজ সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। র‍্যাব ও পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। র‍্যাবের প্রধান সব সময় সশস্ত্র বাহিনী থেকে পদায়ন করতে হবে।

 

৫. সকল স্তরে পদায়নে রাজনীতিমুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের আমলে যারা তাবেদারী করেছে তাদেরকে প্রমোশন দিয়েছে। আশাকরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা শুধরানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আগামীতে যেন কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কোন দলের সেবাদাস না হয় বা দলের সদস্য না হয়, তা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশের মাটিতে আর স্বৈরশাসক, দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, লুঠেরাদের স্থান হবে না।

 

৬. খুনী। লুঠেরা ব্যবসায়ীরা রাতারাতি রং পরিবর্তন করছেন। সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত, সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পোস্টিং করে দেওয়াটা শুধুমাত্র সমাধান নয়। ভুলবশতঃ কোন বদলি বা পদায়ন হয়ে থাকলে তা পুনরায় শুধরায় নিয়ে তদন্ত করে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যে সকল কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছে, অবসর দেওয়া হয়েছে বা বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের বিগত দিনের অপকর্ম এবং দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। তাদের নিকট থেকে জনতার টাকা উদ্ধার করে সরকারী কোষাগারে জমা করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ গণপূর্ত ও রাজউক এর কথা বলা যায়।

৭. দুর্নীতিমুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নীতি ও নৈতিকতা তলানীতে ঠেকেছে। তা পুনরায় সমাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় নতুন বাংলাদেশ গঠন হবে না।

 

৮. নতুন প্রজন্মের আধুনিক চিন্তাধারা, টেকনোলজি ও পুরাতনদের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা একান্ত প্রয়োজন।

 

গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সুপারিশসমূহ:

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

১. ১৯৯৬ সাল হতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অসংখ্য আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদেরকে চাকুরী প্রদানের অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানাই। তবে, অহেতুক কোন নিরপরাধ কর্মকর্তা/কর্মচারী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

২. বিভিন্ন উপজেলা/ পৌরসভা/ সিটি কর্পোরেশন/ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলন, ও কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় যারা অস্ত্র প্রদর্শন করেছে তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে এবং তাদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলি উদ্ধার করতে হবে।

৩. চাঁদাবাজরা জনগণের শত্রু তাদের চিহ্নিত করুন, গ্রেফতার করুন এবং কঠোর শান্তির পদক্ষেপ নিন।

৪. উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্বৈরাচারী সরকারের নেতাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা/ গ্রেফতার করতে হবে। চিরদিনের জন্য এই অমানুষদের শায়েস্তা করতে হবে।

৫. সকল পুলিশ কর্মকর্তা অর্থাৎ থানার ইনচার্জ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পদায়ন করা হবে এবং তারাই নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে আই.জি, পদ পর্যন্ত প্রমোশন পেতে পারে, সেই সুযোগ রাখতে হবে।

৬. কনস্টেবল পদের জন্য বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক করতে হবে, তারাই ক্রমান্বয়ে প্রমোশনের মাধ্যমে এস. আই পর্যন্ত হতে পারবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক নির্ধারণ করা যেতে পারে।

৭. মাদক দ্রব্যের বিস্তার রোধ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ মদের বার, ক্যাসিনো ও ক্লাব সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন অনৈতিক কাজ হচ্ছে, যা ইসলাম ধর্ম পরিপন্থী। অনতিবিলম্বে এইগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

১. স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী, গুম-খুন ও আয়না ঘরের কারিগর শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিলে স্বাভাবিকভাবে তাদের সাথে সম্পর্কের চির ধরবে। তাকে যথাশীঘ্র ভারত থেকে এনে গণহত্যা, দুর্নীতি এবং দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, বিডিআর হত্যা, হেফাজত ইসলামের হত্যাকান্ডের দায়ে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

২. যে সমস্ত বাংলাদেশী হাই কমিশনার ও রাষ্ট্রদূত প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ অবলম্বন করেছিল, তাদেরকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করতে হবে। মনে রাখবেন, অবসর নয়, বদলী নয়, সোজা বাড়ি।

 

আইন মন্ত্রণালয়

১. ২০০৯ সনের ৬৩ নং "জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন"-সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাচারী আইন বাতিল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

২. রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এবং জনগণের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. একাধিক দ্রুত বিচার আদালত স্থাপন করে উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, লুঠেরা ও গণহত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে।

8৪. র‍্যাব ও পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। মিথ্যা ও গায়েবী মামলা, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার ইত্যাদি অসাংবিধানিক কার্যকলাপ বন্ধে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. শুধু বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নয়, সকল সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব ও পরিবারের সদস্যদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিবরণ চাইতে হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দেশে বা বিদেশে অবৈধ সম্পদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে তাদেরকে চাকুরী হতে বরখাস্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে ঐ ধরণের ব্যক্তি বা তার পরিবারবর্গ কোন প্রকার সরকারী চাকুরী ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার অযোগ্য বলে পরিগণিত হবে।

৬. ভবিষ্যতে সমস্ত পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। দুষ্কৃতিকারী ও আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়

১. আয়করের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে, সরকারী ও বেসরকারি চাকুরীজীবীদের ব্যক্তি আয়করের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। বিশেষ করে আয়কর আইন- ২০২৩ এর মাধ্যমে বেসরকারি চাকুরীজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের উপর বৈষম্যমূলক কর আরোপ করা হয়েছে। এই ধরণের আইন বাতিল করে সকল চাকুরীজীবীদের জন্য একই ধরণের আয়কর আইন প্রণয়ন করতে হবে।

২. ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিভিন্ন দেশের অনেক নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত। রেমিটেন্স হিসাবে পাওয়া আমাদের বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ তারাই নিয়ে যায়, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যাংক লুন্ঠনকারীদের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯৪ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১. এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা ও অংশীজনদের বিতাড়িত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের পদায়ন করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে এই সকল কমিটিগুলি সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হউক।

(ক) স্কুল সমূহের সভাপতি পদের জন্য- ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি পাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে। (খ) কলেজ সমূহের সভাপতি পদের জন্য- মাষ্টার্স ডিগ্রি পাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

২. প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল এবং কলেজ সমূহের পাঠ্য পুস্তকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইসলাম ধর্ম ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ পরিপন্থী বিষয়গুলি বাদ দিয়ে যুগোপযোগী করতে হবে।

৩. এই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল প্রতিষ্ঠান হতে রাজনৈতিক ক্যাডারদের বরখাস্ত করে তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়

১. অবস্থার উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন/ উপজেলা/ পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের নির্বাচন পুনরায় ব্যবস্থা করতে হবে।

 

পরিশেষে সেনাবাহিনীকে বলতে চাই, আওয়ামী স্বৈরাচারী, গণহত্যাকারী, টাকা লুন্ঠনকারী, দুর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী, এম.পি. বা নেতা যারা বিভিন্ন সেনা নিবাসে আশ্রয় নিয়েছে বা লুকিয়ে আছে তাদেরকে আয়না ঘরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন এবং আইএসপিআর এর মাধ্যমে সংবাদ পত্রে খবরগুলি প্রকাশ করুন। এতে আপনাদের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।

এছাড়াও বাংলাদেশের কোন নাগরিকের উচিত হবে না এই ধরনের জাতীয় শত্রুকে আশ্রয় দেওয়া। কোন বাসায় এই ধরণের জাতীয় শত্রু পাওয়া গেলে আশ্রয় দাতাগণের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করি এই জাতীয় শত্রুদের ধরিয়ে দিবেন।

 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক :  শামীম তালুকদার

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক : শামীম তালুকদার

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী  গ্রেফতার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল

ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল

সামনের বর্ষায় ঘাসে ঢাকা হবে রাজধানীর অনাবৃত সড়ক বিভাজন: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সামনের বর্ষায় ঘাসে ঢাকা হবে রাজধানীর অনাবৃত সড়ক বিভাজন: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন