বাজারে পণ্য প্রচুর দামও বেশি
২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
পবিত্র মাহে রমজান শুরু। আমাদের দেশে রমজান আসলেই বাড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যেই রমজানের দরকারি পণ্য খেজুর, ছোলা, পিঁয়াজ, চিনি, ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, আটা-ময়দা, মসলা, ডিম, মুরগি, মাছ এবং গোশতের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। জীবন যাপনের ব্যয় মেটাতে তাদেরকে এখন প্রয়োজনীয় তালিকা কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের তালিকাও রয়েছে। আগে যিনি মাসে ২ কেজি গরুর গোশত কিনতেন তিনি এখন ১ কেজি কিনছেন। যিনি পরিবারের জন্য মাসে ১ডজন ডিম কিনতেন তিনি এখন সেটা অর্ধডজনে নামিয়ে এনেছেন। অনেকে ডিম ও গরুর গোশত মাসের বাজারের তালিকা থেকেই বাদ দিয়েছেন। মাছ বা সবজি দিয়ে মাসের খাদ্য চাহিদাপূরণ করছেন। পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে আগে যে পরিমাণ দুধ, ডিম বা ফল কেনার সামর্থ্য ছিল, মূল্যবৃদ্ধির ফলে তা কমে আসায় ছোট করতে হচ্ছে এসব খাদ্য তালিকা।
সবকিছুর উচ্চমূল্যের কারণে মানুষ তাদের ব্যয় সঙ্কোচন করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে বাজারে বেচাকেনা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। খিলগাঁও রেলগেইট বাজারের ভাই ভাই স্টোরের বিক্রয় প্রতিনিধি জুয়েল বলেন, রোজার আগে কেনাকাটার যে আমেজ ছিল তা এখন আর নেই। কাস্টমার আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া ক্রেতারা পরিমাণেও আগের চেয়ে কম কিনছেন। আগে যে ক্রেতা ২ কেজি ছোলা কিনতেন তিনি এখন এক কেজি কিনছেন। যিনি ১ কেজি চিনি কিনতেন তিনি এখন আধা কেজি কিনছেন। এভাবে ক্রেতারা সব পণ্যই আগের চেয়ে পরিমাণে অর্ধেক বা তার চেয়ে কম কিনছেন। তাই আগে যেভাবে মার্কেট জমে উঠতো, সেভাবে আর জমছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তথা বিশ্ব পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েও সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্য তেলসহ প্রধান কয়েকটি পণ্যের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় রমজান মাসে। এই সুযোগে এবারও ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো দামবৃদ্ধি করেছে। আমদানিনির্ভর এসব পণ্যের সঙ্কট তৈরি করে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী আরও বেশি ফায়দা লুটবে এমন একটা শঙ্কা অনেকের মনে ছিল। তবে ভোক্তারা নিজেরাই তাদের ব্যয় সঙ্কোচন করায় সে শঙ্কা কেটে গেছে। বাজারে এখন পণ্যের অভাব নেই। পণ্যের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা কম বলে বিক্রেতারা বলছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদার প্রায় ২২ লাখ টনের মধ্যে রমজানে সারা দেশে চাহিদা প্রায় ৩ লাখ টনের মতো। দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন, এর মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার টনের মতো। একইভাবে বছরে ভোক্তাদের ছোলার চাহিদা ১ লাখ ৩৬ হাজার টন। এর মধ্যে রমজানেই ছোলার চাহিদা থাকে প্রায় ৯১ হাজার টনের মতো। বর্তমানে বাজারে এসব পণ্য পর্যাপ্ত রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও বলেছেন, দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে গতকাল দেখা যায়, দেশি ভালো জাতের ছোলা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। দেশি ভালো মসুর ডাল ১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, অ্যাংকরের বেসন ৭৫-৮৫ টাকা এবং বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়।
মুদি দোকানি হালিম বলেন, জিনিসপত্রের দাম অত্যাধিক বেশি হওয়ায় এবার রোজার আগেও অন্য বছরের তুলনায় মাল কম তুলেছেন। কারণ মানুষ এখন উপায় না থাকায় অল্প পরিমাণে কিনছে। যার এক কেজি প্রয়োজন সে আধা কেজি কিনছে। এ জন্য বিক্রি আগের চেয়ে কম। গত বছর রোজার আগে দুই বস্তা ছোলা বিক্রি হয়েছে। এ বছর এখনো এক বস্তাও বিক্রি হয়নি।
বেসরকারি চাকুরিজীবী আরমান মুদি দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। তিনি জানান, রোজাকেন্দ্রিক রান্নার কাজে যেসব পণ্য বাসায় লাগে সেগুলো কিনতে বাজারে এসেছি। তবে সব পণ্যেরই দাম বাড়তি। আগের মতো একসঙ্গে অনেক দিনের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের পরিবার। তার একার আয়েই সংসার চলে। প্রতিবছর রোজার আগে একসঙ্গে ৫-১০ দিনের বাজার করলেও এবার তা পারছেন না। সবই কিনছেন কাটছাঁট করে। যেমন: আগে একেবারে দুই কেজি ছোলা নিতেন। এবার কিনলেন আধা কেজি। চিনি কিনতেন তিন কেজি, এবার কিনলেন আধা কেজি। তিনি বলেন, অল্প অল্প জিনিস কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। ৫৫-৬০ টাকার চিনি এখন ১২০ টাকা। এই টাকায় আগে ডাবল বাজার করা যেতো।
রোজার ইফতারির অন্যতম উপাদান খেজুর। আমদানি নির্ভর এই পণ্যটির দাম এবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। রাজধানীর প্রতিটি বাজার এবং অলিগলির ফুটপাতেও রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন ধরের খেজুর নিয়ে অনেকে বসেছেন। তবে সবখানে দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে বাজারে সাধারণ মানের প্রতি কেজি খেজুরের দাম ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, যা গত বছর সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর যে খেজুর গত বছর ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বর্তমান বাজারে সেই খেজুরের কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় খেজুর বিক্রিও অনেক কমে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, আগে যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি করতেন এবার তার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। একই অবস্থা ফলের দোকানগুলোতেও। আঙ্গুর আপেল, মালটা সব কিছুর দোকানে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে। কিন্তু তার দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে।
নজরুল নামের এক ক্রেতা বলেন, গত বছরও রোজার আগে আঙ্গুর কিনেছি ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা কেজি। এবার সে আঙ্গুর ৩০০ টাকা। যে মালটা গত রোজায় কিনেছি ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি, তা এবার ২২০ থেকে ২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আমার বৃদ্ধ বাবা ইফতারের সময় ফল খেতে ভালোবাসেন। তাই ফল কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু যে দাম তাতে এবার ইফতারে বাবাকে ফল খাওয়াতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।
সাধারণত রোজার আগে গোশতের দোকানে ভিড় জমতো। কিন্তু এবার দেখা গেল, সেই ভিড়ও কমেছে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে। বাজারে খাসির গোশতের দাম ১১০০ থেকে দোকানভেদে ৫০-১০০ টাকা বাড়তি। গরুর গোশতের দাম ৭৫০ টাকা কেজি। ছাড়া গরুর গোশতের দাম হাজার টাকা কেজি। এদিকে বাজারে মুরগির দাম আরও বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে। ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগির দাম হয়ে গেছে ৩৬০ টাকা, আর ১০ টাকা বেড়ে লেয়ার মুরগির দাম হয়েছে ৩২০ টাকা। বাজারে আসা মোস্তাক বলেন, গোশতের দাম একদম নাগালের বাইরে। আগে রোজা এলে আটটা মুরগি কিনতাম, এবার দুইটা নিলাম। গরুর গোশত এখনো কিনতে পারি নাই। যদি সম্ভব হয় তাহলে সামনের সপ্তাহে ১ কেজি গরুর গোশত কেনার চেষ্টা করব।
বাজারে বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বাজারে গেলেই তাদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। কারণ সব ধরনের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। রোজা এলে ইফতারের আইটেম কেনা হয়। কিন্তু এবার দাম এত বেশি যে, একসঙ্গে দুই/এক দিনের বাজার করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা আগের মতো বাজার করতে পারছেন না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন যুক্তরাজ্যের
যবিপ্রবিতে বারির কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবনী সেমিনার ও প্রদর্শনী
ঢামেক হাসপাতালে ফের ‘ভুয়া নারী চিকিৎসক’ আটক
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাংলাদেশে আসবে ডিসেম্বরে
এক সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় যশোরের ৩ রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যু
না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৯৬ জন আক্রান্ত
ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাসহ দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
পাকিস্তানকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে অস্ট্রেলিয়া
ইকোনমিস্টের রিপোর্ট : বিপ্লবের পর বাংলাদেশ স্থিতিশীল, ড. ইউনূসের উচিত নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা
ফ্যাসিস্ট সরকার হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও পঙ্গু করেছে: বাবুল
আশুলিয়ায় বিভিন্ন মামলার ৯ আসামি গ্রেপ্তার
চিলমারীতে ইনকিলাব সংবাদদাতার পিতার উপর হামলা
মুজিব কিল্লা প্রকল্পের এপিডির স্ত্রীর নামে নিজ দপ্তরে ঠিকাদারি
মির্জাগঞ্জে আইনজীবীকে কুপিয়ে জখম, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার
রাজনৈতিক সরকারও যেন প্রশাসন দ্বারা চালিত না হয়
ফ্রিজ হলো চিত্রনায়িকা শিল্পী ও ডা. ইকবালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
ভারতীয় হিন্দু আমেরিকানদের বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্র যে কারণে সফল হবে না
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে থাকছে না জমকালো আয়োজন
৫৭% ব্যবসায়ী মনে করেন কর সংক্রান্ত সেবা পেতে ঘুষ দিতে হয়: সিপিডি