ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
কেউ শুনছে না নদীর কান্না ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণের নদ-নদীর নাব্য সঙ্কট, বাড়ছে লবণাক্ততা কৃষি ও মৎস্য সম্পদসহ পরিবেশ-প্রকৃতি বিপর্যয়ের মুখে

শুকিয়ে মরছে নদী

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম

পানি হচ্ছে নদীর প্রাণ। সেই পানির জন্য হাহাকার করছে দেশের প্রতিটি নদী। অথচ কেউ শুনছে না নদীর এই কান্না। নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। দখলে-দূষণে মরছে নদী। অপর দিকে ভারতের ফারাক্কা ও গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে এবং উজানে তৈরি করা ৪০টি ড্যাম ও ব্যারাজ পানির গতি পরিবর্তন করে এ দেশের নদীগুলোকে কার্যত হত্যা করা হয়েছে। ভারত এখন নতুন করে আবারও ফারাক্কার উজানে আরো দু’টি খাল খনন করে পানি অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এতে তিস্তা একেবারেই পানিশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ছাড়া নানা ধরনের শিল্প বর্জ্যরে দূষণে নদীর প্রাণ বৈচিত্র্যও এখন হুমকির মুখে। পাশাপাশি নদীর পাড় দখল করে, কিংবা নদীর বুকেই চলছে অবৈধ নির্মাণ। সব মিলিয়ে দেশের বেশির ভাগ নদীর বুকে ধু-ধু বালুচর। আর এসব চর এখন ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। নদী মরে যাওয়ায় নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকিতে মৎস্য সম্পদ। সেই সাথে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর।
ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকা- আর দখল রাজত্ব নদীকে তিলে তিলে মারছে। নদীর সঙ্গে মরছে নদীর ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশও। কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ দেখা দিয়েছে, সেচ চাহিদা মেটাতে হচ্ছে মাটির নিচের পানি তুলে। তাতে বিপদ আরো বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে, মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে। নদীভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। নদীর মাছ হয়ে উঠছে অমূল্য পণ্য। নদীতে মাছ ধরা, নৌকায় নদী পারাপার করা জেলে-মাঝিদের জীবনধারা বাস্তব থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহত্তর যশোরের জেলাগুলো, খুলনার তিনটা জেলা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, এমনকি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এগুলোর ভাগ্য সরাসরি গঙ্গার ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া বরগুনা, ফিরোজপুর, বরিশাল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, এসব জেলার নদীর পানি কমে যাওয়ার কারণে সমুদ্রের পানি ভেতরে ঢুকছে। এতে লবণাক্ত হচ্ছে বিপুল এলাকা। বদলে যাচ্ছে ইকোসিস্টেম। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ৫০ বছর পর সুন্দরবনে একটা সুন্দরীগাছও থাকবে না। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও বরগুনা থেকে মানুষ দেশান্তরী হতে থাকবে। কৃষি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশের নদীর মরণদশা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট বেশ কয়েকটি পর্বে ছাপা হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলার নদীর সার্বিক অবস্থা আজকের পর্বে তুলে ধরা হলো।
বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, ভারতের পানি আগ্রাসনসহ যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের অভাবে বরিশালের নদ-নদী শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে পড়ছে। আর বর্ষাকালে ভাঙনের তীব্রতাও ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। নদীর যথাযথ ড্রেজিং ও ভাঙন রোধে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এতদিন যে নদী আশীর্বাদ ছিল তা ক্রমাগত দুঃখে পরিণত হচ্ছে। ভয়াবহ ভাঙনে ‘সকাল বেলার আমীর সন্ধায় ফকির’-এ পরিণত হলেও শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকটে নৌ যোগাযোগও বিপর্যস্ত হচ্ছে।
ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে নদ-নদী বহুল দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা সংকট ক্রমগত ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। একই সাথে সাগরের লবণাক্ত পানি ১শ’ কিলোমিটার উজানে বরিশাল ছাড়িয়ে আরো ৫০ কিলোমিটার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলার মেঘনা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। নদীর নাব্যতা সংকটে প্রায় ৩ লাখ টন মাছ উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল মৎস্য সম্পদের ভবিষ্যতও ঝুঁকির মুখে। অথচ সারা দেশের আহরিত ইলিশের ৭০ ভাগই উৎপাদন ও আহরণ হয়ে থাকে এ অঞ্চলে।
পানি কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের লবণাক্ততা বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্রের মতে, ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা ছিল ৬১০-৬৩০ পিপিএম। ২০২১ সালে কীর্তনখোলায় লবণাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে। উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণসহ স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে সাগরের লবণাক্ত পানি বরিশাল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে হিজলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, পদ্মা, মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ ও মধুমতি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত বরগুনা জেলা। অসংখ্য নদ-নদী, খাল আর ছোট-বড় জলাশয় বরগুনার ভূখ-টির চার পাশ ঘিরে আছে। বরগুনার প্রকৃতি নদী ও সাগরনির্ভর। জেলার প্রধান নদ-নদী হচ্ছে পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর, হরিণঘাটা, খাকদোন, টিয়াখালী নদী, টিয়াখালী দোন, বগীরখাল, বেহুলা নদী, চাকামইয়া দোন, নিদ্রাখাল, আমতলী নদী। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে তিনশ’টি প্রাকৃতিক খাল রয়েছে। এ জেলায় মোট ১৬০ বর্গকিলোমিটার নদী রয়েছে, যা জেলার মোট আয়তনের ২২ ভাগ।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বঙ্গোপসাগরসহ বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বঙ্গোপসাগর, পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীগর্ভে বিলীন হয় বরগুনার বালিয়াতলী, তেঁতুলবাড়িয়া, বুড়িরচর, নাপিতখালী, গোলবুনিয়া-ছোনবুনিয়া, নলটোনা, গোলবুনিয়া, কালমেঘা, জিনতলা, রূহিতাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধ। জেলার সাড়ে ৮শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৫শ’ কিলোমিটার। এসব ভাঙা বাঁধ দিয়ে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় ঘর-বাড়ি। ভাসিয়ে নেয় মাছের ঘের, বিনষ্ট করে ফসলি জমি।
ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, ফরিদপুরে দখল দূষণে ৭টি নদী। বেকার হচ্ছে নানান পেশার শ্রমিজীবী মানুষ। পাশাপাশি পদ্মার পলিতে এবং ভুমিদস্যুদের দখলী ভরাটে জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। ফারাক্কার প্রভাবে প্রমত্তা পদ্মার ফরিদপুর শহরমুখী অংশে তথা কুমার ও পদ্মার সংযোগস্থল মুনখালী পয়েন্টে জেগেছে ৪ কিলোমিটার ডুবোচর। ফলে পদ্মার প্রধান শাখা নদী কুমার, মধুমতি, ভুবনেশ্বর, চন্দনা, বাড়াশিয়াও ভরে গেছে, পানির প্রবাহ না থাকার কারণে। এই বিষয়ে ফরিদপুর জেলা সদরের ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির এবং নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, মদনখালীর পদ্মা-কুমার নদীর প্রধান সংযোগস্থল তথা কুমার নদীতে পানি প্রবেশের উৎস মুখটি পদ্মার পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে ৩/৪ বছর আগেই। ফলে কুমার নদীতে পানি প্রবাহে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মরা নদীর প্রায় ৬০ কিলোমিটার খননের পর দুই পাড় ধসে আবার ভরাট হয়ে গেছে। জনগণের কোনো উপকারে আসেনি নদী খনন। পদ্মার সাথে আংশিক সংযোগ আড়িয়াল খাঁ, কুমার-ভুবনেশ্বর নদীর দুই দিক থেকে এসে মিলিত হয়েছে। দুই নদীর পানি কমে যাওয়া, কুমার নদী শুকিয়ে মরা এখন খাল। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে শতাধিক জেলে। তারা আজ পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি কুমার নদীর দুই পাড় দখল হয়ে নদীর পাড়ে দোকানপাট ও বাসাবাড়ি নির্মাণ করায় নদী হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ। কুমার, চন্দ্রনা, বারাশিয়া, মধুমতি ভুবনেশ্বর, তথা ৫টি নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ছে, কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে ও নৌকার মাঝিরা এবং নৌকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীসহ ২০ পেশার শ্রমিজীবী মানুষ।
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, মাদারীপুরের ৭টি প্রধান নদ-নদী পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার এখন বেহাল দশা। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই সাতটি নদীর কোথাও নাব্য সংকট আবার কোথাও দখল আর দূষণে অস্তিত্ব ঝুঁকিতে।
কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরেই গড়ে উঠেছে মাদারীপুর শহর। কুমার নদে বালু ফেলে দখল করে অবৈধ বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছেন পাঁচ শতাধিক দখলদার। দখলদারের সংখ্যা বাড়ছেই, প্রশাসনের নজর নেই। শিবচরের ময়নাকাটা নদী এখন অস্তিত্বহীন। ময়নাকাটার বুকজুড়ে ফসলের আবাদ। অন্যদিকে কালকিনির টরকী ও পালরদীরও একই দশা। বর্ষায় দু-তিন মাস পানি থাকলেও বাকি সময় থাকে কোথাও হাঁটুপানি কোথাও ফসলের মাঠ। আড়িয়াল খাঁয় জেগে উঠেছে নতুন নতুন চর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, পালরদী, কুমার, নিম্নকুমার, টরকী ও ময়নাকাটার ১৪০ কিমি নদ-নদী শুকিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব নদ-নদী ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে জেলার নদীবন্দর ও লঞ্চঘাটগুলো। ফলে ভাটা পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।
মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, দেশের প্রধান দুইটি নদী পদ্মা, যমুনা ছাড়াও মানিকগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ভয়ে গেছে ধলেশ^রী, কালিগঙ্গা, ইছামতি, কান্তাবর্তী, মনলোকহনী, গাজীখালী, ক্ষীরাই, মন্দা, ভুবনেশ^রীর মতো ৯টি শাথা নদী। এসব নদীতে এক সময় সারা বছর পানিতে ভরপুর খাকত। তাই এ জেলা মানুষের ঢাকা রাজধানীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নদীপথ। পণ্যবোঝাই ট্রলার, স্টিমার চলাচল করত। এসব নদী আজ নাব্যতা সংকটের কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বর্ষার মৌসুম ছাড়া বাকি সময় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। এতে নদীর বুকে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। আবার কোথাও গো-চারণ ভূমি ও ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, জেলার এসব নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪১ কিলোমিটার। কিন্তু নাব্যতা সংকটে এসব নদীর আকার-আয়তন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এতে বদলে গেছে নদীর গতিসীমা। আজ পানির জন্য হাহাকার চলছে। নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা বিপর্যয়ের মুখে।
ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, কালিগঙ্গা নদীর তিল্লি থেকে কিছু কিছু এলাকায় পানি থাকলেও তিল্লি মুখ বন্ধ থাকায় পুরো নদীতে কোনো প্রবাহ নেই। এটি এখন কার্যত একটি মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৌলতপুরের কাছে যমুনা থেকে কালীগঙ্গা নদী উৎপন্ন হয়ে জাবরার কোল ঘেঁষে সিঙ্গাইরের ধল্লা পর্যন্ত নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটারের বেশি। বর্তমানে এ নদীর অধিকাংশ স্থানে শুকনো মৌসুমে নৌকা চলার মতো পানিও থাকে না। কোথাও কোথাও একেবারেই শুকিয়ে গেছে। পদ্মার শাখা ইছামতি হরিরামপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফের পদ্মায় মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ১৭ বছর আগে যাত্রাপুরের কাছে বাঁধ দেয়া হয়। বর্তমানে এ নদীটিও মৃতপ্রায়।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভেতর দিয়ে পদ্মা, মেঘনা, ধলেম্বরী আর ইছামতি নদী প্রবাহিত হয়েছে। ধলেশ্বরী আর ইছামতি নদী নিয়মিত খনন না করায় চর পড়ে ধীরে ধীরে যৌবন হারিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। তীব্র খর¯্রােতা ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদীতে চর পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে লৌহজং-ঢাকা, তালতলা-মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল। ফসলি জমিতে সেচ কার্যক্রম ও মালামাল পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। কমেছে ফসল উৎপাদন এবং মৎস্য আহরণ।
সিরাজদিখান টংগীবাড়ী লৌহজং উপজেলার জনগণ প্রধানত নৌপথে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করত। গত এক যুগ পূর্বেও লৌহজং কাঠপট্টি হয়ে ঢাকায় যাত্রীবাহী বড় বড় লঞ্চ ও মালবাহী কার্গো চলাচল করত। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ধলেশ্বরী আর ইছামতি নদীতে ছোট ছোট নৌকা ছাড়া অন্য কোনো নৌযান চলাচল করতে পারে না। কাঠপট্টি লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশে বিশাল চর পড়ছে। বন্ধ হয়ে যেতে পারে কাঠপট্টি-মুন্সীগঞ্জ নৌ-যোগাযোগ। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে অনেক সংযোগ খাল। যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ তালতলা, বেতকা ও আবদুল্লাপুর লঞ্চঘাটের পন্টুন সরিয়ে নিয়েছে। নৌ-পথকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মীরকাদিম বন্দর, তালতলা, বেতকা এবং আবদল্লাপুর বাজার এখন মৃতপ্রায়। নাব্যতা সংকটে মীরকাদিম বন্দরের কাঠপট্টি ঘাটও বন্ধের উপক্রম। বেতকা ব্রিজের পর থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত ধলেশ্বরী নদীর নাব্যতা ফেরাতে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করে। নিয়মিত ড্রেজিং না করায় তা কাজে আসেনি। ইছামতি নদী অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সিরাজদিখান-তালতলা-মুন্সীগঞ্জ এবং সিরাজদিখান-নারায়ণগঞ্জ নৌ রুটসহ শাখা খালগুলো। ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে তালতলা-ইছাপুরা খাল। দখলে আর ভরাটে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে শাখা খালসমূহ। শুকিয়ে গেছে শ্রীনগর-গোয়ালন্দ নৌ-রুট।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন