ইসলামের বিজয় স্মরণি বদর যুদ্ধ
০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৯ পিএম
বদর যুদ্ধ ইসলামের বিজয় স্মরণি, ভাগ্য নির্ধারণী প্রথম যুদ্ধ। মক্কায় কুরাইশদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নবীজি দেশত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন করেন। মক্কার কুরাইশ নেতাদের মাথায় ছিল, যে কোনো সময় মদিনা আক্রমণ করে মুসলমানদের গুঁড়িয়ে দেবে। নবীজি ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী বিচক্ষণ। তিনি কুরাইশ নেতাদের গতিবিধির উপর নজর রাখেন। খবর পান, কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা মদিনার কাছ দিয়ে সিরিয়া যাচ্ছে। শত্রুকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দেয়া মানে নিজের জন্য বিপদ ঢেকে আনা। তিনি প্রায় ২০০ জনের একটি বাহিনী পাঠালেন কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার পথ রোধ করার জন্য। এই ঘটনা হিযরতের ১৬তম মাস জমাদিউল আখের মাসের। মোট ৩০টি উট ছিল তাদের সাথে।
যুল-উশাইরায় গিয়ে জানতে পারেন কুরাইশ কাফেলা আগেই সে স্থান অতিক্রম করে সিরিয়া চলে গেছে। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়নের আশংকা ছিল ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে মদিনার পাশ দিয়ে ফেরার সময় মুসলমারা আক্রমণ করতে পারে। তাই মক্কায় আগাম খবর পাঠায় সাহায্যকারী সৈন্য পাঠানোর জন্য। আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলার পথরোধের জন্য নবীজি অগ্রসর হন ২য় হিজরীর ৮ রমজান। আবু সুফিয়ান ভিন্ন পথে মদিনা অতিক্রম করে মক্কায় ফিরে যায়। ততক্ষণে বিরাট কুরাইশ বাহিনী বদর প্রান্তরে উপনীত হয়। আবু সুফিয়ান নিরাপদে ফিরে যাওয়ার সংবাদ জানিয়ে কুরাইশ বাহিনীকে ফেরত যেতে বলেছিল। কিন্তু বিশাল সৈন্যবল নিয়ে মুসলমানদের শক্তি গুঁড়িয়ে দেয়ার বুদ্ধি চাপে আবু জেহলের মাথায়।
কুরাইশ বাহিনী বদর প্রান্তরে শিবির স্থাপন করে। নবীজি মুসলমানদের নিয়ে সেখানে ব্যুহ রচনা করেন। ১৭ রমজান যুদ্ধ হয়। মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। কুরাইশ বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ৯৫০জন। মুসলমানরা বের হয়েছিল বাণিজ্য কাফেলা ধরতে। ফলে তেমন যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিল না। ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে সেই স্বল্প সংখ্যক মুসলমান যুদ্ধ করে বীরবিক্রমে। আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে এবং সুসজ্জিত কুরাইশ বাহিনীর পরাজিত হয়। মুসলমানদের পক্ষে ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন এবং কুরাইশ বাহিনীর ৭০ জন নিহত ও অপর ৭০ জন বন্দি হয়।
অতীতের ঘটনা জানার জন্য আমাদের তিনটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম কোরআন, হাদিস ও ইতিহাস। বদর যুদ্ধের ঘটনা ইতিহাসে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত আছে। এরপরও কীভাবে স্বল্পসংখ্যক মুসলমান বিজয়ী হলো এবং শক্তিশালী কুরাইশ বাহিনী পরাজিত হলো তা ইতিহাসের বিস্ময়।
ইতিহাস গ্রন্থ ছাড়াও হাদিসের কিতাবে ৩১৩ জন বদরী যোদ্ধার জীবনবৃন্তান্ত আছে। কে কোথায় কোন অবস্থায় যুদ্ধ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, মুশরিকদের উপর আক্রমণ করেছেন, কয়েক হাজার ফেরেশতা আসমান থেকে অবতরণ করে যেভাবে সরাসরি তরবারি চালিয়েছেন তার বিবরণ হাদিসগ্রন্থগুলোতে জ্বলজ্বল করছে।
কোরআন মজিদ ৩০ খ-ের একটি বিশাল পবিত্র গ্রন্থ। কোরআন আমরা পরম ভক্তি ভরে তেলাওয়াত করি। রমযানে মাসব্যাপী মসজিদে মসজিদে তারাবি নামাজে একবার কোরআন খতম করার সংস্কৃতি পালিত হয় সর্বত্র। হয়ত অনেকে জানি না, কোরআন মজিদের বদর যুদ্ধের কথা আছে। একটি দুটি আয়াত বা বাক্য নয়, সুরা আনফাল, সুরা আলে ইমরান, সুরা নিসায় বদর যুদ্ধ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সব আলোচনা একত্রিত করলে ৩০ পারা কোরআনের আধা পারার চেয়ে বেশি হবে। আমরা ভক্তিভরে তেলাওয়াত করলেও নিজেকে প্রশ্ন করি না, কেন কোরআন মজিদে বদর, উহুদ, খন্দক, হুনাইন যুদ্ধের বিবরণ আছে। বিশেষত বদর যুদ্ধের বর্ণনা এত বিস্তারিত কেন।
আল্লাহ পাক বলেন, ‘এবং বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে আল্লাহ তো তোমাদের সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
স্মরণ করুন, যখন আপনি মুমিনদের বলছিলেন, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের পতিপালক ৩ হাজার অবতারিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সহায়তা করবেন?
হ্যাঁ, নিশ্চয় যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করলে আল্লাহ ৫ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন’। (সূরা আলে ইমরান , আয়াত-১২৩- ১২৫)
দুনিয়ার মানুষকে সত্য সুন্দর ও কল্যাণের পথে আহ্বান আর অসুন্দর, অকল্যাণ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব দিয়ে মুসলমানদের দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। শুধু ওয়াজ নসিহত করলে সে দায়িত্ব পালন হবে না। বিশ^ব্যাপী সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার এই মিশনে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন থাকতে হবে। মুসলমানরা যাতে যুগে যুগে এই প্রেরণা পায় এবং সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করে তার জন্যই কোরআন মজিদে বদর যুদ্ধের বিস্তারিত আলোচনা আছে। বদর যুদ্ধের চেতনা আমাদের রক্তের স্রোতধারায় মিশে আছে, হৃদয়তন্ত্রীতে বিজয়ের সুর তোলে।
বর্তমান সময়ের মুসলিম নেতাদের একটি কথা বলতে চাই, ইসলামে উত্তেজনার বশে অস্ত্র ধারণের নাম জিহাদ নয়। মুসলমানরা মক্কায় ১৩ বছর চরমভাবে নির্যাতিত ছিল। এরপরও তাদেরকে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়নি। মদীনায় হিজরতের পর যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় তখনই যুদ্ধের বিধান দেয়া হয়েছে। কাজেই রাষ্ট্রব্যবস্থা হাতে আসার আগে সশস্ত্র লড়াই জায়েয নেই। গোটা দেশ বা জাতি যদি বিজাতীয় আগ্রাসনের শিকার হয় তখনও সর্বজন মান্য নেতার নেতৃত্বে সুশৃঙ্খল জিহাদের ব্যাপারেও জাতীয় ঐকমত্য হতে হবে। এই সূক্ষ্ম তফাতটি বুঝতে না পারলে জিহাদ সন্ত্রাসের রূপ নেবে। যত আবেগ ও জযবা হিতে বিপরীত ফল বয়ে আনবে। ইতিহাস ও বাস্তবতাকে সামনে রেখে দায়িত্ব নিয়ে কথাটি বলছি। যুদ্ধ বা লড়াই অবশ্যই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় হতে হবে। তার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম বা জিহাদ হবে মৌখিক, আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারÑসৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের পর্যায়ে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন