খাদ্য উৎপাদন, মজুত প্রতিরোধে খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদÐ বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দÐের বিধান রেখে আজ “খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩ এর চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম বøকের মন্ত্রিসভা কক্ষে মন্ত্রিসভায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করবেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সার সংক্ষেপে বলা হয়, সামরিক শাসনমালের জারি করা অধ্যাদেশগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্য ফুড গ্রেইন সাপ্লাই প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৯’ এবং ‘ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ দুটো আইনকে একসঙ্গে করে নতুন আইন করা হচ্ছে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ করা যায়, যাতে সিস্টেমের মধ্যে আনা যায়- সেজন্য আইনটি করা হচ্ছে। এর আগে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২২’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। দুটো আইন একসঙ্গে করে নতুন আইনটি আনা হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধে একটি নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।
সংজ্ঞায় বলা হয়: বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কিছু না থাকিলে এই আইনে, শ্রমিক: খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে নিযুক্ত বা কোনো পরিবহণ যান হইতে নামানো কিংবা উঠানো, সরকারি অথবা বেসরকারি গুদামে খামালীকরণ,ডাম্পিং,স্তুপীকরণ কিংবা এতদসংশ্লিষ্ট যে কোন কাজে মজুরির বিনিময়ে নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা থাকবেন।
বিতরণ, স্থানান্তর ,ক্রয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত অপরাধ ও দন্ড: বলা হয় কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদপ্তরে প্রদত্ত বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হইয়াছে এ রুপ চিহৃযুক্ত সিল ব্যতীত সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্য ভুর্তি সবস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর ,ক্রয় বা বিক্রয় করিলে উহা একটি অপরাধ এবং তাজন্য তিনি অনুর্ধŸ ২ বছরে কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবে।
বিভ্রান্ত সৃষ্টি সংক্রান্ত অবরাধ ও দন্ড: কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনে সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা ববিৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করিলে ইহা হইবে একটি অপরাধ এবং তাজন্য তিনি অনুর্ধ্ব ৫বছর কারাদন্ড এবং ১৫ লাখ টাকার অর্থদন্ড।
কোম্পনীর অপরাধ করলে: কোনো কোম্পানী এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হইলে উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকলে কোম্পানির প্রত্যেক প্রধান নির্বাহী, পরিচালক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সচিব, অংশীদার ,র্কমকর্তা এবং সংশ্লিষ্টরা উক্ত অপরাধে সংঘটন করিয়াছে মমে গণ্য হইবে।
ব্যবসায়ী : কোন খাদ্রদ্রব্যের উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন বা এতদসংশ্লিষ্ট কাজে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নিযুক্ত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। মিলার: অর্থ খাদ্রদ্রব্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও শোধনের জন্য স্থাপিত লাইসেন্সধারী মিল মালিক। ডিলার : অর্থ এমন কোনো ব্যক্তি যিনি শর্তসাপেক্ষে নিযুক্ত যে কোনো উৎপাদনকারী বা শোধনকারী বা আমদানিকারক বা কোনো সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার পক্ষে খাদ্যদ্রব্য মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন যে কোন কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকেন। কর্মচারী : কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিযুক্ত কর্মচারী যিনি খাদ্যদ্রব্য মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ বিপণন অন্যান্য কাজে নিয়োজিত থাকবে।
ঠিকাদার: সরকারি,আধাসরকারি,স্বায়ত্বশাসিত,বেসরকারি সংস্থার ব্যবস্থাপনার আওতায় বা টেন্ডারের মাধ্যমে বা সমঝোতার মাধ্যমে বা আদেশের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য মজুত, নৌ, সড়ক বা রেলপথে,অন্যকোন যানে পরিবহণ ও পরিবহণ যান থেকে উঠানো বা নামানো খামাল জাত করার এবং যে কোন কার্য সম্পাদনের জন্য তালিকাভুক্ত বা চুক্তিবদ্ধ বা নিযুক্ত লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বা সংস্থা। খাদ্যদ্রব্যের মজুত: অর্থ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি ব্যক্তি, সংস্থা, ব্যবসায়ী কর্তৃক গুদাম, দোকান, গৃহ, লাইটার, কোষ্টার, যে কোনো যানে বা যেকোনো স্থানে বা আঙিনায় খাদ্যদ্রব্য বা জমাইয়া, স্তুপিকৃত রাখা ।
স্থানান্তর: অর্থ কোনো খাদ্যদ্রব্য সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি ব্যক্তি, সংস্থা,ব্যবসায়ী কর্তৃক যে কোন মাধ্যমে এক স্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তর করা, পরিবহণ: অর্থ ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য এক জায়গা থেকে রেল, নৌ, সড়ক বা আকাশ পথে বা অন্য কোন পরিবহণ যান যোগে অন্য জায়গায় প্রেরণ করা যাবে।
সরবরাহ: সরকারি,আধাসরকারি,স্বায়ত্বশাসিত,বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি,আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি গুদাম, দোকান, গৃহ, লাইটার, কোষ্টার, অন্য কোনো যান বা যেকোনো স্থান হইতে খাদ্যদ্রব্য ব্যবসায়ী,মিলার, ডিলার, ঠিকাদার, প্রকল্প চেয়ারম্যান কিংবা কোন ব্যক্তির নিকট সরবরাহ করা যাবে। বিতরণ : ব্যবসায়ী,ডিলার,প্রকল্প চেয়ারম্যান,জনপ্রতিনিধি বা কোন ব্যক্তি কর্তৃক উপকারভোগী বা ভোক্তার নিকট খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা। বিপণন ধারায় বলা হয়, সরকারি,আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক ভোক্তা,উপকারভোগী বা যেকোনো সরকারি,আধাসরকারি স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট অর্থের বিনিময়ে খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা।
খাদ্যদ্রব্য ধারায় বলা হয়: যে কোন প্রকার দানাদার খাদ্যশস্য যেমন, চাল, ধান, গম ইত্যাদি ভোজ্য তৈল যেমন-সয়াবিন, পামওয়েল, সরিষা, সানফ্লাওয়ার ওয়েল, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল এবং অন্যান্য সকল প্রকার ভোজ্য তেল, খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতের কাঁচামাল, পেঁয়াজ, লবন, চিনি, ডাল, প্রক্রিয়াজাতকৃত যে কোন খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য প্রচলিত আইনে সংজ্ঞায়িত খাদ্য। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ: যে সকল কার্যকলাপ জনগণের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা, রোগ নিয়ন্ত্রণ, সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: ময়লা, আবর্জনাযুক্ত নোংরা স্থান যা জনস্বাস্থ্য তথা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য হুমকি এমন পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর পরিবার নিরাপদ খাদ্য আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে।