কান্না থামছে না ক্ষতিগ্রস্তদের
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৪ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
আগুন লাগা মোহাম্মপুরের কৃষি মার্কেটটির চারদিকে এখন শুধুই ধ্বংসস্তুপ। কোথাও পড়ে আছে পোড়া কাপড়, কোথাও পোড়া চাল। কোথাও মুদি ও মনোহারি সামগ্রী। পড়ে আছে কয়লা হওয়া ক্যাশ বাক্স। আর এসব পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপের পাশে দাড়িয়ে কাঁদছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। অনেকের সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী-সন্তান, পরিবার পরিজন। আগুন লাগার আগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্মৃতি খুঁজছেন কেউ কেউ। কোন কোন ধ্বংসস্তুুপের ভেতর থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। সেই ধোঁয়ার ভেতর থেকে জ্বলছে নিভু নিভু আগুন। এ আগুন যেন তাদের দোকানে নয়, হৃদয়ে লেগেছে। যে আগুনে কেড়ে নিয়েছে একেকটি পরিবারের বাঁচার স্বপ্ল।
গতকাল শুক্রবার পুড়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। মার্কেটটির দক্ষিনপাশে জুয়েলারী দোকানের সামনে দেখা যায় বিশাল জটলা। হ্যান্ড মাইকে একেকজনকে ডাকা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হচ্ছে সেখানে। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্তি করছেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করবো। তারপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মানবিক সহায়তা করার চেষ্টা করবো।
ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া মার্কেট জুড়ে এখন শুধুই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাহাকার। চারিদিকে এখনো পোড়া গন্ধ। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দোকানের মালামাল সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। কিভাবে ঘুরে দাড়াবেন সেই চিন্তা সবার চোখে মুখে। এদিকে, মার্কেটে আগুন লাগা দোকানে লুটের অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ স্থানীয় বিহারি ক্যাম্প ও আশপাশের লোকজন পুড়ে যাওয়া দোকানের মালামাল লুট করেছেন। সরজমিনে গেলে এমন চিত্র দেখা যায় এবং লুটপাটের লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া যায়।
মার্কেটটির উত্তর -দক্ষিনপাশের কলাপসিবল গেটের পাশেই নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। মার্কেটটিতে ছিলো মানুষে ঠাসা। এরই মধ্যে পুড়ে যাওয়া দোকনের মধ্যে কেউ কেউ কিছু খুঁজে চলেছেন। যদি কিছু মিলে। এছাড়া কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া মালামাল, কিংবা লোহার টুকরো কিংবা এমন কিছু মিলে কিনা সেটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
এর মধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তার কাছে নিজেদের আক্ষেপসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। সব কিছু শুনে মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নেয়ারও ইঙ্গিত দেন।
কৃষি মার্কেটের রতন জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ সনেট সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার সামনে রেখে ভালো বেচাকেনার আশায় গুদাম ও দোকানে রেখেছিলেন কোটি টাকার পণ্য। কিন্তু গতকাল শুক্রবার ফিরে এসেন দেখলেন শুধুই কয়লা। মোহাম্মদ সনেট বলেন, একটা মানুষকে দেখলেই বুঝা যায়। কালকে কোটিপতি ছিল আজকে কিছু নাই। আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকে বৃহস্পতিবার। এজন্য দুইদিনের মাল কিনে এনে রাখতে হয়। সব মালই আমরা গত বুধবার কিনে এনে ঠিক করে রেখে গেছি। কাগজপত্র, দরকারি কোনো কিছুই নিতে পারিনাই।
অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, ক্যাশে অনেক টাকা ছিল। দরকারি কাগজপত্র ছিল। এই মার্কেটে তাদের ৩০ লাখ টাকার ওপর বাকি আছে সেটাও মাইর যাবে। একদম পথে বসে গেছি আমরা।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগুনে পুড়লে তো কিছুই থাকে না। আমাদের কপালও পুড়েছে। যদি মার্কেটটা দ্রুত চালু হয় তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। নাহলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নাই। এ সময় সরকারের ত্রাণ নয়, বরং বঙ্গবাজারের মতো অস্থায়ী ভিত্তিতে দ্রুত মার্কেট চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ব্যবসায়ীদের এসব কথা শুনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বঙ্গবাজারের মতো অস্থায়ী ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও সর্বোচ্চ পর্যায়ে এখনো আলোচনা হয় নাই। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হলো তাদেরকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময় কৃষিমন্ত্রী আশ্বস্ত করেন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না সরকার।
ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ম মেনে তারা যাতে ঋণ নিতে পারে সেজন্য যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ্রকৃষি মার্কেটের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি, তিনি এ বিষয়ে অবগত আছেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।”
তিনি বলেন, ্রএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। আমাদের চোখের সামনেই এই বাজার গড়ে উঠছে। এত বড় একটা ক্ষতি! প্রায় পাঁচ-ছয়শো পরিবার একদম সর্বশান্ত হয়ে যাবে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে সহযোগিতা করবো।গ্ধ ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়ম কানুন মেনে তারা যাতে ঋণ নিতে পারে সেজন্য যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ ও ছোট বড় ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন দোকানের ছাই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ লোহার অ্যাঙ্গেল, পাইপ নিয়ে যাচ্ছেন। মুদি দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। এতে বিরক্ত ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সরিয়ে দিলেও কেউ সরছেন না। এদের বেশির ভাগই পাশের বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। মালামাল লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, আমরা মার্কেটের নিরাপত্তায় কাজ করছি। সব গেটে আমাদের পুলিশ সদস্যরা আছে। কেউ কোনো অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ে অন্তত সাড়ে ৫শ’ দোকান পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্সের (মিডিয়া সেল) গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে মার্কেটে ব্যাপক আগুন লাগে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে ১৭টি দমকল ইউনিট কাজ করে। এদিন সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস
এ আগুনে পুড়েছে শত শত মানুষের কষ্টে তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের দোকান। এমনই এক দোকানি বাবু বৈদ্য। পদ্মার ওপারে বাড়ি। বাড়ির সব কিছু বিক্রি করে পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছেন রাজধানীর বুকে। এসেই রাজধানীর কৃষি মার্কেটে প্রায় আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে দিয়েছেন দোকান। হঠাৎই আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে ফোনের শব্দে ভেঙে যায় ঘুম। ফোনের ওপাশ থেকে বলতে শোনেন মার্কেটে আগুন লেগেছে। সব ফেলে দৌঁড়ে এসেও বাঁচাতে পারেননি কোনো কিছু। ঘটনার পর পোড়া দোকানে দাড়িয়ে বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ করছিলেন বাবু বৈদ্যর মা সন্ধ্যা বৈদ্য। তিনি বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে দোকান করে দিয়েছিলাম সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। এখন কিভাবে বাঁচবো? কিভাবে ধার দেনা শোধ করবো? কোথায় থাকবো? কি খাবো?
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম সাগর বলেন, আমার দোকানে তিনজন কর্মচারী আছে। আমিও শেষ, কর্মচারীরাও শেষ। কী করণীয় আছে; কিছুই তো নাই আমার কাছে আর। আমার কাছে যদি ২০ লাখ টাকা থাকতো তাহলে আমি আবার কিছু করে বাঁচতে পারতাম। ১০ হাজার টাকাও নাই আমার কাছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা
সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর
বঙ্গোপসাগর অঞ্চল সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট
খুবির উৎকর্ষ সাধনে পাশে থাকবে ইরান
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের দাবি হরিরামপুর-শিবালয়বাসীর
গোয়ালন্দে সুইট হাট জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের
হঠাৎ কেন দোয়া চাইলেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া!
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে ফেলছে : শিক্ষা উপদেষ্টা
এবার ৯৭ বলে অপরাজিত ২০১ রিজভির
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক
বাংলাদেশী রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত, সমালোচনার ঝড়
ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরুকে নিয়ে জনগণের অসন্তোষ
ইসরায়েলে হামলার জবাবে এবার ইয়েমেনে বিমান হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র
কাপ্তাই লেকে জেগে ওঠা ভাসামান তীরে সবুজ ফসলের সমারোহ
বেনাপোলে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রীর টাকা ছিনতাই, ৩ দালাল আটক
ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করলেন বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসকরা
বাধা না থাকলেও গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদকে মানুষ নির্বাচনে আসতে দেবে না : আখতার হোসেন