দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় বেহাল দশা
১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় গতকাল শনিবার শীর্ষে ছিল ঢাকা। সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২১৯ নিয়ে রাজধানীর বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হয়ে পড়েছে। এ সময় ভারতের দিল্লি ১৯৭ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় ও ১৭৯ একিউআই স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোরের ছিল তৃতীয় স্থানে। প্রশ্ন হচ্ছে পরিবেশ দূষণে ঢাকার এই হাল কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় বায়ু দুষণের নানাকারণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দায়ী পুরোনো যানবাহন ও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন। গাড়ির নির্গমিত বায়ু পরীক্ষা করার মতো সরঞ্জাম বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে নেই। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ সরকারের দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতার কারণে ঢাকা প্রায়ই বায়ু দূষণে শীর্ষে অবস্থান করছে।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া, ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। সেগুলো হলো বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২ দশমিক ৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো—ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বেড়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।
রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের শিকার। এর মধ্যেই সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগহীনতা বায়ুদূষণের মাত্রা আরো বাড়িয়েছে এবং নাগরিক জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত আগস্টে সরকার বাণিজ্যিক যানবাহনের আয়ুষ্কাল সীমিত করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এর ফলে বহু বছরের পুরোনো হাজারো লক্কর-ঝক্কর গাড়ি সড়কে চলাচল অব্যাহত রাখার সুযোগ পেয়েছে। রাজধানীতে সে চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসব যানবাহনের ইঞ্জিন বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকার বায়ু দূষণ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, পুরোনো যানবাহন ও ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনই শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। জ্বালানি অসম্পূর্ণভাবে জ্বলায় পুরোনো যানবাহনগুলো আরো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে। গাড়িটি যত পুরোনো হবে, তত বেশি দূষণ সৃষ্টি করবে। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ফিটনেসবিহীন ও পুরোনো যানবাহনের সংখ্যা কমাতে হবে। অথচ বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ফিটনেস সার্টিফিকেটবিহীন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে দুই কোটিরও বেশি বাসিন্দার ঢাকা প্রায়শই সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে থাকছে।
চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ ৫৬৮০০০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না, যার অর্থ যানবাহনগুলো ফিটনেস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়নি। গত বছরের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৫০৮০০০ হাজার।
পরিবহন খাতের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, দেশে হাজারো অনিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে এবং সেসব যানবাহনের ফিটনেসের অবস্থা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কোনো ধারণাই নেই। তা ছাড়া বিআরটিএর ফিটনেস পরীক্ষাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ গাড়ির নির্দিষ্ট কিছু জিনিস যাচাই করার সরঞ্জামই বিআরটিএর কাছে নেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করার জন্য বিআরটিএর মাত্র একটি ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) রয়েছে এবং সেটিও পুরোপুরি কার্যকর নয়। ফলস্বরূপ ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার আগে প্রায় সব পরীক্ষা ম্যানুয়ালি করা হয়। অথচ বায়ু নির্গমন পরীক্ষা ম্যানুয়ালি করা যায় না। এর মানে তারা (বিআরটিএ) কোনো যানবাহনের দূষণ সৃষ্টির মাত্রা নির্ণয় করতে পারছে না।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অতিক্রম করার পর একটি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যায় এবং অনেক মালিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করেন না। যে যানবাহনগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না, সেগুলো আরও দূষণ সৃষ্টি করে। এই কারণেই পুরোনো যানবাহনের চলাচল বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত দূষণ আরো বাড়িয়েছে। সুতরাং, নীতিনির্ধারকরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শহরের বায়ুদূষণের জন্য দায়ী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার