ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
মান্না

সরকার পতনে আবারো রাস্তায় জনতার মিছিল হবে

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

সরকার পতনে আবারো ঢাকার রাস্তায় ‘জনতার মিছিল’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এই সংসদ কাজ করতে পারবে না। হতাশা ওদের মধ্যে, আমাদের নয়। আমাদের মানুষ বলছে, আপনারা বলেছেন আমরা ভোট দিতে যাইনি, নিরহ জনগণ সর্বাত্মক সমর্থন আমাদের জানিয়েছে। আমরা এখন মানুষকে বলছি, সাহস করে রাজপথে মিছিলে আসেন। দেখবেন এই ঢাকা নগর মিছিলে মিছিলে সয়লাব হয়ে যাবে, তখন আওয়ামী লীগের লোকদের খুঁজে পাবেন না। খুব বেশি দিন নেই, আমরা সেই লড়াই চালাচ্ছি।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনে’র উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের মধ্যে ওই নিয়ে (৭ জানুয়ারি) কোনো হতাশা নেই। ৭ জানুয়ারি তারা (আওয়ামী লীগ) কোনো ভোট করতে পারে নেই, ৭ জানুয়ারি সরকার পক্ষের কোনো অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরঞ্চ অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। আমাদের অবস্থা ভালো হয়েছে কারণ আমরা জেনেছি, ৯৫ ভাগ মানুষ আমাদের পক্ষে আছে, তারা লড়াই করবে, লড়াই করছে। আগামী দিনে সেই লড়াই সংগঠিত করে আমরা সামনের দিকে যাবো, আমরা জয়যুক্ত হবো, আপনাদের সবাইকে আমাদের সাথে চাই।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, বাইডেন (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডিন্ট) সাহেব উনাকে চিঠি লিখেছেন, অত গুলগুলা ভাব হবার দরকার নেই। ও বলেছে, তোমাকে এশিয়া প্যাসিফিকের সঙ্গে যুক্ত করে আমরা সম্পর্ক রাখতে চাই। তার মানে আমার কথামতো চলতে হবে এবং আমার টাকা (যেসব প্রকল্পে বিনিয়োগ অর্থ) দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু পিটার হাস (রাষ্ট্রদূত) বলেন, তারা বলছেন, ভোট কিন্তু ভালো হয়নি। আর এই যে এতো বেশি গল্প করেন, চামচামি-দালালি করেন, ভারত-রাশিয়া-চীন আমাদের পক্ষে আছে। কি রকম পক্ষে আছে বলেন তো। ভারত আর চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা, তিস্তা যে কখন কাকে দিয়ে দেয় এই ভয়ে চীনের দিকে তাঁকিয়ে থাকে ভারত, ভারতের দিকে তাঁকিয়ে থাকে চীন। আর শেখ হাসিনার সরকার নিজেরাও খুব চালাক-চতুর তো দুই দিকে খেলার চেষ্টা করে। আমরা বলছি, খেলতে খেলতে এই খেলা শেষ হয়ে যাবে।

বিদেশীরা ঋণের অর্থ শোধ করার তাগাদা দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে ঋণ করেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। এই টাকা শোধ করতে পারবে কত দিন? শোধ দেবার সময় হয়ে গেছে, এখন সবাই টাকা চাচ্ছে। আমেরিকার-ইউরোপ ওতো চাপ দেয়নি কিন্তু চীন-রাশিয়া বলেছে, তোমার সাথে দোস্তী বন্ধুত্ব যাই থাকে, টাকা দাও।

মান্না বলেন, হতাশ হবার মতো কিছু নেই। হতাশ ওরা হবে কারণ ওরা ভোট করে হতাশ। কারণ এরকম ভোট দুনিয়ার কেউ স্বীকার করেনি। ওরা ভোট করে হতাশ কারণ পুলিশ বুঝেছে, ব্যুরোক্রেসি বুঝেছে, পার্টি বুঝেছে এই ভোট ভোট নয়। এই ভোট করবার পরে জোট ভেঙেছে, এই ভোট করবার পরে নিজের দলের মধ্যে আম-জাম-ডাব গাছ সব এক, যেটা নৌকা, সেটাই ঈগল, সেটাই আবার ট্রাক, দল আছে আর?

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, এখন বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নৌকা প্রতীকে করবে না। সেজন্য স্থানীয় সরকারে প্রতীক তুলে দেয়া হচ্ছে। কেনো? আপনারা যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছেন তখন আমরা বার বার বলেছিলাম এটা গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে সহিংসতাকে নিয়ে যাবে। এখন তারা তুলে দিচ্ছে প্রতীক। কারণ নৌকা এখন মার্কেট পাচ্ছে না। এতটা ঘৃণিত প্রতীকে পরিণত হয়েছে যে, নৌকা থাকলে মানুষ এখন ভোট কেন্দ্রে যাবে না। তাই তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি, আমাদের দেশের পরিবেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অনতিবিলম্বে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বিল পাস করুন, সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। তারা গায়ের জোরে ক্ষমতা ধরে রেখেছে, তাদের জনভিত্তি নেই। সেই নির্বাচনে (৭ জানুয়ারি) প্রমাণিত র‌্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, টাকা পয়সার ছড়াছড়ি, ভারতের মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, এদেশীয় ভারতীয় দালাল-এজেন্ট তাদের প্রচার-প্রচারণা সব মিলিয়ে তারা ১০% ভোটার ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি। মানুষ বলে এই সরকারকে ৫% সরকার, মান্না ভাই যেকথা বলে থাকেন যে, এটা একটা ফোরটোয়েন্টি সরকার।

নুর বলেন, সরকারকে বলতে চাই, এই ৫% জনসমর্থন নিয়ে ৯৫% গণতন্ত্রকামী জনতার নেতৃবৃন্দকে আপনারা কারাগারে আটকিয়ে রাখতে পারবেন না। আপনারা যদি কারাগারে আটকিয়ে রাখেন আপনারা করুণ পরিণতি নিয়ে আসবেন, খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দুয়ারে পাঠিয়েছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদসহ আমাদের ছাত্র নেতা পীর আমিন মোল্লা, মাওলানা মামুনুল হক, জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, জেলখানায় অমানবিক আচরণ করছেন তাদের সাথে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর বলেন, চিন্তা করতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটা হলে একজন নারীর স্বামীকে আটকিয়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এই সাহস হয় কিভাবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা যা ইচ্ছা তাই করবে! কিন্তু তারা করছে তো? তাদের বাধা দেয়ার কেউ নেই। এটা শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয়, এরকম ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, আমরা রিসেন্ট পড়াশুনা শেষ করে এসেছি, আমরা তো দেখিছি, হলের প্রোভোস্ট, হাউজ টিউটর, শিক্ষক কার্যত তারা ছাত্রলীগের নেতাকে সালাম দিতো, এরকম একটা পরিবেশ।
সংগঠনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংক, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার রাশেদ প্রধান, বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু, অন্যান্য সংগঠনের গিয়াস উদ্দিন খোকন, মিয়া মো. আনোয়ার, সারোয়ার রহমান সরকার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার