নির্বাচনী ইশতেহার মনিটরিংয়ে সেল দরকার
২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ এএম
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারের ওপর ভিত্তি করে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে থাকে। আর এই ভোটে বিজয়ী হয়েই ক্ষমতায় আসে দলগুলো। সেজন্য সরকার গঠনের পর নির্বাচনী ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা মনিটরিং করা দরকার। সেখানে রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, বৃদ্ধিজীবী ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ থাকবে। এজন্য ইশতেহার মনিটরিংয়ে সেল দরকার। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘আপকামিং দ্যা ইকোনমিক মেনিফেস্টো অব দ্যা আওয়ামী লীগ: ট্রেন্ডস এন্ড চ্যালেঞ্জস ফর টুমোরোস বাংলাদেশ’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেনের সভাপতিত্বে সকালের অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবসর) আব্দুস সালাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। বিকালের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী াবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী ও শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, দেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ আসতে শুরু করেছে। সার্বজনীন পেনশন আইন হয়েছে। দেশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে। অনেকেই বলেছিল আমরা শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে কিন্তু তা হয়নি। অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও সংস্থা আমাদের ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছে। দেশে যেভাবে নতুন বিনিয়োগ আসছে তা ভালো দিক। বিশেষ করে জার্মান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরব বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসছে। এটি ধরে রাখতে সবাইকে কাজ করতে হবে। নির্বাচনী যে ইশতেহার দেওয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। দেশে কাজ করতে গিয়ে যে উন্নয়ন হচ্ছে সেখানে কিছু বাধা আছে তা অতিক্রম করতে পারবো বলেই আমাদের বিশ্বাস। ড. মশিউর রহমান বলেন, বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের চাকরি না হলে শিক্ষা বেশি সামনে এগিয়ে যাবে না। কম্পিউটার ও আইসিটির ছাত্ররা কাজে ততটা দক্ষতা দেখাতে পারছে না। শিক্ষায় আমরা অনেক এগিয়েছি। স্কুলের অবস্থানটা (দূরত্ব) গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সহজেই শিক্ষার্থীরা সেখানে যেতে পারে। বাড়ির কাছাকাছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় দেশে নারী শিক্ষার হার বাড়ছে। শতভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে যায়। আমার মনে হয় উপরের দিকে শিক্ষার কোয়ালিটি কমেনি। তিনি বলেন, ইশতেহারে আর্থিক সংস্কার বলা হয়েছে, এ বিষয়ে সম্পূর্ণ দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সরকার সেখানে হাত দিবে না। ব্যবসায়ীরা গাফিলতি ও পারিবার্শ্বিক বিষয়ে ঋণ খেলাপি হলে ছাড় দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে একটি সামগ্রিক আলোচনা। এখানে কোন দুর্বলতা আছে কিনা বা বিষগুলো যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্ব দিয়েছে কি না সেটা দেখা। আলোচনা থেকে আমার মনো হলো দেশের মানুষের যে আকাঙ্খা বা চিন্তা এটা কম বেশি এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার এটা প্রতিশ্রুতি সরকার কী করবে করতে চায়। তার সাথে মানুষ কি চায় সেটাকেও মনে রাখতে হবে। মানুষের ইচ্ছা আকাঙ্খা সেইগুলো এখানে (নির্বাচনি ইসতেহার) আনার চেষ্টা করতে হবে। ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, গত তিন বছরে দেশে ডাকাতি হয়েছে। বৈশ্বিক চাপে রেখে জ্বালানি খাতে ১৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে। বর্তমানে সমস্যা থেকে উত্তরণ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ ভালো করেছে। অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা যে ইশতেহার দিয়েছিলাম মানুষ তা গ্রহণ করেছে। এজন্য এটি মনিটরিং করা দরকার। সে অনুযায়ী কাজ কতটুকু করা সম্ভব হলো। এনিয়ে বিআইডিএস একটি গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। সেখানে উন্নয়নে সকল কিছু উঠে আসবে। কেননা আমরা একেকজন একটু একটু করে যা জানি তাই বলি। অথছ কি পরিমাণ কাজ হয়েছে তা মূল্যায়ন করা দরকার। তৌফিক ই ইলাহি বলেন, দেশে বেশি বিনিয়োগ করা দরকার মায়েদের ওপর। কেননা মায়ের ওপর বিনিয়োগ না করলে আগামীদিনে যে শিশু আসবে সে শক্তিশালী হবে না। আমরা সমৃদ্ধ জাতি পাবো না। শেখ হাসিনা সাহসের সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই দেশ এগিয়েছে। এটি আরো অগ্রসর করে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে হবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর এমএম আকাশ বলেন, ইশতেহার হচ্ছে একটি অঙ্গীকার। এটি দেখে মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেয়। সেখানে জাতির জন্য নেওয়া লক্ষ্য-উদ্দেশ্যগুলো সুনির্দিষ্ট কিনা। এটি কত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে এসব প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি গবেষণা আকারে করা হয়েছে। ইশতেহার কোন ফানুস নয় বলেও প্রধান মন্তব্য করেছিলেন। এটি অনেক ভেবেচিন্তে করা হয়েছে। এটি হচ্ছে জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার। ইশতেহারের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণ দরকার বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ মো. সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ইশতেহার শুধু কেন নির্বাচনের সময় অলোচনা হবে বরং প্রতিবছরই এটির কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা নিয়ে পর্যালোচনা করা দরকার। এজন্য মনিটরিং সেল করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল বলেন, ইশতেহারের বিষয়গুলো নিয়ে আরো বিশ্লেষণ করতে হবে। কথা অনুযায়ী কাজ কতটুকু হলো সেটি দেখতে হবে। অনুষ্ঠানের প্রথম সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি প্রভাব হ্রাস এবং বৈদেশির বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আর্থিক খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা শক্তিশালি করার জন্য রাজস্ব আহরণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ১ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুদ্রা সরবরাহ, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রধান হাতিয়ার নির্ধারণ করা হয়েছে নীতি ও সুদ হার ব্যবহার। আমাদের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। যা বৈদেশিক মূদ্রা সরবরাহের অনিশ্চয়তা হ্রাস করবে। ব্যাংক ও আর্থিক খাত পরিচালনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তি অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ এর চারটি স্থম্ভ। এটা হলো স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট বাংলাদেশের অর্জনে জ্ঞান সম্পন্ন প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতি, যান্ত্রিক উৎপাদন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অগ্রসারগামী দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা