টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে ‘বাঁশ থেরাপি’
২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যায় ৩ ঘণ্টায়। বিকেলেও অনলাইনে অন্যান্য রুটের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায় অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে। একই অবস্থা উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রেও ঘটেছে। রেলওয়ে সুত্র জানায়, স্টেশনে স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের দুর্ভোগ কমাতে এবারও সব অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। অন্যদিকে টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে গতবারের মতো এবারও ৪টি স্টেশনে বাঁশ বেঁধে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশের অস্থায়ী পথ তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগ। তবে এই উদ্যোগ গতবারের মতো এবারও শেষের দিকে ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, রেলে সক্ষমতা বাড়ানোই মূল কথা। অন্তত চাহিদার কাছাকাছি জোগানের ব্যবস্থা করতে হবে রেলওয়েকে। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিনা টিকেটে যাত্রী ঠেকাতে বাঁশ থেরাপির বিকল্প কিছু নেই।
আগামী ৩ এপ্রিল ভোর ৬টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ট্রেনে ঈদ যাত্রা। ঈদ স্পেশাল ট্রেনসহ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫০০টি। গতবারের চেয়ে এবার আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ হাজার ৭২২টি। গতকাল রোববার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গতবারের মতো এবারও বাঁশের এই অস্থায়ী পথ তৈরি করা হচ্ছে। পাঁচটি পথ রয়েছে এই অস্থায়ী পথ। প্রথম পথটি গিয়ে মিলেছে কাউন্টারের সামনে। যেখান থেকে যাত্রীরা ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে দেওয়ার আগে স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে পারবেন। তারপরের তিনটি পথ দিয়ে মূলত যাত্রীদের প্রবেশ করতে হবে স্টেশন অংশে। আর পঞ্চম পথটি তৈরি করা হয়েছে, যেসব যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে ঢাকায় প্রবেশ করবেন তাদের জন্য।
যারা টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারা নির্বিঘ্নে যেন ট্রেনে চড়তে পারেন এবং কেউ যেন বিনা টিকিটে প্ল্যাটফর্মে যেতে না পারেন সেজন্যই এই আয়োজন। মূলত বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব অস্থায়ী পথ বোটলনেক সিস্টেমে (একাধিক পথ একসঙ্গে এসে মিলিত হওয়া) ৩টি থেকে ২টি প্রবেশ পথে গিয়ে মিলেছে। এসব পথের মুখেই চেক করা হবে যাত্রী ও সহযাত্রীদের টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এজন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে সব যাত্রীকে ভ্রমণকালে টিকিটসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করেছে রেলওয়ে। একইসঙ্গে সময় নিয়ে যাত্রীদের স্টেশনে আসতে বলা হয়েছে।
এছাড়া স্টেশনের শুরুতেই বসানো হবে র্যাব-৩, বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী (আর.এন.বি) এবং পুলিশের কন্ট্রোল রুম। তারপরেই রয়েছে বাঁশের তৈরি পথ। এখানেই যাত্রীদের টিকিট চেকিং করা হবে। একই ব্যবস্থা রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন ও জয়দেবপুর জংশনেও।
জানতে চাইলে ঢাকা রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, টিকিটধারী যাত্রীরা সুশৃংখলভাবে, নিরাপদে, নির্বিঘ্নে যেন স্টেশনের প্রবেশ করতে পারেন এবং টিকেটবিহীন যাত্রীরা যেন প্লাটফর্মে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য এই ব্যবস্থাটি তৈরি করা হয়েছে। আমাদের এখানে তিন জায়গায় চেকিং কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। শুধু যাদের টিকিট রয়েছে প্রবেশমুখে তাদেরকে চেক করে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, এবার আমরা মোট চারটি স্টেশনে বাঁশের অস্থায়ী পথ তৈরি করছি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন ও জয়দেবপুর জংশন।
বাঁশের তৈরি এই অস্থায়ী পথ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েট অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসে তত বাড়ি ফেরার যে জনস্রোত রেলওয়ে স্টেশনে বাড়তে থাকে। শেষের দিকে বাঁশের তৈরি অস্থায়ী পথ এখানে টিকবে না। আর শেষের দিকে একটু ছাড় দেওয়ার প্রবণতাও থাকে। যেহেতু গণপরিবহনের অপ্রতুলতা আমাদের দেশে এখনও আছে। তাই মানবিক দিক থেকে এই ছাড়া দেওয়া হয়।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা সব আন্তঃনগর ট্রেনের ডে-অফ (সাপ্তাহিক ছুটি) বাতিল করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব ট্রেনের কোনো ডে-অফ থাকবে না। ঈদের পরে যথারীতি সাপ্তাহিক ডে-অফ কার্যকর থাকবে। এছাড়া ঈদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না।
ঈদুল ফিতরে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা- দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে ৫ দিন চালানো হবে। কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে ৩ দিন চলাচল করবে। ঈদ স্পেশাল (১৫ ও ১৬) জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে ঈদের আগে ৭-৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিন এবং ঈদের পরের দিন থেকে ৩ দিন চলাচল করবে। এছাড়া শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১১ ও ১২) ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার; শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১৩ ও ১৪) ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার সাহাদাত আলী বলেছেন, ঈদে সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জংশন স্টেশন এবং সিগন্যাল কেবিনে কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের তদারকির মাধ্যমে ট্রেন অপারেশন পরিচালনা করা হবে। ঈদে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ৮৬টি (পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৫০টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৩৬টি) বিজি যাত্রীবাহী কোচ সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২৪৮টি (পূর্বাঞ্চল ১৩২টি ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ১১৬টি) লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ট্রেন ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
১৪ হাজার টিকিট বিক্রি : আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। এসময় বিক্রি শুরু হয় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট। গতকাল বিক্রি হচ্ছে ঈদ যাত্রার দ্বিতীয় দিনের (৪ এপ্রিল) টিকিট। সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হবে দুপুর ২টায়। গতকাল ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সকাল ১১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের ১৪ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এই অঞ্চলের মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট প্রিন্ট করা হচ্ছে না। এবারে প্রথম ওটিপি সিস্টেম চালু করা হয়েছে টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে। আগের ঈদগুলোতে ৫ দিনের টিকিট বিক্রি করলেও এবারই প্রথম ৭ দিনের টিকিট বিক্রি করছে রেলওয়ে। ঈদ উপলক্ষ্যে ঘরমুখী মানুষের এই ট্রেন যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গতকাল ২৪ মার্চ। যাত্রীদের সুবিধার্থে শতভাগ টিকিট এবার অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে।
ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৬ মার্চ; ৬ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৭ মার্চ; ৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৮ মার্চ; ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৯ মার্চ এবং ৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ৩০ মার্চ। এছাড়া যাত্রী সাধারণের অনুরোধে ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন