গ্যাংয়ে জড়িয়ে সর্বনাশ
২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
চট্টগ্রামে গ্যাংয়ে জড়িয়ে সর্বনাশের পথে হাঁটছে কিশোরেরা। বড় ভাইদের প্রশ্রয়ে তারা জড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর সব অপরাধে। খুন, ধর্ষণ. গণ-ধর্ষণ, জায়গা দখল, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, অস্ত্রবাজি সব অপকর্মে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পর্ণোগ্রাফি ও সাইবার অপরাধেও নাম আসছে কিশোরদের। বিপথগামী এসব উঠতি বয়সীদের সরাসরি মদত দিচ্ছেন সরকারি দলের কতিপয় নেতা ও কাউন্সিলর।
এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের এসব কিশোরদের দলে ভিড়িয়ে অপকর্মে নামিয়ে দিচ্ছেন বড় ভাইয়েরা। মহানগরীর অর্ধশত এলাকায় দেড় হাজারের বেশি কিশোর বিভিন্ন গ্রুপের বিভক্ত হয়ে নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের হিসাবে নগরীতে ছোট বড় মিলিয়ে কিশোর গ্রুপের সংখ্যা দুই শতাধিক।
র্যাব-পুলিশের নানামুখি তৎপরতায়ও কমছে না কিশোর অপরাধীদের দাপট। গত সাত মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের হাতে গ্রেফতার হয়েছে প্রায় দুইশ’ কিশোর। বেপরোয়া কিশোর অপরাধের মামলা বেড়েছে আদালতেও। চট্টগ্রামে বিভিন্ন আদালতে দুই হাজার ২৩২টি মামলার বিচার চলছে। এসব মামলার বেশির ভাগ আসামি কিশোর ও উঠতি যুবক।
সংশ্লিষ্ট জানান, রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সরকারি দলের কতিপয় নেতা, কাউন্সিলর, শীর্ষ সন্ত্রাসী, পেশাদার চাঁদাবাজ নিজেদের প্রভাব এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিশোরদের দলে ভিড়িয়ে নিচ্ছে। তারা নামে বেনামে কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে জমি দখল, চাঁদাবাজি করে আসছে। এসব অপকর্মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের একটি অংশ ব্যয় করা হচ্ছে গ্যাংয়ের সদস্যদের পেছনে। এর ফলে আর্থিক লোভের কারণে কিশোরদের বিপথগামী হওয়া বেড়েই চলছে। কিশোর বয়স থেকে অপরাধে জড়িয়ে এক এক জন বড় অপরাধী হয়ে উঠছে। আর এসব গ্যাংয়ের নেপথ্যে সরকারি দলের প্রভাবশালীরা থাকায় পুুলিশও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে কিশোর অপরাধীদের বেপরোয়া দাপট বেড়েই চলছে।
২০১৮ সালে নগরীর জামাল খান সড়কে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসফারকে দিন দুপুরে গুলি করে খুনের ঘটনায় কিশোর গ্যাং আলোচনায় আসে। এর পরের বছর নগর পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করে। এর পর থেকে গত ছয় বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত বলে জানায় পুলিশ। এর মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। বিভিন্ন সময়ে কিশোর গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-পুলিশ। বিকেলে আড্ডায় হানা দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয় কিশোরদের জটলা। তবে এসব অভিযানে কোন কাজ হয়নি। আপরাধীদের অপতৎপরতা বাড়তেই থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে কিশোর অপরাধ নিয়ে বিশেষভাবে মাঠে নেমেছে নগর পুলিশ। সম্প্রতি নগর পুলিশের বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক অস্থিরতা, কিশোর গ্রুপের উত্থান ও প্রসারের কারণ নিয়ে এ জরিপ প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে স্কুলের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কিশোরদের বিরাট অংশ এসব গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। ক্লাস ফাঁকি রোধ করা গেলে কিশোরদের বিপথগামী হওয়া কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যাবে বলেও জরিপে উল্লেখ করা হয়।
নগরীতে নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। আর ক্লাস ফাঁকি দেওয়া অনেক শিক্ষার্থীই জড়িয়ে পড়ছে গ্যাং কালচারে। সেসব গ্যাংয়ের হাত ধরেই শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধ, পর্নোগ্রাফি ও সাইবার অপরাধে। অভিভাবকদের অগোচরে তাদের এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পেছনে কাজ করছে কথিত বড় ভাইদের প্ররোচনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশেরও কম শিক্ষার্থী শতভাগ ক্লাসে উপস্থিত থাকে। ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী মোট ক্লাসের অর্ধেকেরও কম ক্লাসে উপস্থিত থাকে। ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ৩০ শতাংশেরও কম ক্লাসে উপস্থিত থাকে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যাদের অনেকে কিশোর অপরাধে জড়াচ্ছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীরা, বিশেষভাবে ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা কিংবা নেতা ও কথিত বড় ভাই নামধারী কিশোরচক্র নিয়ন্ত্রণকারীদের সংস্পর্শে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
তাদের প্রশ্রয়ে স্কুল-কলেজে না গিয়ে তাদের মধ্যে অপরাধ, হিরোইজম, আধিপত্য বিস্তার, পর্ণোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, অবাধ যৌনতা ও গ্যাং কালচারে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। তাদের আচরণ ও চিন্তার জগত নেতিবাচকভাবে পাল্টে যাচ্ছে। ক্লাস চলাকালীন অনেক শিক্ষার্থীকে নগরীর বিভিন্ন পার্ক, বিনোদন স্পট, আলো-আঁধারি রেস্তোঁরা, সিনেমা হল, মার্কেট ও শপিং মলে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে। জন্মদিন কিংবা বিভিন্ন দিবস উদ্যাপনের নামে ‘বিকৃতি’র চর্চা চলছে। ক্লাস ফাঁকি দেওয়া এসব শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই আলাদা-আলাদাভাবে কিংবা সংঘবদ্ধ হয়ে সাইবার জগত তৈরি করে দিয়েছে। অনলাইনভিত্তিক ভিডিও গেমস, হরর মুভি, অনলাইনভিত্তিক জুয়ার অ্যাপসে আসক্ত হচ্ছে। সিগারেট, মাদকে আসক্ত হচ্ছে অনেকেই এবং টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িত হচ্ছে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের মাদক পরিবহণ কিংবা কেনাবেচায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন