ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
উত্তরা-বিমানবন্দর-মিরপুর এলাকায় ফুটপাতের বেহাল দশা

রাজধানীর ফুটপাত উধাও

Daily Inqilab রফিক মুহাম্মদ ও মাসুদ পারভেজ

২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম

রাজধানীর নাগরিকদের স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলার সুবিধার জন্য সড়কের দুই ধারে তৈরি হয়েছে ফুটপাত। মহানগরীর ফুটপাত দিয়ে এখন আর পথচারীদের হাঁটার কোন উপায় নেই। ফুটপাত দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে হকাররা।
এখন অনেক এলাকায় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সড়কের সঙ্গে ফুটপাতকে মিলিয়ে ‘খেয়ে’ ফেলা হয়েছে। রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে উন্নয়নে নামে সড়ক আর ফুটপাত একাকার করে ফেলা হয়েছে। উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের দু’ধারে ফুটপাত রাখা হয়নি। ফলে পথচারীরা যে এতোদিন ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতেন তা করতে পারছেন না। মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলার পথ দিয়েই হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনকারীদের অন্যতম স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, একটি বাসযোগ্য পরিচ্ছন্ন নগরীর জন্য নগরবাসীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য ফুটপাত থাকা জরুরি। কিন্তু মহানগরী ঢাকার প্রায় সব ফুটপাতই হকারদের দখলে। অনেক জাগায় নির্মাণ কাজের জন্য ফুটপাত ভেঙে ফেলে রাখা হয়েছে, কোথাও নির্মাণ সামগ্রী রেখে ফুটপাত দখল করে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকায় ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ নগরবাসীদের নেই। পথচারীরা ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এতে যানজট যেমন বাড়ে তেমনি দুর্ঘটনাও বৃদ্ধি পায়। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হলে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জরুরি।

রাজধানীর উত্তরা থেকে সদরঘাট, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি সর্বত্রই ফুটপাত হকারদের দখলে। পথচারীদের চলাচলের কোন সুযোগ নেই। ফুটপাতের কোথাও সারি সারি দোকান, কোথাও নানা ধরনের নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ, কোথাও দীর্ঘদিন খোঁড়াখুড়ি করে ফেলে রাখা হয়েছে, আবার কোথাওবা ফেলে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত যানবাহন। এ ছাড়াও যেখানে সেখানে ফুটপাতের উপর হুটহাট উঠে যায় মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো ফুটপাতে প্রাইভেট কারও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যেসব এলাকায় ফুটপাত নিয়মিত দোকানিদের দখলে থাকে সে সব এলাকায় চলে চাঁদাবাজি, মাসোহারা। এমনি বিশেষ কায়দায় ইজারা দেওয়ার ঘটনাও আছে। এসব চাঁদা আদায়ে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধেও।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন রাজধানীর ফুটপাতগুলো বেদখলে থাকায় শহরে যানজট এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে। পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনা অনেক কমে। এই ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু রাজধানীর ফুটপাত বেদখলে থাকায় তা দিয়ে পথচারীদের চলার কোন অবস্থা নেই। ঢাকা শহরের ফুটপাথগুলোয় পা ফেলার জায়গা নেই। শহরের সব ফুটপাত দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ, শিক্ষার্থী, নারী ও শিশুরা। পথচারীদের তা ব্যবহার করার সুযোগ ও উপায় নেই। চলতে গেলেই সব সময় বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। নাগরিকদের অবাধ যাতায়াতের সুবিধার জন্য ফুটপাত মেরামত করার মাধ্যমে হাঁটার উপযুক্ত করা প্রয়োজন। ফুটপাতকে নাগরিকদের ব্যবহার উপযোগী করলে এ নগরীর যানজট এবং দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ফুটপাত দখল করে নিয়মিত বসছে অস্থায়ী দোকান। সকালে বসা দোকানগুলো চলে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও সড়ক দখল করে পসরা সজিয়ে বসে হকাররা। চলে মধ্যরাত অবধি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নিয়মিত চিত্র এটি। মাঝে-মধ্যে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে চালানো হয় অভিযান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। দিন শেষে আবার দখল হয়ে যায়। এ ছাড়া ফুটপাত ও সড়ক দখল করে রাখা হয় বিভিন্ন যানবাহন। দুই সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাতের মধ্যে ১০৮.৬০ কিলোমিটারই প্রভাবশালীদের দখলে। এ ছাড়া নগরীর দুই হাজার ২৮৯.৬৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫৭২.৪২ কিলোমিটারে বসছে পণ্যের পসরা। কোথাও অবৈধ স্থাপনার কারণে, কোথাও বা বিভিন্ন মাল রেখে দেওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েন পথচারীরা। ফুটপাতের পরিবর্তে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে হাঁটতে হয় পথচারীদের। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, সারা দেশে দুর্ঘটনায় নিহতের ৪৪ শতাংশ পথচারী এবং শুধু ঢাকায় দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ।

জানা গেছে, শুধু গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকায় ফুটপাত দখল করে ১২ শতাধিক দোকান বসে। এসব দোকান থেকে সর্বনিম্ন ১০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। মাসে দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি টাকা। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণা অনুযায়ী, দুই সিটি করপোরেশনে ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে বছরে দুই হাজার ১৬০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়।

ডিএসসিসি সড়ক ও ফুটপাতের ওপর দোকান ও হকার উচ্ছেদের মাধ্যমে হাঁটার পথ দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে লাল, সবুজ ও হলুদ তিন ভাগে ভাগ করেও হকারমুক্ত করতে পারেনি। অন্যদিকে ফুটপাতে পথচারীদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে ও চাঁদাবাজি বন্ধে ডিএনসিসি স্ট্রিট ভেন্ডার ব্যবস্থাপনা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চলমান প্রক্রিয়া। তবে একদিক দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হলে অন্যদিক দিয়ে আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। এলাকাকেন্দ্রিক স্ট্রিট ভেন্ডার নিয়োগ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হকারদের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। সেটি এখনো পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে। কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

হকারদের দখলে গুলিস্তানের ফুটপাতগুলো এমনভাবে ঢেকে গেছে যে, পথচারীদের জন্য হাঁটার জায়গা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। পুলিশের সহায়তায় মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও অভিযান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার পুরনো চেহারায় ফেরে এই এলাকা। ২০১২ সালে হাই কোর্ট ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে আদেশ দিয়েছিল। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে এক যুগ আগে হাই কোর্ট আদেশ দিলেও তা প্রতিপালনের কোনো নামগন্ধই নেই। জিরো পয়েন্টের পর পীর ইয়ামেনী মার্কেট এলাকা থেকে ফুটপাত ও সড়কে হকাররা নির্বিঘ্নেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। একই অবস্থা গোলাপশাহ মাজার, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে নর্থসাউথ রোডের শুরু পর্যন্ত। কোথাও কোথাও রাস্তার অর্ধেকই দখল করে নিয়েছেন হকাররা। এরপর সিদ্দিকবাজার, আলুবাজার, সুরিটোলা, নয়াবাজার, মালিটোলা হয়ে রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত সড়কের পাশের দোকানগুলোর মালপত্র, মাল ওঠানো-নামানোর গাড়িও দিনের বেশিরভাগ সময়ই সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে রাখে।

রাজধানীর নিউ মার্কেট ও বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতে চলাচল কেবলই ক্রেতা আর বিক্রেতার। কারণ এই দুই এলাকার ফুটপাতে সাধারণ পথচারীদের হাঁটাচলা করার সুযোগ নেই। সবই বেদখল দোকানে। প্রায় সাত হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতে রয়েছে আড়াই হাজারের মতো। অভিযোগ রয়েছে, এসব দোকান থেকে স্থানীয় কাউন্সিলর, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক নেতা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও হকার্স নেতারা চাঁদা আদায় করছেন। থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্য এই এলাকায় নিজস্ব নির্দিষ্ট কিছু লোকের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিউ মার্কেট এলাকায় প্রায় ২০০ জন লাইনম্যান এসব চাঁদার টাকা তোলেন। আর বায়তুল মোকাররমের ফুটপাত থেকে ১৫০ জনের মতো লাইনম্যান প্রতিদিন চাঁদা তুলে পৃষ্ঠপোষকদের মাঝে ভাগবণ্টন করে দেন। এই দুটি এলাকায় তিন কিলোমিটার সড়ক ঘিরে জমে উঠেছে ফুটপাতের ব্যবসা। এসব রাস্তা স্থানীয় নেতা ও পুলিশের ভাগ করে দেওয়া। দুই শিফটে দুজন করে ব্যবসা করেন। তবে কিছু জায়গায় এক শিফটে ব্যবসা চলে। সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লাইন খরচ দিতে হয়। সূত্রগুলো জানায়, নিউ মার্কেট ও বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাত, সড়ক এবং অলিগলির রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে সেখান থেকে মাসের পর মাস চাঁদা নিচ্ছেন হকার শ্রমিক, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা। নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই এলাকার ফুটপাতের চাঁদার ভাগ চলে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়। বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, এসব এলাকার চাঁদার টাকা যায় বিশেষ গাড়িতে। গাড়ি এসে চাঁদার টাকা নিয়ে যায়।

রাজধানীর শ্যামলী, আদাবর ও মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, টাউনহল, কৃষি মার্কেট, তাজমহল রোড ও লিংক রোড এলাকায় কোনো ফুটপাতেই পথচারীদের হাঁটার কোনো উপায় নেই। ফুটপাতের ওপর বসানো হয়েছে সারি সারি চা-শিঙাড়ার দোকান, ফল, সবজি ছাড়াও নানা রকমের ভ্রাম্যমাণ দোকান, জুতা দোকান ও নার্সারি। এ ছাড়া মূল সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয়েছে, রাখা হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, ময়লার স্তূপ। এ ছাড়া রয়েছে ছিন্নমূল মানুষের পলিথিনের ছাপরাঘর, রিকশা-ভ্যানে দোকান। ফলে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ভিড়ের মধ্যে মূল সড়কে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। মৌচাক-মালিবাগ হয়ে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত ফুটপাতেও রয়েছে ২শতাধিক দোকান। দৈনিক বাংলার মোড় থেকে মতিঝিল শাপলা হয়ে মধুমিতা সিনেমাহল পর্যন্ত এলাকার ফুটপাতেও রয়েছে সাড়ে ৩শত দোকান। কথা হয় মতিঝিলের ফুটপাতের ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু লাইন খরচ দিয়েই ব্যবসা করা যায় না। এখানে পজিশন নিতে পুলিশ সদস্যদের নির্ধারণ করা ব্যক্তি এবং আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণকারীদের দিতে হয় বড় অঙ্কের টাকা। পজিশনের টাকা কম হলে সেই জায়গাটি আরেকজনকে দিয়ে দেওয়া হয়।

মতিঝিলের আরেক ব্যবসায়ী সুমন জানান, শাপলা চত্বর এলাকায় একটা চৌকি ভাড়া নিলেও তার বিল আসে মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এই ব্যবসা কন্ট্রোল করেন আড়ালে থাকা নেতারা। তারা কখনো সামনে আসেন না। তবে কারা কি করছেন সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা ব্যবসা করতে পারছি এটাই বড় কথা। ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে খেয়ে পরে চলতে পারছি এটাই সব, কে টাকা নিল, সেটা দেখার বিষয় আমাদের না।

নিউ মার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসায়ী রকিবুল জানান, নিউ মার্কেটের ফুটপাতের ব্যবসা তো সিটি করপোরেশন হালাল করে দিয়েছে। তারা এর জন্য ইজারা দেয়। এ ছাড়া মোটরসাইকেল রাখার জন্য সিটি করপোরেশনের নামে রিসিপ্ট দেওয়া হয়। এসব দেখে তো মনে হয় সিটি করপোরেশনও চাঁদার কোটি কোটি টাকার ভাগ পায়। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণা অনুযায়ী, দুই সিটি করপোরেশনের ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে বছরে ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। যা চলে যায় দখলবাজ সিন্ডিকেটের পকেটে। সরকারের কোষাগারে একটি পয়সাও যায় না। এই বাণিজ্য ঘিরে প্রায়ই খুন, হামলা, সংঘর্ষের ঘটনাও কম না।

বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে কথা হয় পথচারী ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কারণে কখনো কখনো পুরো রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়। চলাচল করতে কষ্ট হয়। তখন মূল সড়ক দিয়ে বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয়। এতে যানজটও বাড়ে আবার সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটে। রাজনৈতিক নেতা, একশ্রেণির অসাধু পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় চলছে ফুটপাত ও রাস্তা ভাড়ার এই মহাবাণিজ্য। সেটা দেখার কেউ নেই।

রাজধানী বিমানবন্দর মহাসড়কের ফুটপাতের বেহাল দশা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাত বিহীন এ সড়কে চলাচল করছে পথচারীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর গোলচক্কর মসজিদের পশ্চিম এবং উত্তর পূর্ব পাশের সংস্কারবিহীন ফুটপাত দখল করে রেখেছে সেখানকার হকাররা। সেখান থেকে আর একটু সামনেই রয়েছে রেপিডএ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যার-১ কার্যালয় ও এপিবিএন হেডকোয়ার্টার। সরেজমিনে এপিবিএন হেডকোয়ার্টারের পাশে গিয়ে দেখা যায় সেখানকার ফুটপাতের উপর জীবন্ত ঘাস জন্মেছে। উড়াল সড়ক ও লুপ তৈরির মালামাল, সøাপ, গ্রাডারের ভাংগা অংশ ও ইটা বালুর স্তুপ পরে থাকায় সেখানকার ফুটপাত চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমস হাউজে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীসহ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এসড়কে চলাচল করে। এছাড়াও এখানে রয়েছে কয়েকটি নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক ভুক্তভোগীরা জানান, সড়কের পাশে ফুটপাত না থাকায় বাধ্য হয়ে সড়কে চলাচল করতে গিয়ে মাঝে মাঝে দ্রুত গতির গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়। তারা আরো বলেন গত কয়েক বছর যাবত তারা নিরাপদ ফুটপাত নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলছে তবুও কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি মানছেন না। বাস রেপিড ট্রানজিট (বিআরটি) উত্তরা এ প্রকল্পে কাজের ধীর গতির কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট ও জনদুর্ভোগ।

হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ও মাষ্টার পয়েন্ট শপিং কমপ্লেক্সের সামনের সড়ক, উত্তরা ৪ নং সেক্টর, বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সংলগ্ন এপিবিএন হেডকোয়ার্টার ও রেপিডএ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১ এর সামনে রাস্তার ফুটপাতের বেহাল দশা। এ ছাড়াও আজমপুর থেকে হাউজ বিল্ডিং আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাত ভাংতে ভাংতে রাস্তার সাথে মিশে যেতেও দেখা যায়। কোন কোন অংশে ফুটপাতের চিহ্নও নেই।

ফুটপাত সংস্কার বিষয়ে জানতে প্রজেক্ট ম্যানেজার আব্দুর রহমান নাহিয়ানকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে আরো দেখা যায় ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা ময়মনসিংহ বিমান বন্দর সড়কে বি আর টি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কের কয়েকটি লেন বন্ধ রেখে নির্মাণ কাজ চালানোর কারণে প্রায়ই ঘণ্টার পর ঘণ্টা এ সড়কে যানজট লেগে থাকে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের এই সময় পর্যন্ত গত ৫ বছর ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উত্তরা এলাকার ভুক্তভোগীরা জানায়, বিআরটি প্রকল্পের কাজের ধীরগতির কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক ঢাকা বিমানবন্দর মহাসড়ক প্রায়ই যানজটের দখলে থাকতে দেখা যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনের চাপে প্রতিদিনই যানজটের কবলে পরে উত্তরার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বি আর টি প্রকল্পের ফুটপাত ও সড়ক নির্মাণে নানান অনিয়মের কারণে এবং কাজের ধীরগতিতে উত্তরা বিমানবন্দর সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

ফুটপাতের বেহাল দশা থেকে উত্তরণ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মনোরঞ্জন সাহা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রোডস এন্ড হাইওয়ের সড়কগুলো এক সময় সিটি কর্পোরেশনের আন্ডারে ছিল। বর্তমানে এটিকে বাস র‌্যাাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। মহাসড়কের দুই পাশের ফুটপাত, রাস্তার মধ্যখানের রোড ডিভাইডার ও সড়ক প্রশস্তকরণসহ যাবতীয় উন্নয়ন কাজের দায়িত্বে রয়েছে তারা। উত্তরা এলাকার ফুটপাত দ্রুত সংস্কার বিষয়ে তিনি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার