ছোট্ট সুখীর ওপর নির্মম পাশবিকতা!
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম
নাসরিন আক্তার সুখী। বয়স সাত বছর। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেইটের সিড়িতে বসে মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। মা মোছাম্মৎ বিলকিস বেগম প্রতিদিনের মতো কাগজ আর পানির খালি বোতল কুঁড়াতে ব্যস্ত। ঈদ বাজারকে ঘিরে জমজমাট মার্কেট বিপণী কেন্দ্র। প্রায় ভোররাত পর্যন্ত খোলা থাকে। আর তাই বিলকিস বেগমকেও ভোর রাত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কাজ শেষে ভোরে মেয়েকে নিয়ে ফিরে যান নগরীর বাকলিয়া বউবাজার এলাকার বস্তির বাসায়। রোববার রাত দেড়টায় তিনি সর্বশেষ মেয়েকে ওই সিঁড়িতে বসা দেখেন। রাত দুটোয় ফিরে এসে দেখেন সেখানে তার মেয়ে নেই। তিনি আশপাশের জেনারেল হাসপাতাল, চেরাগির মোড়সহ সব এলাকায় খুঁজতে থাকেন। পরদিন সকালেও তিনি নগরীর অনেক এলাকায় মেয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরেন। সোমবার রাত ৯টায় খবর পান নগরীর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল এলাকার ফলমন্ডির ডাস্টবিনে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া গেছে। বিলকিস বেগম ছুটে যান সেখানে। নিজ কন্যার নিথর দেহে দেখে ভেঙ্গে পড়েন কান্নায়।
এক পথচারি রাস্তা পার হওয়ার সময় সড়কের পাশে ডাস্টবিনে একটি বস্তা থেকে বের হয়ে আসা শিশুর পা দেখতে পান। তিনি তার পরিচিত এক কনস্টেবলকে ফোনে বিষয়টি জানালে কোতোয়ালী থানা পুলিশ এসে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশ নিশ্চিত হয় শিশুটি ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যা করা হয়। শিশুটির যোনিপথ এবং পায়ুপথ দুটোই ছিন্নভিন্ন ছিল। লাশ উদ্ধারের সাথে সাথে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশল।
ফুটেজ দেখা যায় এক ব্যক্তি একটি রিকশা ভ্যানে করে বস্তাটি ডাস্টবিনে ফেলে যান। ফুটেজে তার ছবি পরিষ্কার বোঝা যায়। ওই ছবি ধরে রাতেই অভিযানে নামে পুলিশ। টানা অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাকলিয়া বউবাজার পুলিশ বিট এলাকা থেকে মীর হোসেন (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর মীর হোসেন খুনের দায় স্বীকার করে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। পরে তার দেখানো মতে ঘটনায় ব্যবহৃত ১টি ভ্যানগাড়ী, ১টি পাটের বস্তা, ১টি টুপরি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
যেভাবে হত্যা : মীর হোসেনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সিঁড়িতে বসা অবস্থায় সুখীকে দেখতে পায় মীর হোসেন। কাছে গিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলে। এরপর তাকে চকলেট ও চিপস কিনে দিয়ে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সে মেয়েটিকে আরও বেশি চকলেট ও চিপস দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রিকশায় নিয়ে ঘুরতে বের হয়। আন্দরকিল্লা থেকে রিকশায় সোজা চলে যায় টাইগারপাস। সেখান থেকে দ্বিতল সড়ক হয়ে সিআরবিমুখী পাহাড়ের কাছে এসে রিকশা বিদায় করে দেয় মীর হোসেন। পাহাড় দেখানোর কথা বলে সুখীকে নিয়ে পাহাড়ের জঙ্গলে চলে যায় সে। সেখানে তাকে মুখ চেপে ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। পাশবিক নির্যাতনে রক্তাক্ত হয়ে ছটফট করতে থাকে সাত বছরের সুখী। একপর্যায়ে তার চিৎকারে লোকজন এসে যাবে এ ভয়ে গলা চেপে ধরে মীর হোসেন। তখন ভোর সাড়ে ৩টা। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুখী। ওই অবস্থায় লাশ পাহাড়ে লুকিয়ে এলাকা থেকে সরে পড়ে মীর হোসেন। সোমবার দিনভর সুখীর লাশ পড়ে থাকে জঙ্গলে। সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা। এ সুযোগে রিকশা ভ্যান এবং একটি পাটের বস্তা নিয়ে সেখানে যায় খুনী। লাশটি বস্তায় ভরে তোলা হয় ভ্যানগাড়িতে। এরপর ভ্যান চালিয়ে সিরআরবি হয়ে কদমতলী মোড় থেকে ফলমন্ডির পাশের সড়কে রাখা ডাস্টবিনে বস্তাভর্তি সুখীর লাশ ফেলে পুরাতন স্টেশনের দিকে চলে যায় সে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আসামি মীর হোসেন একজন বিকৃত যৌনাচারী। তার বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার জন্যই ওই শিশুটিকে প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করে সে। পরে ধরা পড়ার ভয়ে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ গুম করে। পেশায় ভাঙ্গারী দোকানের কর্মচারী মীর হোসেনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার রামচন্দ্রপুর এলাকায়। সে ওই গ্রামের মৃত মো. গরীব হোসেনের পুত্র। তার বাসা নগরীর বাকলিয়া বউ বাজার এলাকার হিরুনির বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায়। গতকাল বিকেলে শিশু নাসরিন সুখীকে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কন্যাকে খুনের অভিযোগে সুখীর মা বিলকিস বেগম কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিখোঁজের একদিন পর নিষ্পাপ সন্তানের রক্তাক্ত লাশ পেয়ে আহাজারি করছেন বিলকিস বেগম। অভাবের সংসারে ফুটফুটে কন্যা সন্তান তার কোলজুড়ে আসে তখন তিনি তার নাম রেখেছিলেন সুখী। সন্তানের সুখের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করছিলেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাসাবাড়িতে ঝি এর কাজ করেন। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত কাগজ আর খালি পানির বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করতেন। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের সাথেই রাখতেন। তবে সে বেশিদূর হাঁটতে পারতো না। এজন্য আন্দরকিল্লা মোড় অথবা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেইটে বসিয়ে রেখে নিজে কাজে বের হতেন। ছটফটে শিশু সুখী আশপাশে ঘুরে ফিরে সময় কাটাতো। অনেকে তাকে আদর করে এটা সেটা খেতে দিত। আন্দরকিল্লা মোড়ের ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচিত মুখ ছিল সুখী। পাশবিক নির্যাতনে সুখীর এমন নির্মম পরিণতিতে তারাও হতবাক।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
২২ বছরে বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৫০ শতাংশ: আইওএম
সাতকানিয়ায় এখনো বিদ্যুৎহীন অনেক এলাকা
টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা
রূপালী ব্যাংকের ঢাকা দক্ষিণ বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
রূপালী ব্যাংকের ঢাকা দক্ষিণ বিভাগীয় ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় ঈশ্বরদীর ক্ষুদে বিজ্ঞানী নিহত
ভক্তের ওপর চড়াও হলেন সাকিব, নেটদুনিয়ায় সমালোচনা
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে কালেকশন বুথ চালু করল ব্র্যাক ব্যাংক
ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স স্মার্ট প্লাজায় হাইসেন্স এসি, টিভিতে বিকাশ পেমেন্টে অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা ছাড়
শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে
বাগেরহাটে যুবলীগ নেতাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আওয়ামী লীগ নেতা
ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা আনলো ভিভো ভি৩০ লাইট
সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ৮৩ শতাংশ বেড়েছে
টেকসই রাজস্ব নিশ্চিতে করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা
শপআপ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করলেন মামুন রশীদ
১ বছরে আদানি গ্রিনের ২৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি
উপজেলা নির্বাচনে ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছে মতলব উত্তরবাসী
গোদাগাড়ীতে ৩ কেজি ৪শ’ গ্রাম হেরোইনসহ ২ জন গ্রেফতার
বজ্রপাতে নগরকান্দায় ২১ মাদ্রাসা ছাত্র আহতের ১১ জন এখনও হাসপাতালে
মেসিদের লিগকে যে পরামর্শ দিলেন ফিফা সভাপতি