হেলিকপ্টার থেকে ডলার ফেলার পরই এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে পড়ে সশস্ত্র সোমালি নৌদস্যুরা : সহসা দেশে ফিরছেন নাবিকেরা পরিবারে খুশির বন্যা : মুক্তিপণের অঙ্ক নিয়ে লুকোচুরি

মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত ২৩ নাবিক

Daily Inqilab রফিকুল ইসলাম সেলিম

১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

সোমালিয়ার নৌদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন জিম্মি ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। গত শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টার দিকে নৌদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যাওয়ার পর টানা ৩১ দিনের দুঃসহ বন্দিদশার অবসান হয়। মুক্ত জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে রওনা হয়। পরে বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে এ খবর নিশ্চিত করে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ। জানা গেছে হেলিকপ্টার থেকে জাহাজে মুক্তিপণের ডলার ফেলার পরই নাবিকদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে কত ডলার মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে, তা যায়নি জাহাজটির মালিকপক্ষ। এ নিয়ে সরকারি তরফেও লুকোচুরি চলছে। যদিও সোমালি নৌদস্যুদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুক্তিপণের অঙ্ক ৫০ লাখ ডলার বা ৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালিয়ার নৌদস্যুরা। এরপর তারা জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। নিজ দেশের উপকূলে নেওয়ার নয় দিনের মাথায় দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নানা পর্যায়ে দর-কষাকষির পর দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছছিল বলে ঈদের আগেই আভাস দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ। জানা গেছে, সমঝোতার ভিত্তিতে জাহাজ এমভি আবদুল্লার আশপাশে থাকা সোমালি নৌদস্যুদের স্পিডবোট লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে পর পর তিনটি ডলার বোঝাই পানি নিরোধক প্যাকেট ছুঁড়ে মারা হয়। নৌদস্যুরা সেগুলো পানি থেকে তুলে নেয়। এসময় জিম্মি ২৩ নাবিককে জাহাজটির ডকে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মুক্তিপণের ডলার বুঝে পাওয়ার পর দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে পড়ে। এ সময় তারা নাবিকদের উদ্দেশ্যে বলে, তোমরা এখন মুক্ত। এরপর মুক্তির আনন্দ নিয়ে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দস্যু কবলিত এলাকা থেকে পরবর্তী বন্দরের উদ্দেশে চলতে শুরু করে। আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠা নাবিকেরা সেজদায় অবনত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। মুক্তির সুসংবাদ জানিয়ে দেন দেশে অপেক্ষায় থাকা বাবা-মা স্ত্রী, স্বজনদের। তারাও আনন্দ অশ্রুতে ভাসেন। ঘরে ঘরে নেমে আসে ঈদের আনন্দ।
সব নাবিকসহ জাহাজটি মুক্তি পাওয়ার কথা জানিয়ে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেছেন, জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। গতকাল সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি পরবর্তী বন্দরের পথে ছিল। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে দস্যুদের কবলে পড়েছিল। এক মাসের বেশি সময় ধরে ভারী অস্ত্রধারী দস্যুদের কবল থেকে ২৩ নাবিকের অক্ষত অবস্থায় মুক্তির খবরে তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে পৌঁছার পরে তাদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ। ‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম দেওয়া হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত বছর এটি সংগ্রহ করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করতে থাকে কেএসআরএম গ্রুপ।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান দস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
যেভাবে দস্যুদের কবলে জাহাজটি : কয়লাবাহী এম ভি আবদুল্লাহ আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। ভারত মহাসাগর দিয়ে যাওয়ার সময় ১২ মার্চ দুপুরের দিকে হঠাৎই ছোট ছোট বোট নিয়ে জাহাজের দিকে চলে আসে সোমালিয়ান নৌদস্যুরা। ঐ জাহাজে থাকা একজন ক্রু ঘটনার সময় একটি ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায় ছোট ছোট নৌকায় করে জাহাজটিতে ওঠার চেষ্টা করে নৌদস্যুরা এবং এ সময় তাদের হাতে বন্দুক ছিলো। জাহাজে ওঠার পরই সবাইকে জিম্মি করে ফেলে দস্যুরা।
দস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরই হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের মাধ্যমে মালিক প্রতিষ্ঠানকে একটি বার্তা পাঠায় জাহাজের একজন নাবিক। যাতে বলা হয়, নৌদস্যুরা জাহাজ দখল করে নিয়েছে। আমাদের নাবিকেরা আটকা পড়েছেন। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। মুক্তিপণ না পেলে তাদের এক এক করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
মালিকপক্ষের সংবাদ সম্মেলন : দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। নাবিকরা সেই জাহাজে করে অথবা দুবাই থেকে সরাসরি বিমানেও ফিরতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এতে আরও অন্তত দশদিন সময় লাগতে পারে। জাহাজের মালিকপক্ষ বলছে, ব্রিটিশ, আমেরিকা, কেনিয়া এবং সোমালিয়া- এ চার দেশের আইন মেনে মুক্তিপণ দিয়েই ২৩ নাবিক ও এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে মুক্ত করা হয়েছে। তবে মুক্তিপণের অঙ্ক কোনোভাবেই প্রকাশ করেনি তারা। এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক মুক্ত হওয়ার পর রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনে এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম জাহাজটি সোমালিয়ার নৌদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে মুক্ত হওয়া পর্যন্ত সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাহাজটিকে জিম্মি করার পর থেকে কোথায় কী পজিশন, জাহাজের লোকেশন সবসময় আমরা নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্র্যাকের মধ্যে রেখেছিলাম। উপকূলে নেওয়ার পরে নৌদস্যু একজন কমান্ডার থাকে, ওনার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। আমাদের একটাই কথা ছিল, নাবিকরা কেমন আছেন। নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হতো। পরিবারের সঙ্গেও তাদের নিয়মিত কথাবার্তা হয়েছে। আমরা জানতাম, নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন, অক্ষত আছেন। সর্বশেষ আমরা যখন মুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করি, দুইদিন আগে ভিডিও পাঠাতে বলি যে, সকল নাবিক কেমন আছে, কী অবস্থায় আছেন। ভিডিও পাঠিয়ে আমাদের সর্বশেষ অবস্থা জানানো হয়। এভাবে ৩০টা দিন আমরা যোগাযোগ রেখেছি। শিপিং সেক্টরের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখার মাধ্যমে মুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়েছে বলে তিনি জানান। মুক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে মেহেরুল করিম বলেন, আমরা ইন্টারন্যাশনাল শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমাদের ইন্টারন্যাশনাল আইন মেনেই এ ব্যবসা করতে হয়। উদ্ধার প্রক্রিয়াটাও ইন্টারন্যাশনাল ল’ অনুযায়ী একদম লিগ্যালি হয়েছে। আমাদের আমেরিকার আইন মানতে হয়েছে, বৃটিশ আইন, কেনিয়া, এমনকি সোমালিয়ার আইনও মানতে হয়েছে। এর বেশি আমরা কিছুই শেয়ার করতে পারব না।
শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে মুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত বার্তা পান জানিয়ে তিনি বলেন, ৯টা বোটে ৬৫ জন নৌদস্যু চারপাশ ঘিরে ছিল। তারা চলে যাবার পর নাবিকদের সঙ্গে আমাদের ভিডিওকলে কথা হয়েছে। এসময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মুক্তিপণের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু জিনিস আমরা প্রকাশ করতে পারব না। দস্যুতাকে আমরা উৎসাহিত করতে পারব না।
কত টাকায় মুক্তি : সোমালি নৌদস্যুদের হাত থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর ২৩ নাবিককে মুক্ত করতে আদৌ কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়েছে কিনা, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও সঠিক কোনো তথ্য মিলছে না। বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ কর্তৃপক্ষের কেউ মুক্তিপণের অঙ্ক প্রকাশ করেনি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন মুক্তিপণ দেওয়ার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। জাহাজ ছিনতাইয়ের পর থেকে দস্যুদের মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে দস্যুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করে। কিন্তু নাবিকদের ছাড়াতে মুক্তিপণ লেগেছে কিনা, কিংবা কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তারা ছাড়া পেয়েছেন, সে সম্পর্কে সরকার কিংবা জাহাজের মালিকপক্ষের কেউ কথা বলেননি।
তবে নাবিকদের মুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর দুজন নৌদস্যুর বরাতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের কথা লিখেছে রয়টার্স। সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও একই পরিমাণ মুক্তিপণের খবর দিয়েছে।
আবদিরশিদ ইউসুফ নামে এক নৌদস্যু রয়টার্সকে বলেন, দুই রাত আগে আমাদের কাছে ওই অর্থ নিয়ে আসা হয়। সেগুলো আসল নাকি ভুয়া তা আমরা যাচাই করে দেখেছি। এরপর তা আমরা ভাগবাটোয়ারা করে সরকারি বাহিনী এড়িয়ে চলে যাই।
মুক্তিপণ হাতে পাওয়ার পরই জাহাজসহ সব নাবিককে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান রশিদ। তবে বিষয়টি নিয়ে সোমালিয়া সরকারের কোনো বক্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স। বাংলাদেশি নাবিকদের ছাড়াতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের কথা বলেছে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে দ্য ডেইলি সোমালিয়া ও গারও অনলাইন নামে দুটি সংবাদ মাধ্যম তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ৫০ লাখ ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের ছেড়ে দিয়েছে দস্যুরা।
দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা : মুক্তি পেয়ে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে ভালোবাসার বার্তা দেন। জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর রোববার বেলা ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান ফেসবুকে প্রথম পোস্ট দেন। তাতে দেখা যায়, জাতীয় পতাকা হাতে নাবিকরা সবাই উচ্ছ্বসিত। মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর পাশেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টার একটি যুদ্ধ জাহাজকেও দেখা যাচ্ছিল ছবিতে। শেষ ছবিতে দেখা যায়, ইইউ নেভির কমান্ডোরা এমভি আবদুল্লাহতে বাংলাদেশি নাবিকদের পাশে অবস্থান নিয়ে আছেন। ফেইসবুক পোস্টে আতিকুল্লাহ খান লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টার জন্য এসআর শিপিংকে ধন্যবাদ। বন্ধু, পরিবার ও শুভাকাক্সক্ষীদের কৃতজ্ঞতা- যারা পুরো যাত্রায় আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। ধন্যবাদ ইইউএনএভিএফওআর অপারেশন আটলান্টা। ধন্যবাদ বাংলাদেশ। লাভ ইউ অ্যান্ড মিসিং ইউ বাংলাদেশ।’
আট দস্যু গ্রেফতার : রোববার বিকলে জানা যায়, সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে ৮ জন নৌদস্যুকে গ্রেফতার করেছে সেখানকার পুলিশ। পান্টল্যান্ড পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে সোমালিয়ার ইংরেজি সংবাদমাধ্যম গেরো জানায়, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে যারা জিম্মি করেছিল, সেই নৌদস্যুদের ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এক মাসের জিম্মি দশা : ১২ মার্চ এমভি আবদুল্লাহ নৌদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে সেটিকে অনুসরণ করে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং পূর্ব আফ্রিকা উপকূলের নৌপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইইউএনএভিএফওআর আটলান্টা অপারেশনের যুদ্ধ জাহাজ।
এসময় দুই বাহিনীই এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছালেও অস্ত্রের মুখে জাহাজের নাবিকরা জিম্মি থাকায় তারা কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি।
এরপর নৌদস্যুরা জাহাজটিকে সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পান্টল্যান্ড রাজ্যের জিফল উপকূলে নিয়ে যায়। তীর থেকে মাত্র দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করা হয়। শুরুতেই এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা পরিবারের কাছে পাঠানো অডিও বার্তায় জানায়, মুক্তিপণ না দিলে জলদস্যুরা নাবিকদের এক এক করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এর মধ্যে ১৬ মার্চ ভারতীয় নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে এমভি রুয়েন নামের মাল্টার পতাকাবাহী একটি জাহাজকে জিম্মি হওয়ার তিনমাস পর নৌদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করে। গ্রেফতার করে ৩৫ জন দস্যুকে। সমুদ্রপথের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলো এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযানে আগ্রহী হলেও নাবিকদের পরিবার ও জাহাজের মালিকপক্ষ জানায়, তারা এমন কোনো অভিযান চায় না। সমঝোতার ভিত্তিতে জাহাজটি ছাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল মালিকপক্ষ। এরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও অভিযানের বিষয়ে অসম্মতির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে সমঝোতার ভিত্তিতে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পেলেন নাবিকেরা।
এদিকে কেএসআরএম গ্রুপের (মিডিয়া) এর মিজানুর ইসলাম জানিয়েছেন, আগামী ২২ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সিটির অমরত্বের রাত...

সিটির অমরত্বের রাত...

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

ফতুল্লায় হত্যা মামলার আসামি কেরানিগঞ্জে গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

যৌথ বাহিনীর অভিযানে বান্দরবানে কেএনএফের ৩ সদস্য নিহত

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় পুলিশকে মারপিট, যুবক আটক

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাচিপ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ডা. জাহিদ, সম্পাদক ডা. অর্ণা জামান

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারাদেশে জেলা ও মহানগরীতে ইসলামী

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

খালেকুজ্জামানের বাড়ী সরকারিভাবে পুননির্মাণের দাবি - ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাবেক বিজেপি নেতা

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে বিএসটিআই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: প্রেসিডেন্ট

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

মানিকগঞ্জ-ঢাকা রেললাইন প্রসঙ্গে

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

কমিউনিটি ক্লিনিক দাঁড়িয়ে আছে দোরগোড়ায়

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেপরোয়া লুটপাট

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন

নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে

নগরমুখী জনস্রোত রোধ করতে হবে