টানা তাপপ্রবাহে ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ : ৪৩ বছরের মধ্যে কালবৈশাখী-ঝড়হীন বৈশাখ! অস্বাভাবিক বৈরী আবহাওয়ায় সঙ্কটে গ্রামীণ প্রান্তিক অর্থনীতি :: গরম-ঠাণ্ডা সহনীয় ধানের জাত উদ্ভাবন ও পরাগায়নের সময় এগিয়ে আনতে গবেষণার তাগিদ :: সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি : সপ্তাহ শেষে দেশে স্বস্তির বৃষ্টির সম্ভাবনা

পুড়ছে ধান আম-লিচু

Daily Inqilab শফিউল আলম

২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকালে গরম পড়বে এটা চিরচেনা-জানা আবহাওয়া। তবে গরমের পাশাপাশি বজ্র-ঝড়, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখীর সঙ্গে ভর করে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাতও হবে এটাই গ্রীষ্ম মৌসুমের বৈশিষ্ট্য। অথচ এবার সেই চৈত্র মাস থেকে টানা দীর্ঘ এক মাসের বেশিদিন যাবত উচ্চ তাপদাহ এবং টানা খরা-অনাবৃষ্টির কবলে সমগ্র দেশ। দিনের তাপমাত্রার পারদ প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে এবং রাতের ‘সর্বনিম্ন’ তাপমাত্রাও ৩০ ডিগ্রিতে উঠে গেছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের এ সময়ের ‘স্বাভাবিকে’র তুলনায় সারা দেশে স্থানভেদে ৪ থেকে ৮ এমনকি ১০/১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ঊর্ধ্বে উঠে গেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা-অনাবৃষ্টিতে দুঃসহ ও কঠিন মানুষের জীবনযাত্রাÑজীবনধারণ।

টানা উচ্চতাপে পুড়ছে দেশ। পুড়ছে বোরো-ইরি আধাপাকা ধান এবং অর্থকরি ফল আম, লিচু ছাড়াও জাম, পেঁপে, আতা, সফেদা, লটকন, জামরুলসহ ফল-ফলাদিও বাগান। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পোলট্রি, ডেয়রী ও মাছের খামার। ছটফট করছে গবাদিপশু-পাখিসহ প্রাণিকুল। নিস্তেজ হয়ে পড়েছে ফল-ফলাদির বাগান, আধাপাকা ফসলসহ উদ্ভিদরাজি। অস্বাভাবিক বৈরী আবহাওয়ায় তীব্র সঙ্কটে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। কমে গেছে উৎপাদনশীলতা। ঘরে ঘরে নানাবিধ রোগব্যাধিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে মানুষ। প্রতিদিনই প্রচণ্ড রোদের তেজে হিট স্ট্রোকে দেশের এখানে-সেখানে মারা যাচ্ছে মানুষ। দিনমজুর শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষেরা আয়-রোজগারের চরম সঙ্কটে পড়েছে। তারা অধিকাংশই মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এদিকে গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল আবহাওয়া বিভাগের তথ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৯ এবং সর্বনিম্ন ২৯ ডিগ্রি সে.। তবে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, পৌনে ২ কোটি মানুষের ঘিঞ্জি ঠিকানা ‘ইট-পাথর লোহা-কংক্রিটের জঞ্জাল’ রাজধানী ঢাকাজুড়ে দিনের বেলায় সর্বোচ্চ প্রকৃত তাপানুভূতি ৪৪ থেকে ৪৯ ডিগ্রি সে. এমনকি এর চেয়েও ঊর্ধ্বে রেকর্ড হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন! গতকালও বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে মাঝারি স্বস্তির বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে ১৬ ও শ্রীমঙ্গলে ১৮ মিলিমিটার। এছাড়া দেশের আর কোথাও ছিঁটেফেঁটাও বৃষ্টি হয়নি। সারা দেশে উচ্চ তাপদাহ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ গতকাল সারা দেশে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে আবারও ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করেছে।

আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী মে মাসের প্রথম দিকে অর্থাৎ চলতি সপ্তাহের শেষে বাংলাদেশে স্থানভেদে হালকা থেকে মাঝারি কিংবা ভারী বৃষ্টিপাত, বজ্রসহ বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে ক্রমে তাপমাত্রা কমে আসবে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশে এ বছর এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশিদিন যাবত তাপপ্রবাহ চলছে গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেই। ১৯৪৮ সাল থেকে আবহাওয়া অধিদফতর তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখে গত ৭৬ বছরের মধ্যে এমন টানা তাপপ্রবাহ খুঁজে পায়নি। তাছাড়া এ মাসে গত ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম (মাত্র একটি) কালবৈশাখী বা বজ্র-ঝড় হয়েছে। গত বছর এপ্রিলে কালবৈশাখী বজ্র-ঝড় হয় ৭টি। ২০২২ সালে ৯টি, ২০২১ সালে হয় ৮টি। কালবৈশাখী বা বজ্র-ঝড় না হওয়ায় বৃষ্টিপাত নেই। আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে ১৯৮১ থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৪৩ বছরে (এপ্রিলে) ৩৬৫টি কালবৈশাখী বা বজ্র-ঝড় হয়। বার্ষিক গড় হিসাবেও অন্তত ৮ থেকে ৯টি কালবৈশাখী, বজ্র-ঝড় হওয়ার কথা। যা এবার হয়নি। সব মিলিয়ে আবহাওয়ার চরম-ভাবাপন্ন এবং অস্বাভাবিক আচরণ। বিশেষজ্ঞগণ জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশি^ক উষ্ণতা এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন। বাংলাদেশে বন-জঙ্গলসহ প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডও অনেকাংশে দায়ী।

গতকাল যশোর জেলায় সর্বোচ্চ (৪২.২ ডিগ্রি) ছাড়াও দেশের আরো উল্লেখযোগ্য উচ্চ তাপমাত্রা ছিলÑ রাজশাহীতে ৪২, চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৮, পাবনায় ৪১.৫, সাতক্ষীরায় ৪১.১, কুষ্টিয়ায় ৪০.৮, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর ৪০.৬, টাঙ্গাইলে ৪০.৩, সৈয়দপুরে ৪০.২, খুলনা ও নওগাঁয় ৪০, দিনাজপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে ৩৯.৫ ডিগ্রি সে.

আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

যশোর ও রাজশাহী জেলা সমূহের উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, পাবনা ও নীলফামারী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে গরমে-ঘামে অস্বস্তিভাব বিরাজ করছে। গতকাল ঢাকায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ছিল সকালে ৮১ শতাংশ এবং সন্ধ্যায় ৬২ শতাংশ। যা অস্বাভাবিক বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এর পরের ৫ দিনের শেষের দিকে দেশে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে।
পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

আম, ধান, পোলট্রিতে কী ক্ষতি করছে এই গরমÑ
শীর্ষক শনিবার বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি কৃষি ও পোলট্রি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সারাদেশে হিট স্ট্রোকসহ গরমজনিত কারণে প্রতিদিন প্রাায় ১০ শতাংশ মুরগি মারা পড়ছে বলে জানায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

পুষ্ট হওয়ার আগেই গাছ থেকে ঝরে যাচ্ছে গ্রীষ্মের অন্যতম ফল আম। বোরো ধানের উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা আছে কৃষিবিজ্ঞানীদের। এত উচ্চ তাপমাত্রা কীভাবে ও কী ধরনের ক্ষতি করতে পারে ফল, ফসল ও পোল্ট্রির? অত্যধিক গরমের সঙ্গে পাল্লা দিতে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশের কৃষি খাত? এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. আরমিন ভূইয়া বলেন, মানুষ যেমন অধিক গরমে হিট স্ট্রোক করে, তেমনি ধানের ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতিকে আমরা হিটশক বলি। ধানগাছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে হিট শকের মাত্রা ধরা হয়। তাপপ্রবাহ ৩৫ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে এবং সে সময়ে বৃষ্টি না হলে ধানগাছে হিটশক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। উচ্চ তাপমাত্রা থেকে বাঁচার জন্য ধানগাছ ‘নিজস্ব কুলিং সিস্টেম’ তৈরি করে। ফসলের মাঠে পানি থাকলে তা ব্যবহার করে ধানগাছটি নিজের তাপমাত্রা তিন-চার ডিগ্রি কমিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকলে গাছ থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায় এবং হিট শকের শিকার হয়। বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির উপরেই অবস্থান করছে। এ সময় বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। যে কারণে চলতি বোরো মৌসুমে ক্ষতির আশঙ্কা কৃষিবিদদের। বাংলাদেশে মোট যে ধান উৎপাদিত হয় তার একটা বড় অংশ উৎপাদিত হয় বোরো মৌসুমে। হিট শক ছাড়াও গরমে ধানের আরেকটি ক্ষতির আশঙ্কার নাম ধান ‘চিটা’য় নষ্ট হওয়া।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম গোলাম সারওয়ার বলেন, যেসব খেতে ধান ইতোমধ্যেই পরিপক্ক হয়ে গেছে সেখানে চিটা হবে না। তবে যারা একটু দেরিতে ধান রোপণ করেছেন তাদের জমিতে চিটা দেখা দিতে পারে। ড. আরমিন ভূঁইয়া বলেন, ধান গাছে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্বাভাবিক পরাগায়ন হয়, তখন তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পোলেন (রেণু) শুকিয়ে পরাগায়ন ব্যাহত হয়। এতে চিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। অধ্যাপক সারওয়ার বলেন, চিটা পড়ার হার নির্ভর করবে তাপমাত্রা কত বাড়ছে বা কতদিন ধরে উচ্চ মাত্রায় থাকছে তার উপর।

আমের জন্য গরম ভালো, তবে বৃষ্টিও চাইÑ
গ্রীষ্মে আম, জামসহ বিভিন্ন ফলের সমাহার দেখা যায় বাংলাদেশে। এসব ফলের মধ্যে বহুল সমাদৃত আমের ফলনও বিঘ্নিত হচ্ছে অনাবৃষ্টি-খরায়। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, আম পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য বৈশাখের গরম আবহাওয়ার বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এপ্রিল মে অন্যান্য বছরও তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সে. উঠে। এবার তারচেয়ে একটু বেশি হলেও খুব একটা ক্ষতিকর হতো না যদি একই সাথে বৃষ্টিও হতো। বৃষ্টির অভাবে মাটি শুষ্ক থাকায় প্রয়োজনীয় পানি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমগাছ। এতে বোটায় একটি বিশেষ স্তর তৈরি হয়, যা বোটাকে দুর্বল করে ফেলে। এতে অপুষ্ট অবস্থায় আম ঝরে যাচ্ছে। দীর্ঘ তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির অভাবে এবার কাক্সিক্ষত ফলন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আমচাষীরা। তীব্র গরম আর বৃষ্টিহীনতায় আম ঝরে পড়ছে।

মুরগি মারা যাচ্ছে, ডিমও কমছেÑ
মুরগি পালনে অনুকূল তাপমাত্রা ১৭ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু বাংলাদেশে চলতি মাসের তাপমাত্রা এর প্রায় দ্বিগুণ। ফলে প্রতিদিনই স্থানীয় গণমাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মুরগির মৃত্যুর খবর আসছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, সারাদেশে প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ শতাংশ মুরগি মারা যাচ্ছে। ডিম উৎপাদন কমেছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য অঞ্জন মজুমদার বিবিসি’কে বলেন, ডিম পাড়া বা পরিণত বয়সের মুরগি হিট স্ট্রোকের শিকার হয় বেশি। এতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক। বড় মুরগি মারা গেলে প্রায় সাত-আটশ’ টাকার ক্ষতি হয়।

বড় খামারগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়। তাই তাপমাত্রার হেরফেরে সেখানে কোন সমস্যা হয় না।
কিন্তু বাজারের ৮০ শতাংশই প্রান্তিক খামারিদের উপর নির্ভরশীল, যাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ব্যবস্থা নেই। সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত তাপের ফলে মুরগির বিপাকক্রিয়া ভালো হয় না। যার ফলে মুরগির খাদ্যের প্রতি অনীহা দেখা যায়। ঠিকমতো খাবার গ্রহণ না করায় মুরগির বৃদ্ধি কমে যায়, ডিম উৎপাদনও হ্রাস পায়।

প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলার প্রস্তুতি কী?
ঠিকমত সেচ বা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে চলতি মৌসুমেও ফসলে গরমের প্রভাব এড়ানো সম্ভব বলে অভিমত দেন দুই ইনস্টিটিউটের দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, প্রকৃতির সাথে তো পেরে উঠবো না। নিজেদের ব্যবস্থাপনাটা ঠিকমতো করতে হবে। ড. আরমিন ভূইয়া বলেন, ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দু-তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে।

কিন্তু ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কতটা উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিচ্ছে? ড. আরমিন ভূইয়া জানান, ধান গবেষণা ইনস্টটিউট এ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একশ’ আটটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে খরা-সহিষ্ণু জাত যেমন আছে, লবণাক্ততা সহিষ্ণুু ধানের জাতও আছে। তাছাড়া বোরো ধানের পরাগায়নের সময়টাকে আরেকটু এগিয়ে আনার লক্ষ্যে গবেষণা চলছে বলে জানান তিনি।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ক ম গোলাম সারওয়ার অবশ্য বলছেন, এতোদিন লবণাক্ত পানি সহনশীল ফসল উদ্ভাবনই ছিল গবেষণার মূল লক্ষ্য। তাপমাত্রা সহনশীল শস্য নিয়ে গবেষণা এখনো আশানুরূপ নয় বলে মনে করেন তিনি। কেবলমাত্র গমের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা সহনশীল জাত উদ্ভাবনের গবেষণায়ই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বাংলাদশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কৃষিবিদ অধ্যাপক সারওয়ার বলেন, উচ্চ, নিম্ন উভয় তাপমাত্রাই সহনশীলÑ এমন জাত যাতে উদ্ভাবন করা যায়, এরজন্য কাজ করতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক

নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক

উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু

উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু

আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ

আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ

সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী

সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী

উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ

উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ

কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন

কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন

কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল

কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল

ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন

ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন

ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস

ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত

কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত

রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক

চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক

তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ

তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ

বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়

বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়

বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ

আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ

আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ

ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল

ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল