খেলাপি ঋণের বিষয়ে তথ্য নিয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল

নেট রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ, বৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৩ এএম

বাজেটের আগে ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি জানতে ঢাকায় অবস্থান করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিশেষ প্রতিনিধি দল। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা করেছে। এতে আর্থিকখাতের বেশকিছু সূচক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এরমধ্যে- লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ কম। একইসঙ্গে রিজার্ভ কিভাবে বৃদ্ধি পাবে তার সঠিক কর্মপরিকল্পনা আগামী ৮ মে’এর মধ্যে চেয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া খেলাপি ঋণের বিষয়ে তথ্য নিয়েছে দলটি।

আলোচনায় বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় আইএমএফ’র। সভায় আইএমএফ এমন উদ্বেগ জানান। সভায় উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমন বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইএমএফ’র নেট রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৪ এর মার্চ শেষে ছিল ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন। যদিও মার্চ শেষে দেশের নিট রিজার্ভ ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪ বিলিয়ণ কম। আর বর্তমানে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়েও রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

‘রিজার্ভ ধরে রাখায় ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ভুল নীতিকেই দায়ী করেছে সংস্থাটি। একই সাথে বারবার সময় নেওয়ার পরও কেন রিজার্ভের লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে না এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য এবং লক্ষ্যপূরণে আরও কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা। এ ক্ষেত্রে আগামী বৈঠকের (৮ মে) আগেই এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

‘আইএমএফ’র রিজার্ভের পাশাপাশি খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশে কোন গড়মিল রয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। একই সাথে মামলায় আটকা, পুনঃতফসিল ও অবলোপনকে ব্যাংকের খারাপ সম্পদ হিসেবে গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ দলের সঙ্গে চলমান বৈঠকের বিষয়ে মধ্যবর্তী আলোচনা হয়েছে। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। এখন পর্যন্ত প্রতিনিধি দল যে বিষয়গুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন, সেসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছেন।

রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের বিষয়ে প্রতিনিধি দল তথ্য নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একইসঙ্গে তাদের নতুন প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছে। এরমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কথা হয়েছে। কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে কথা হয়েছে। মেজবাউল হক বলেন, এছাড়া আমাদের অর্থনীতির অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে।

ডলার রেট নিয়ে ক্রলিং পেগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ক্রলিং পেগ সিস্টেমে ডলারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দর ব্যাংকগুলোকে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। যেসব তথ্য আইএমএফ পেয়েছে সেগুলো এখন তারা পর্যালোচনা করে আগামী ৮ মে ক্লোজিং সেশনে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
বৈঠকে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে খেলাপিদের বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সুবিধা দিচ্ছে কিনা তাও সংস্থাটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। যদি খেলাপিদের ব্যাপারে কোন উদারতা দেখানো হয় সেগুলোও বাদ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও দেশ থেকে কি পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে সে বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি অর্থপাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য ও পাচার ঠেকাতে কঠোর হওয়ার আহবান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল থেকে আইএমএফ দলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে। বাজেটের আগ মুহূর্তে ঢাকায় আসা আইএমএফ দলটি মূলত সংস্থাটি থেকে প্রাপ্ত ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি জানতে চাচ্ছে বাংলাদেশের কাছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনে ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের কথা রয়েছে। আইএমএফ’র ঢাকায় সফররত দল তাদের মধ্যবর্তী ভিজিট সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ পর্যন্ত ৩ দফায় বৈঠক করেছে। এছাড়াও একীভূতকরণ নীতিমালা নিয়ে পলিসি অ্যাডভাইজার আবু ফরাহ নাসের এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে। বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু ছাড়াও রাজস্ব ঘাটতি অনেক বেশি হওয়ায় এই ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য চুক্তি সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সাক্ষর করেছেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সউদী পৌঁছেছেন ৩৪ হাজার হজযাত্রী

সউদী পৌঁছেছেন ৩৪ হাজার হজযাত্রী

প্রান্তিক পর্যায়ে দক্ষ এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে

প্রান্তিক পর্যায়ে দক্ষ এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে

বিনিয়োগ, অভিবাসন, মৌসুমি কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ, জ্বালানি বিষয়ে আলোচনা হবে : হাছান মাহমুদ

বিনিয়োগ, অভিবাসন, মৌসুমি কর্মসংস্থান, প্রবাসী কল্যাণ, জ্বালানি বিষয়ে আলোচনা হবে : হাছান মাহমুদ

ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহত

ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহত

একটুখানি শীতল পানি-১

একটুখানি শীতল পানি-১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শোক

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শোক

ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণও শোকাহত

ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে বাংলাদেশের জনগণও শোকাহত

ভারতের ‘জেরক্স ইন্ডিয়া’ হাতিয়েছে ১১২ কোটি

ভারতের ‘জেরক্স ইন্ডিয়া’ হাতিয়েছে ১১২ কোটি

দ্বিতীয় দিনেও তান্ডব অটোচালকদের

দ্বিতীয় দিনেও তান্ডব অটোচালকদের

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ -ওবায়দুল কাদের

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ -ওবায়দুল কাদের

তাপদাহ কেটে দেশজুড়ে বৃষ্টি

তাপদাহ কেটে দেশজুড়ে বৃষ্টি

পিকে হালদারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন

পিকে হালদারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন

কারান্তরীণের অমানবিক খেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সরকার -মির্জা ফখরুল

কারান্তরীণের অমানবিক খেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সরকার -মির্জা ফখরুল

দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচন আজ

দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচন আজ

নকল ডায়াবেটিস টেস্টিং স্ট্রিপ এক সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংসের নির্দেশ

নকল ডায়াবেটিস টেস্টিং স্ট্রিপ এক সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংসের নির্দেশ

নকল ডায়াবেটিস টেস্টিং স্ট্রিপ এক সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংসের নির্দেশ

নকল ডায়াবেটিস টেস্টিং স্ট্রিপ এক সপ্তাহের মধ্যে ধ্বংসের নির্দেশ

ভারত থেকে ১২০০ কোটি টাকায় ২০০ বগি কিনছে রেলওয়ে

ভারত থেকে ১২০০ কোটি টাকায় ২০০ বগি কিনছে রেলওয়ে

নেতানিয়াহু ও হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দাবি

নেতানিয়াহু ও হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দাবি

ইসরাইলি আগ্রাসন ও ফাতাহ্র ব্যর্থতায় হামাসের প্রতি সমর্থন বাড়ছে

ইসরাইলি আগ্রাসন ও ফাতাহ্র ব্যর্থতায় হামাসের প্রতি সমর্থন বাড়ছে