ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
কোথাও কোথাও সাবেক ও বর্তমান এমপিদের চরম দ্বন্দ্ব : জাতীয়তে পরাজিতরা উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রভাব ফিরে পেতে চান

আওয়ামী লীগে উপজেলায়ও জাতীয় নির্বাচনের কোন্দল-বিভক্তির রেশ

Daily Inqilab আল হেলাল শুভ

১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হওয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্বের রেশ এখনো রয়ে গেছে। যা এখন এসে পরেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন, সে সকল স্থানে গত জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব বেশি প্রকোট। কারণ সাবেক এমপিরা ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তাঁরাও উপজেলায় নিজের বলয় ধরে রাখতে চান। ফলে স্বতন্ত্র এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি উভয় পক্ষেরই এখন লক্ষ্য উপজেলা নির্বাচনে ‘মাইন্যান’ সৃষ্টি করার দিকে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল সূত্রগুলো বলছে, বিশেষ করে যে সকল স্থানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন্দল ছিল সেখানে উপজেলা নির্বাচনে আরো কোন্দল ও বিভক্তি আরো বেড়েছে। এর কারণ শুধু বর্তমান এমপিরা নয় বরং সাবেক এমপিরাও তাদের ‘মাইম্যান’ সৃষ্টি করার জন্য এখন বেশ মরিয়া। এর ফলে এসব জায়গায় ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গিয়ে এখনা পুরোপুরি বিভক্ত দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা বলছেন, দলীয় প্রতীক নৌকা না থাকায় দলের নেতারাই একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়েছে। ফলে কোথায় কোথায় প্রার্থীর সংখ্যা অনুসারে দুইয়ের অধিকার অংশ বিভক্ত দলের তৃণমূল। এর মধ্যে দিয়ে এখন অনেক এলাকায় দলের বিভক্তি এখন প্রকাশ্যরুপে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে বিভক্তি সব চেয়ে কয়েকটি বিভক্তি প্রকাশ্যে আসেছে যার এক পক্ষ সাবেক এবং আরেক পক্ষ বর্তমান এমপি।
তৃণমূণ সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল ব্যাপক। এর পর পরই আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়। এ নির্বাচনে দলে ‘নৌকা’ প্রতীক ব্যবহার করছে না আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগের যে কোন্দল এবং বিভক্তি গত জাতীয় নির্বাচনে ছিল সেটা আরো প্রকাশ্যে এসেছে। গত ৮ই মার্চ প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দেখা গেছ যে সমস্ত স্থানে জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরোধ ছিল, সেই বিরোধে গুলো আরো সহিংস রুপ নিয়েছে। প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নির্বাচনি এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং ভোট কেন্দ্র করে নানা ধরনের উসকানির কারণে সংঘর্ষের মধ্যে কোথাও কোথাও উপ নির্বাচনের নেপণ্যে ছিল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও সাবেক এমপিদের ঘটনার পুরনো রেশ। আওয়ামী লীগের তৃণমূল সূত্রগুলো বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে সাবেক এমপিরাও তাদের ‘মাইন্যাম’ ধরে রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বর্তমান এমপির লোকেরা। যদিও এমপিদের দল থেকে উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের প্রভাবের বাইরে থাকার কথা বলা হয়েছিল। এই কোন্দল ও বিভক্তির ফলে নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। এ ছাড়া নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার বলয় সৃষ্টিও এখন স্পষ্ট।
উপজেলায় ১ম ধাপের নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের গজারিয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। এ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘নৌকার প্রার্থী ছিলেন দলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস। কিন্তু তিনি পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের কাছে। এর পর উপজেলা নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা গিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে গজারিয়া উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম (আনারস) ও মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর (কাপ-পিরিচ) কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে জানা গেছে, আমিরুল ইসলাম বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থন পেয়েছিলেন। আর জিন্নাহও মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থন পেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধা সদর উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এর মধ্যে একটি বলয় সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুব আরা গিনি এবং একটি বলয়ের নেতৃত্ব রয়েছেন বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবির। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান রিঙ্কু নিজেই নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। আর গিনির প্রার্থী হলেন শাহ আহসান রাজিব। বর্তমান সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ারের প্রার্থী ইস্তেকুর রহনান।
এ দিকে গতকাল গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীর ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব আরা গিনির বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করে তার পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হুমকি-ধামকি দেওয়া এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আহসান হাবীব রাজিবের বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে এই অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুল হামিদ মিয়া নামের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। অভিযোগকারী হামিদ মিয়া নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অভিযুক্তরা হলেন- গাইবান্ধা সদর আসনের বর্তমান সংসদ (স্বতন্ত্র) সদস্য শাহ সারোয়ার কবীর, একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনির ভাতিজা ও গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আহসান হাবীব (রাজিব)।

ইসিকে করা অভিযোগে আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, গাইবান্ধা সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীর। তিনি তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইস্তেকুর রহমান সরকারকে (কাপ পিরিচ) জয়ী করতে গত ২১ এপ্রিল বেলা ১১টায় সদর উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় পদধারী নেতাদের নিয়ে গোপনে নির্বাচনি সমাবেশ করেন। যেখানে চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং ইউনিয়নের দলীয় পদধারী নেতাদের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইস্তেকুর রহমান সরকারের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে বলেন। অন্যথায় দলীয় নেতাদের পদচ্যুত করাসহ ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আর্থিক অনুদান, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ উপার্জন বন্ধ করে দেওয়া এবং দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যা নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের শামিল। এছাড়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে তিনি (শাহ সারোয়ার কবীর) অবৈধভাবে নির্বাচনি সমাবেশ করেই ক্ষান্ত হননি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইল করে এবং তার সমন্বয়ক হিসেবে পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বাধ্য করছেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর এমন হুমকি-ভয়ভীতি প্রদর্শনে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনির নিকট আত্মীয় (ভাতিজা) ক্ষমতাকে পুঁজি করে কোটিপতি বনে যাওয়া মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আহসান হাবীব রাজীব জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অনুদানের নামে ভোটারদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করছেন। তিনি কালো টাকার প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত শনিবার টাঙ্গাইল সখীপুরের যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এক প্রতিবাদ সভায় টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাহজাহান জয়কে এ হুমকি দেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন কিসলু। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কিসলু জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোহায়েরুল ইসলামের অনুসারী বলে পরিচিত। আর জোহায়েরুল ইসলাম ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য। গত শনিবার কিসুল বর্তমান সংসদ সদস্য জয়কে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনাকে আমি সাবধান করে দিতে চাই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে যদি আবার কোনোদিন কোনো কথা বলেন, আপনার জিহ্বা থাকবে না। সকল মানুষকে নিয়েই আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আপনি ভালো হয়ে যান। তিনি আরো বলেন, অনুপম শাহজাহান জয় সুসংগঠিত আওয়ামী লীগকে দ্বিখণ্ডিত করার পাঁয়তারা করছেন। তাকে প্রতিহত করা হবে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম নিজেই। এর আগে গত ২৫শে এপ্রিল যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্যের ছবি ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়। এ সময় মানববন্ধনে হামলা করা হয়। এতে যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইল-৫ আসনে জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়েও টানা দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন সানোয়ার হোসেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন। নির্বাচনের পর থেকে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদ গ্রুপ নিয়ে এলাকায় রয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এ দিকে যশোর-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির ও নাসির উদ্দিন এবার উপ জেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দিয়েছেন সেলিম রেজাকে। সেলিম রেজা উপ জেলা নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান। অপর দিকে বর্তমান সংসদ সদস্য তৌহিদুজ্জামান তুহিন উপজেলা নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছেন মনিরুল ইসলামকে। মনিরুল ইসলাম উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। অপর দিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলামের ভাইয়ের মেয়েও প্রার্থী হয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজের বলয় ধরে রাখতে মরিয়া। তারা হলেন- যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার সদরের আর যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। তারা এখন নিজ উপজেলার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। দুজনেই উপজেলা নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে গত ৮মে স্বপন ভট্টাচার্যের প্রার্থী আমজাদ হোসেন লাভলু বিজয়ী হয়েছেন। ওই নির্বাচনে বর্তমান মনিরামপুরের ইয়াকুব আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনকে সমর্থন করেছিলেন।
স্থানী সূত্র জানিয়েছে, শাহীন চাকলাদার সদর ছেড়ে কেশবপুরের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও যশোর সদরের রাজনীতিও তিনি প্রভাবশালী। এবার তিনি সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারে বসাতে করছেন। এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আজিজুল ইসলামের কাছে পরাজিত হওয়ার পর কেশবপুরে দলীয় কর্মসূচিতে তেমন একটা দেখা যায়নি শাহীন চাকলাদারকে। তবে এখন তিনি নিজ চাচাতো ভাইকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান করতে চান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যশোর সদর উপজেলার চেয়ারম্যানও ছিলেন। তবে শাহীনের সদরে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টায় ছাড় দিতে নারাজ যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিপুলকে সমর্থন দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেকেই থাকেন ভোটের মাঠে। প্রথম ধাপে জয়ও পেয়েছেন অনেকে। তাদের পক্ষে কাজ করেছেন এমপি-মন্ত্রীরা। অনেক জায়গায় এমপিরা নিজে মাঠে না নামলেও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের দিয়ে নিজ ‘মাইম্যানের’ পক্ষে কাজ করাচ্ছেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকে এমপিদের হয়ে উপজেলা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে সংঘাত-সহিংসতার কোথাও কোথাও পেছন থেকে মদদ দিচ্ছেন তারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের জন্য উপজেলা নির্বাচনে একটি বড় অস্বস্তির বিষয় কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ মাঠে তেমন প্রতিফলিত হয়নি।
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীদের প্রভাব নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এমপি-মন্ত্রী এবং দলের প্রভাবশালীদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করলে তাদের শান্তি পেতেই হবে। যারাই সাংগঠনিকভাবে দলীয় শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটাবে তাদের শাস্তি অনিবার্য। উপজেলা নির্বাচনে এমপি মন্ত্রীদের প্রভাব নিয়ে গত সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন ক্যাবিনেটে বাদ পড়েছেন -শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে।
স্বতন্ত্র এমপিদের এলাকাগুলোকে আওয়ামী লীগ বেশি বিভক্ত কী না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাউদ্দিন নাছিম ইনকিলাবকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। তাদের তো দল থেকে বহিস্কার করা হয়নি। এ বিষয়টি দলই তাদের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আর তারা দলীয় পদ নিয়েই রয়েছেন। কিছু সদস্যা হয়তো আছে। তবে এগুলো ধাপে ধাপে সমাধান করাই সম্ভব।
আর স্থানীয় উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত থাকুক। কোন এমপি প্রভাব বিস্তার করুক এটা আওয়ামী লীগ চায় না। এ বিষয়টিকে দল নেতিবাচক হিসেবেই দেখছে। এদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যা উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটাচ্ছে তারা ভাল কাজ করছে না। তবে বহিস্কারই কিন্তু শান্তির একমাত্র উপায় নয়। আরো অনেক উপায় রয়েছে। যথাসময়ে সেটা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচনে এমপি মন্ত্রীদের প্রভাব নিয়ে গত সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন ক্যাবিনেটে বাদ পড়েছেন -শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই

লৌহজংয়ে দিনমজুর যুবকের আত্মহত্যা

লৌহজংয়ে দিনমজুর যুবকের আত্মহত্যা

তিন সপ্তাহেও কোনো রেমিট্যান্স আসেনি যে ৭ ব্যাংকে

তিন সপ্তাহেও কোনো রেমিট্যান্স আসেনি যে ৭ ব্যাংকে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ

রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু

রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম গ্রেপ্তার

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম গ্রেপ্তার

পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

শ্রীলঙ্কার সামনে রাচিন বাধা

শ্রীলঙ্কার সামনে রাচিন বাধা

বৃহৎ স্বার্থে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমোদন: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বৃহৎ স্বার্থে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমোদন: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পুলিশিং কার্যক্রমে গতি আনতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু

ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পুলিশিং কার্যক্রমে গতি আনতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু

ফারাক্কা বাঁধের কারনে সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে

ফারাক্কা বাঁধের কারনে সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে