দেশের সব সরকারি,আধা-সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন অফিস সূচি নির্ধারণ করেছে মন্ত্রিসভা। ঈদুল আজহার পর নতুন সূচি ধরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে অফিস। শুক্র ও শনিবার যথারীতি সপ্তাহিক ছুটি থাকবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানা স্থানান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এখন সরকারি অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। যদিও ২০২২ সালের ২৪ আগস্টের আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতেন। পুরনো সময় সূচিতে ফিরলো সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন অফিস সময় পরিবর্তন হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটা আনা হয়েছে। ২০২২ সালে অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত করা হয়েছিল। আজ মন্ত্রিসভা আলোচনা করে অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুমোদন করেছে। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার অফিস সময় হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতি থাকবে। অফিসের সময়সূচিতে কেন পরিবর্তন আনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটাই তো স্বাভাবিক। ৯টা থেকে ৫টা আট ঘণ্টা কাজ করবো আমরা। সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করবো আমরা, আগে আমরা ৩৫ ঘণ্টা কাজ করতাম। সেটা একটা বিশেষ ব্যবস্থা ছিল, আমরা আবার মূল অবস্থানে চলে আসলাম। এটি ঈদুল আজহার ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবস থেকে কার্যকর হবে। আগে সরকারি কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতেন। জ্বালানি সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট থেকে কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দেয় সরকার। সে অনুযায়ী দুই মাসের বেশি সময় সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। দুই মাসেরও বেশি সময় সকাল ৮টা-বিকেল ৩টা সূচিতে অফিস চলার পর ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলছিল।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো.মাহবুব হোসেন জানান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানা স্থানান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শাহবাগ থানা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে শেরাটনের উল্টো দিকে সাকুরা রেস্তোরাঁর পেছনে নেওয়া হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শাহবাগ থানা স্থানান্তর করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন রমনা মৌজার সাকুরা রেস্টুরেন্টের স্থানে সরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শাহবাগ থানা স্থানান্তর করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন রমনা মৌজার সাকুরা রেস্টুরেন্টের স্থানে সরানোর বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১১ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে। স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের সুবিধার্থে প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তর থেকে শাহবাগ থানা সরানো জরুরি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শাহবাগ থানা স্থানান্তর করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন রমনা মৌজার সাকুরা রেস্টুরেন্টের স্থানে সরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন।

বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন॥
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় ‹বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন আইন, ২০১৪›-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। আইনের খসড়াটি ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই মেয়াদে সংসদের শেষ অধিবেশনে তারা সেটি উপস্থাপন করতে পারেননি। সে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে আজকে আবার উপস্থাপন করা হয়েছিল। আগে যা ছিল সেটিই উপস্থাপন করা হয়েছিল। আজকে মন্ত্রিসভা সেটি আবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। তিনি জানান, মন্ত্রিসভায় বৈঠকে ‹জাতীয় জীবনিরাপত্তা নীতি, ২০১৪› এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জীবনিরাপত্তা বিধিমালা ২০২২ আছে। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদেরকে বারবার বলা হচ্ছিল একটি নীতিমালা করার জন্য। সেই নীতিমালা করা হয়েছে।

দুই দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর আরোপ পরিহারে চুক্তি অনুসমর্থন॥
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, দুই দেশের সাথে দ্বৈত কর আরোপ পরিহারে চুক্তি অনুসমর্থন। নেদারল্যান্ডস ও মরিশাসের সঙ্গে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে হওয়া চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত সংশোধিত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যাতে দ্বৈত কর পরিহার করা হয়, সেজন্য আমাদের চুক্তি সই করতে হয়। এটি স্বাক্ষরের পর সেটি অনুসমর্থন করতে হয়। এটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গত ১২ মার্চ সই করা হয়েছিল, আজ অনুসমর্থন করা হলো।
বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে ভিসা চুক্তি॥

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়া সরকারের মধ্যে মিউচ্যুয়াল এক্সামশন অব ভিসা রিকারমেন্টস চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মাহবুব হোসেন বলেন, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২৯টি দেশের সঙ্গে এ রকম চুক্তি আছে। এটি নিয়ে আজকে ৩০টি হলো। এই চুক্তি করা ডিপ্ল্যোম্যাটিক এবং অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ৩০ দিন পরস্পর দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।