টানা মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাতে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক অঞ্চলে বন্যা অব্যাহত রয়েছে। প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানের অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসছে বাংলাদেশে ভাটির দিকে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বর্ষার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আরো সক্রিয় হয়ে এর প্রভাবে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত আরও বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি বেড়েই চলেছে। দেশের উত্তর জনপদের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি ক্রমাগত এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত উজান থেকে আসা ঢল-বানে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পায় ধীর গতিতে। উজানের অববাহিকায় ভারী বর্ষণে বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিম, অরুণাচল, মেঘালয় ও আসাম প্রদেশে ভয়াবহ বন্যাজনিত ঢল এবং হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের কারণে প্রধান নদ-নদীতে বাড়ছে পানি।
পাউবো’র নদ-নদী প্রবাহ পরিস্থিতি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকাল পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্রের ৩টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের সবক’টিতে ৩৮ থেকে ৪৪ সেন্টিমিটার পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যমুনা নদের ১০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের সবকটিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ১৪ থেকে ৪১ সেন্টিমিটার পরিমাণে। যদিও ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি এখনো বিপদসীমার যথেষ্ট নিচে অবস্থান করছে। উভয় প্রধান নদ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের আরও বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। উজানে ভারত নিজেদেরকে বন্যামুক্ত রাখতে বিভিন্ন বাঁধ, ব্যারাজের গেইটগুলো খুলে পানি ছেড়ে দেয় তাহলে হু হু করে ভাটিতে দেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি নিয়ে বন্যা ও ভাঙনের শঙ্কায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন নদীতীরের জনসাধারণ।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের ১১০টি নদ-নদীর পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪২টিতে হ্রাস ও ৮টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দিন রোববার ৫৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৭টিতে হ্রাস পায়। ৪টিতে অপরিবর্তিত থাকে।
গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিম, অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। এর মধ্যে আসামের গোয়ালপাড়ায় ১৭১, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১২২, আসামের দিব্রুগড়ে ৬২ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস : গতকাল আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষার বাহক দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আরো অগ্রসর হয়ে ছড়িয়ে পড়ার জন্য আবহাওয়াগত পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গা থেকে কমে আসতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। #