ঢাকায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ ধরন
১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
বাংলাদেশে গত বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহভাবে ছড়ানোর মূলে কাজ করেছে ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরনটি। মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশের বেশি এই ধরনে আক্রান্ত হয়েছিলেন সে সময়। তবে কক্সবাজার অঞ্চলটি ছিল এর ব্যতিক্রম। সেখানে ডেন-১-ও ছড়িয়েছিল বেশি মাত্রায়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় এসব কারণ উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য সাময়িকী আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে গত মঙ্গলবার এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গত বছর বাংলাদেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। মারা যান ১ হাজার ৭৫ জন মানুষ। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। তবে গত বছর যত রোগী এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হন বা মারা যান, তা আগের ২৩ বছরে হয়নি। আসলে গত বছরের প্রথম ৯ মাসের মধ্যেই রোগীর যত সংখ্যা ছিল, তা আগের ২৩ বছরের চেয়ে ছিল বেশি। গত বছর ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি তাই চিকিৎসক, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এর কারণ অনুসন্ধানে সেই অর্থে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। আইসিডিডিআরবির এ গবেষণা তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, এই গবেষণা আমাদের নতুন দিকের সন্ধান দিয়েছে। এর সঙ্গে নতুন কর্মপরিকল্পনা নিতে সহায়তা করতে পারে এই পর্যবেক্ষণগুলো। এ বছর যদি ডেন-২এর প্রাধান্য থাকে, তবে হয়তো ডেঙ্গু সেভাবে ছড়াবে না। কিন্তু ভিন্ন কোনো ধরনের প্রাধান্য হয়ে গেলে তা হবে মারাত্মক।
গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে এ গবেষণা হয়। এর জন্য ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রোগীদের বয়স ছিল ৫ থেকে ৬৫ বছর। যাদের ডেঙ্গুর উপসর্গ ছিল অর্থাৎ ২ থেকে ৫ দিনের জ্বর, শরীরে র্যাশ, হাড়ের ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়া আছে তাদের কাছে থেকেই এ নমুনা নেওয়া হয়। নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয় গ্রাম ও শহর দুই এলাকা থেকেই। গ্রামাঞ্চলের মধ্যে আছে বান্দরবানের আলীকদম, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কক্সবাজারের রামু, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা। আর শহরের মধ্যে আছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কক্সবাজার।
গবেষণায় দেখা যায়, মোট আক্রান্তের ৭৪ শতাংশই ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর ডেন-১এ ২০ শতাংশ, ডেন-৩-তে ৬ শতাংশ। কক্সবাজারের গ্রামাঞ্চলে অবশ্য মোট আক্রান্তের সবচেয়ে বেশি ডেন-১এ আক্রান্ত হন।
বাংলাদেশে একেক সময় একেক ধরন প্রাধান্যে থেকেছে। এর মধ্যে ২০০০ থেকে ২০০২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে প্রাধান্য ছিল ডেন-৩ ধরন। আর ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বেশি আক্রান্ত হয়েছে ডেন-৩তে, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবার নতুন করে ব্যাপক প্রকোপ শুরুর সময় প্রভাব বিস্তার করেছিল ডেন-৩ ই। তবে গত বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাওয়া সংক্রমণ ও মৃত্যুর বছরে ডেন-২এর প্রাধান্য ছিল।
আইসিডিডিআরবির গবেষণায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গুর ধরনের এই পরিবর্তন একটি অত্যন্ত কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মকৌশলের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এর পাশাপাশি ডেঙ্গুর সকল ধরনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে এমন একটি টিকার প্রয়োজনীয়তাও এটি তুলে ধরে।
আইসিডিডিআরবির এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সংক্রামক রোগ বিভাগের আন্ত্রিক এবং শ্বাসজনিত সংক্রমণ কর্মসূচির বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, ডেঙ্গুর একটি নির্দিষ্ট ধরন বা স্ট্রেইন সক্রিয় হয় ওঠে এবং কয়েক বছর ধরে প্রভাব বিস্তার করে। কেউ একবার একটি ধরন দিয়ে আক্রান্ত হলে পুনরায় সেই ধরন দিয়ে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম থাকে। মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত বছর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে ঢাকায়। আর সেখানে ডেন-২ ধরনটিই ছিল প্রাধান্যে। পরের বছরগুলোতে এখানে এ ধরনের প্রকোপ কমে যেতে পারে। তবে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ভিন্ন কোনো ধরনে আক্রান্ত হওয়া শুরু হলে সেটা হবে মারাত্মক। এ থেকে সুরক্ষায় ব্যক্তি পর্যায়ে সাবধানতার পাশাপাশি জোরদার মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি দরকার। গবেষণায় ভাইরাসের প্রাধান্যকারী ভিন্ন ধরনকে গত বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির মূল কারণ বলা হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে কয়েকটি কারণ। সেগুলো হলো শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার অতিরিক্তি ঘনত্ব, বিরামহীন বৃষ্টিসহ জলবায়ু পরিবর্তন, পরিকল্পনাহীন ব্যাপক নগরায়ন, মশা নিয়ন্ত্রণে অপর্যাপ্ত তৎপরতা ও ভ্রমণ বৃদ্ধি।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারি মাসে এনটোমোলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকার জার্নাল অব মেডিকেল এনটোমোলজিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সম্পর্ক উঠে আসে। গত ১৮ জানুয়ারি ‘টু ডিকেডস অব এনডেমিক ডেঙ্গু ইন বাংলাদেশ: ট্রেন্ডস, সিসোনালিটি অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট অব টেমপারেচার অ্যান্ড রেইনফল প্যাটার্নস অন ট্রান্সমিশন ডায়নামিকস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে দুই দশকে ডেঙ্গুর প্রকোপের সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তনের যোগসূত্র রয়েছে। চলতি শতকের প্রথম দশকের তুলনায় দ্বিতীয় দশকে দেশের তাপমাত্রা প্রায় আধা ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। দুই দশকে ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কমেছে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি। কিন্তু বর্ষার আগে -পরে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যেভাবে বিদেশি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল হাসিনা
শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত
গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আহত-৫
যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান
মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ
কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা
আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত
জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা
জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে - খোকন
মানিকগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মদিন পালিত
ভোরের কাগজ কর্মীদের মানববন্ধন পাঁচদিনের আল্টিমেটাম সাংবাদিক নেতাদের
৬ শতাধিক কৃষকের জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ গজায়নি, লোকসানের ঘানি টানছেন কৃষকেরা
শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
চিকিৎসক হয়রানি যেন অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের দুঃশাসনেরই প্রতিচ্ছবি: ডা. রফিকুল ইসলাম
৯ মাসে ইরান-কাতার বাণিজ্য ৫৩ ভাগ বেড়েছে
ইন্দুরকানীতে পাওয়ার ট্রিলারের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত
লাকসামে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা
আশুলিয়ায় হিজড়া সম্প্রদায়ের মানববন্ধন, ওরস শরীফে বাধা প্রদানের অভিযোগ