হক প্রতিষ্ঠার জন্যই ইমাম হুসাইন (রা.) শাহাদাত বরণ করেছিলেন
১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মুহাররম মাসের ফজিলতের কথা তুলে ধরে বলেন, ইমাম হুসাইন (রা.) হক প্রতিষ্ঠার জন্যই কারবালার ময়দানে পরিবার-পরিজন নিয়ে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। শোকাবহ এই দিনে (আশুরার) তাজিয়া, জুলুছ বের করা হায় হোসেন হায় হোসেন করার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব বিদআতের সাথে দ্বীনের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব কাজ করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। মুহাররম মাস শোকের মাস বলে এই মাসে বিবাহ-সাদী করা যাবে না এ ধরনের বিদআতে কান দেয়া যাবে না। ঢাকার উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ-এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবায় বলেন, চন্দ্র বছরের প্রথম মাস হলো মুহাররমুল হারাম। জিলকদ জিলহজ মুহাররম ও রজব মাস হলো হারাম মাস বা সম্মানিত মাস (সূরা তওবা-৩৬) রমজান শরীফের পর মুহাররম মাসের রোজা আল্লাহর কাছে বেশি দামি (সহীহ মুসলিম) আশুরার রোজা রাখলে আল্লাহ তায়ালা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন (সহীহ বুখারী) মুহাররমের ১০ তারিখ আশুরার রোজা রাখার জন্য নবী কারীম (সা.) নির্দেশ করেছেন (বুখারী ও মুসলিম) আশুরার রোজার সাথে ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখের রোজা রাখতে হয়, তবে নবী কারীম (সা.) ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মুহাররম মাসে দুটি আমল খুব ফজিলতপূর্ণ এক. রোজা রাখা, দুই. তওবা করা। এই সপ্তাহের সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার চার দিনের দুইদিন সাপ্তাহিক আর দুইদিন আশুরা হিসাবে মোট চারদিন রোজা পালন করে সুন্নত আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
৬১ হিজরীর ১০ মুহাররম হযরত হুসাইন (রা.)-এর নির্মম শাহাদাত নিশ্চয় মুসলিম উম্মাহের হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়। হজরত হুসাইন (রা.) হৃদয়বিদারক শাহাদাতের ঐতিহাসিক আলোচনায় শয়তানের প্রবঞ্চনায় ওহীর লেখক হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর সমালোচনা করা যাবে না। যে কোন সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করার অধিকার কোন উম্মতের নেই। সাহাবায়ে কেরাম উম্মতের মধ্যে রাজপুত্রের মর্যাদায় এবং তারা হকের মাপকাঠি। আল্লাহ সবাইকে ছহি বুঝ দান করুন। (আমিন)।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মুহাররম মাসের আজ পাঁচ তারিখ, এই মাসের সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমে আশুরা’ তথা মুহাররমের দশ তারিখ। হাদিসে আশুরার দিনের অনেক ফযীলত বিবৃত হয়েছে। এমনকি ইসলামপূর্ব আরব জাহেলী সমাজে এবং আহলে কিতাব- ইহুদি-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা।
মুহররম কেন্দ্রীক অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা প্রমাণিত, হযরত মুসা (আ:) ও তার উম্মত বনী ইসরায়েল সমুদ্র পার হয়ে নিরাপদে পৌঁছে ছিলেন আর ফিরআউন ও তার সঙ্গীরা সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুবরণ করে, এজন্য নবী মুসা (আ:) শোকরানা রোজা রেখেছেন। হিজরতের পরে প্রিয় নবী ইহুদিদের আমল দেখে বলেছিলেন আমরা মুসা (আ:)-এর অনুসরণ তোমাদের চেয়ে বেশি করব; নবী করীম (সা.) আরো বলেন, তোমরা ইহুদিদের বিরোধিতায় আশুরার রোজার সাথে মিলিয়ে আগে অথবা পরে নয় অথবা এগারো আরো একটি রোজা রাখো- ইবনে মাজাহ।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন-(জাহেলী সমাজে) লোকেরা রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোযা রাখত। এরপর যখন রমযানের রোযা ফরয হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে এ দিন রোযা রাখতে চায় সে রাখুক। যে না চায় না রাখুক।-সহীহ বুখারী, হাদিস-১৫৯২। এ হাদিসদ্বয় থেকে বুঝে আসে- জাহেলী সমাজে এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। এ দিনে তারা কাবা শরীফে গেলাফ জড়াতো। নবীজীও এ দিন রোযা রাখতেন। রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিনের রোযা ফরয ছিলো।
খতিব বলেন, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পর আশুরার দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। তবে এর চেয়ে উত্তম হলো, দশ মুহাররমের আগে বা পরে নয় বা এগার তারিখে একদিন অতিরিক্ত রোযা রাখা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার রোযা রাখছিলেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখতে বলেছিলেন তখন সাহাবীগণ বললেন-ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ দিনকে তো ইহুদি-নাসারারা সম্মান করে? তখন নবীজী বললেন-তাহলে আগামী বছর আমরা নয় তারিখেও রোযা রাখব- ইনশাআল্লাহ।-সহীহ মুসলিম, হাদিস-১১৩৪। তোমরা নয় তারিখ এবং দশ তারিখ রোযা রাখ এবং ইহুদিদের বিরোধিতা কর।-জামে তিরমিযী, হাদিস ৭৫৫ : মুহাররম ও আশুরা কেন্দ্রীক কিছু গর্হিত রেওয়াজ সমাজে প্রচলিত। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন : তোমরা এ দিনগুলোতে নিজেদের উপর জুলুম করো না।-সূরা তাওবা : ৩৬। বিশেষ করে, দশ মুহাররমে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতমের যে ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতির অবতারণা করা হয় তা তো খুবই গর্হিত একটি সংস্কৃতি। ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম মাতম ও শোক প্রকাশের এমন আয়োজনকে হারাম সাব্যস্ত করেছে। এর চেয়ে জঘন্য হলো, এ দিনে ‘তাযিয়া’র নামে শিরক-বিদআতের আয়োজন করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : বলুন! আমিকি তোমাদের সে সব লোকেদের সংবাদ দেবো, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে সব লোক যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে তারা সৎকর্ম করছে। সূরা কাহাফ: আয়াত-১০৩, ১০৪।
রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন গতকাল জুমার বয়ানে বলেছেন, ইসলামের দৃষ্টিতে আশুরা অর্থাৎ মুহররমের ১০ তারিখ একটি ফজিলতপূর্ণ দিন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিরে আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এটা সেই দিন যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনী ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তার সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।
উল্লেখিত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, বনী ইসরাঈলের উপর ফেরাউনের জুলুম-নির্যাতনের কারণে আল্লাহ ফেরাউনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা নির্যাতিত, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছে তাদের উপর নব্য ফেরাউনরা জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। তাই বর্তমান অত্যাচারীদের পতনও অনিবার্য। তিনি আরো বলেন, মুহররম মাসের ১০ তারিখ বা আশুরা সাধারণ মুসলমানদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে ঐতিহাসিক কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার কারণে। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহররম হযরত হোসাইন (রা.) অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন প্রতিহত করে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের শাসন খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণের মধ্যদিয়ে যে অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা পৃথিবীর মানুষকে ন্যায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাগিদ দিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। তাই পবিত্র আশুরার সুমহান ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে হযরত হোসাইন-এর অনুসারীদেরকে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইউল্যাবের হাল্ট প্রাইজ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ
আওয়ামী দুঃশাসনের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়: রিজভী আহমেদ
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার
নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর
থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার
জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন
ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে
বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু
রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ
বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা
মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির
সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা
জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম
সীমান্তে উসকানিদাতাদের চরম মূল্য দিতে হবে: আখতার হোসেন
সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাওয়ার নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ