তামাবিল স্থলবন্দর নিয়ন্ত্রণ করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম
ওরা ৪ জন ছিলেন স্থানীয় এমপি, সেই সাথে মন্ত্রী ইমরান আহমদের খলিফা। ছিলেন বেপরোয়া। স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত কিংবা সাধারণ মানুষ কাউকেই মানুষ বলে মনে করতেন না। এমনকি পাত্তা দিতে না আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের। গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব লুটেরা সিন্ডিকেট। জিম্মি করে রাখতো সাধারণ ব্যবসায়ীদের। গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের পাথরের রাজ্য ভোগ করেছিলেন তারা। সহযোগী ছিল স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী তামাবিল স্থল বন্দর সংশ্লিষ্টরা তোয়াজ করে চলতে হতো তাদের। নচেৎ লজ্জাজনক বদলি। এরমধ্যে পার হয়ে যায় দীর্ঘ ১৭ বছর। এই সময়ে কত সম্পদ তারা গড়েছে, নিজেরাও জানে না। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনে হতভম্ব তারা। এরমধ্যে খবর আসে তাদের আশ্রয়দাতা সিলেট-৪ আসনের সাবেক এমপি ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।
সাবেক এমপি ও মন্ত্রীর এই চার খলিফার মধ্যে অন্যতম জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও তামাবিল স্থলবন্দর চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী। তিনি ছিলেন এমপি ইমরানের স্বঘোষিত এপিএস। তিনি ছিলে তামাবিল স্থল বন্দরের ‘ডন’। তামাবিল স্থলবন্দরকে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন তিনি। কামিয়েছেন শত শত কোটি টাকার চেয়েও বেশি। দেশে ও ভারতে রয়েছেন পৃথক পৃথক স্ত্রী ও সম্পদ। সম্পদের বিস্তৃতি রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায়ও। লিয়াকত আলীর ক্ষমতার কাছে গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর থানা পুলিশ ছিল নির্দেশের গোলাম। নতুবা বদলি। থানার ওসি, এসিল্যান্ড ও ইউএনও পছন্দ করে আনতেন তারা। কারণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের এক ফোনেই সমাধাণ হয়ে যেত পোষ্টিং। পোষ্টিং পর কর্মকর্তারা কৃতজ্ঞতা দেখাতে কখনো কার্পণ্য করেনি। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা থাকলেও কে নাড়াবে সেই মামলা, তিনি মন্ত্রীর লোক।
তার অন্যান্য সহযোগীদের একজন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক জালাল উদ্দিন। কথিত এই ব্যবসায়ীরও সম্পদ বেহিসাব। দেশে ও ভারতে পৃথক স্ত্রী ও সম্পদের পাহাড়। তামাবিল স্থলবন্দরে যেভাবে খুশি সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনিও। কারণ মন্ত্রীর খাস খলিফাদের একজন তিনি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভারত থেকে কত পণ্য নিয়ে এসেছেন তার কোন হিসেব নেই। কারণ স্থানীয়ভাবে তাকে আটকাতে পারবে এমন কেউ থাকলেও অসহায়। একবার শুল্ক গোয়েন্দার হাতে ধরা খেয়ে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনেছিলেন। তারপর গড়ে তুলেন শুল্ক গোয়েন্দাদের সাথে খাতির। পরবর্তীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনিও।
একইভাবে ইমরান আহমদের খলিফাদের তালিকায় ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার হোসেন (ছেদু) ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ। সরকার দলীয় প্রভাবে তারা ছিলেন দেশের প্রচলিত নিয়ম কানুনের ঊর্ধ্বে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ছিলেন তাদের কাছে জিম্মি। তাদের মর্জি রক্ষা করতে না পারলে ব্যবসা বন্ধ। তাই ম্যানেজ করেই তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যবসায়িক কাজ করতে হতো তাদের। এভাবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই চার খলিফা। ৭ বারের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে, নির্বাচনী খরচ নিজে চালাতে হতো না। গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর থানা এলাকার খরচ তারাই বহন করতেন। সেকারণে সাবেক এই এমপি তাদের লুটপাঠের সুযোগ দিয়ে ঋণ শোধের চেষ্টা করতেন। পাথর কোয়ারী বন্ধে হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ বছর থেকে তামাবিল স্থলবন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য হয়ে উঠে তাদের মূল আখড়া। তারা সেখানে একক আধিপত্ব বজায় রাখেন। স্থল বন্দরে প্রতিদিন কাস্টমস এলাকায় লেবার হোল্ডিংয়ে নামে ১১০০ টাকা সার্ভিস চার্জ। প্রতি গাড়ি থেকে আরো ৫০০ টাকা নিতেন দলীয় চাঁদা। ট্রাকের মাল প্রতি টন ৪৭০ টাকা করে নিতেন বখরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন শুধু তামাবলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তার সাথে আতাঁত তরে প্রতিদিন চক্রটি প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করতো সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের নামে। এছাড়া আওয়ামী লীগের ওই নেতারা সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চোরাইপথে চিনি-পেঁয়াজ-গরু-মহিষসহ নানা পণ্য দেশের অভ্যন্তরে এনে ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশময়। তাদের এহেন তৎপরতায় দেশী চিনি শিল্প ধ্বংসের পথে। কেউ রুখার ছিল না তাদের। কারণ তাদের সরকার, মন্ত্রী, এমপি, পুলিশসহ সরকারি সব যন্ত্র। চিনি চোরাইয়ে ব্যবহার করেছেন সীমান্তের লোকজনসহ ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। চিনি কাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত কথা হয়েছে, তারপরও থামেনি চোরাইকারবার। দিন-দুপুরের ট্রাক ভর্তি চিনি লোড হয়ে আসতো। মাঝে মধ্যে জব্দের নামে হতো ‘আই ওয়াশ’। নৈপথ্যে ছিল, গাড়ি প্রতি বখরা নিয়ে বোঝাপাড়ার অভাব। তারপর ঠিকঠাক হয়ে গেলে আবার একই পথে সীমান্ত দিয়ে নামতো চিনির ঢল। প্রতিদিন কাঁচা পয়সার ধান্ধ্যায় ব্যস্ত থাকতেন এই চার খলিফা। তবে তাদের অবৈধ আয়ের ভাগ পৌঁছতো মন্ত্রীর হাতেও। ক্যাশিয়ার ছিলেন স্থানীয়ভাবে মন্ত্রী ইমরানের ঘনিষ্টজন ফয়জুল ইসলাম।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের পতন হলেও তামাবিল স্থলবন্দর এলাকায় এই চক্রটির প্রভাব কমেনি। সমান তালে চলছে তাদের লুটপাট। পরিস্থিতির এহেন আকস্মিতায় গ্রেফতার আতঙ্কে ও জনরোষে পড়ার ভয়ে যদিও গা ঢাকা দিয়েছেন তারা। কিন্তু দূর থেকে বিএনপির স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগীদের ম্যানেজ করে শেষ চেষ্টা করছেন স্থল বন্দরে আধিপত্ব রক্ষার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
৩১ ডিসেম্বর কী হতে যাচ্ছে? যা জানা গেল
পটুয়াখালীতে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল গণমিছিল
টোল প্লাজার দুর্ঘটনা সন্তান বেঁচে নেই, এখনও জানেন না বাবা-মা
নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত
শিল্পাচার্য জয়নাল আবদিনের ১১০ তম জন্মবার্ষিকী পালন
এশিয়ান যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ইরানি ভারোত্তোলকের স্বর্ণ জয়
রহমত ২৩১*, শাহিদি ১৪১*, বুলাওয়েতে ঐতিহাসিক দিন
এইচ এম কামরুজ্জামান খান সারা জীবন আধিপত্যবিরোধী রাজনীতি করে গেছেন
বন্দরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ধ্বংসের পায়তারা করছে আ.লীগের দোসররা
ময়মনসিংহে আলোচিত ‘বালু খেকো’ আওয়ামী লীগ নেতা জামাল গ্রেপ্তার
বিজয় দিবস রাগবিতে চ্যাম্পিয়ন সেনাবাহিনী
কোরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব- মামুনুল হক
বাংলাদেশে বেড়েই চলেছে খাদ্যপণ্যের দাম : বিশ্বব্যাংক
সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত
একইসময়ে রহস্যময় স্ট্যাটাস দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন আসিফ-হাসনাত!
দূতাবাসগুলোতে যাদের আচরণ খারাপ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিন: আসিফ নজরুল
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর