আদানি বিতর্ক ভারতের পর বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে : দ্য টেলিগ্রাফ

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ মার্চ ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫০ পিএম

আদানি পাওয়ার এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ এবং বিরোধী দলগুলোর বড় একটি অংশ। তারা চুক্তিটিকে ‘অপ্রয়োজনীয় এবং অন্যায্য’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতর একটি বেসরকারি কোম্পানির লাভের জন্য দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর যাতে ছায়া না পড়ে তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ গ্রহণে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহবোন জানাচ্ছে তারা।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসাগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই সময় বাংলাদেশে একটি ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে যে, ২৫ বছরের বিদ্যুৎ চুক্তিটি আসলে কোনো চুক্তি নয়, বরঞ্চ এটি আদানির জন্য একটি উপহার। আদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশের কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট শামসুল আলম ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের জন্য একটি আঘাত হতে পারে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, আমাদের কর্মকর্তারা একটি অলাভজনক চুক্তি করেছে। এর উদ্দেশ্য ভারতের একটি বেসরকারী সংস্থাকে মুনাফা অর্জনে সহায়তা করা, যার সঙ্গে আবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। এ ধারণার কারণে বাংলাদেশে ভারতের অবস্থান খারাপ হচ্ছে।
ভারতের কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলোও বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর এই চুক্তির প্রভাব নিয়ে একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশই ভারতকে কর্তৃত্ব-ফলানো প্রতিবেশী মনে করে। এখনও অবধি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে আসছে যে, একটি সার্বভৌম দেশ এবং একটি বেসরকারি কোম্পানির মধ্যেকার চুক্তির বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে তার ঢাকা সফরের সময় রূপরেখা দিয়েছিলেন যে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ এবং ট্রান্সমিশনে ভারতীয় কোম্পানিগুলির প্রবেশ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারে। এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিডিপিবি ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আদানির সঙ্গে চুক্তি করে। ২৫ বছর ধরে সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আমদানি হবে বাংলাদেশে।
প্রথম থেকেই কিছু বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, বাংলাদেশেরই নিজের চাহিদার তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এমন অবস্থায় আদানি গ্রæপের কয়লা-ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে সত্যিই বিদ্যুৎ আমদানির প্রয়োজন আছে কিনা। তবে দেশের বিদ্যুতের খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার কথা বলে সরকার এই উদ্বেগগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কিন্তু ১৬৩ পৃষ্ঠার বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি প্রকাশ্যে আসার পর গত কয়েক সপ্তাহে আদানি চুক্তি নিয়ে বচসা আরও জোরেশোরে বেড়েছে। গণমাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিক স¤প্রতি এই চুক্তি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট করে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে লেখা ওই রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, স্পষ্টতই আদানি পাওয়ারকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে এবং বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আদানি গ্রুপ যদিও এই অভিযোগ সম্পর্কে বলেছে যে, এখনও বিপিডিবিকে কোনো চার্জ করা হয়নি তারপরেও এ নিয়ে ‘প্রোপ্যাগান্ডা’ শুরু হয়েছে। এদিকে কয়লার জন্য উচ্চ মূল্য নির্ধারণের অভিযোগ নিয়ে আদানি পাওয়ার কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে যে, কয়লা-মূল্যের সমস্যাটি সমাধান তারা করবে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাংলাদেশে। এরইমধ্যে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আদানি বিরোধী সমালোচনায় যুক্ত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, কী ঘটছে তা বোঝার জন্য আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছিলাম। এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, আদানি এই চুক্তি থেকে উপকৃত হবে কারণ আমরা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করব। আমরা আমাদের সরকারকে দোষারোপ করছি এই ধরনের অলাভজনক চুক্তি করার জন্য। তারা (বাংলাদেশ সরকার) আদানীর স্বার্থ নিয়ে বেশি চিন্তিত। তিনি আরো বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা চুক্তির বিরুদ্ধে একটি বিশদ বিবৃতি নিয়ে আসছি। আমরা চুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করব।
আদানি-বিরোধী কণ্ঠস্বর জোরালো হলেও বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানায়নি। শিক্ষাবিদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বাংলাদেশের টেলিভিশন বিতর্কে বা প্রিন্ট মিডিয়াতে এই চুক্তির পক্ষে কথা বলে চলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য চুক্তিটি করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, আমাদের সরকার এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ প্রদান করেনি। সুতরাং, চুক্তি, কয়লার দাম বা ক্যাপাসিটি চার্জ সম্পর্কে এই সমস্ত প্রশ্ন অনুমানের উপর ভিত্তি করে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চুক্তিতে চেক এবং ব্যালেন্স রয়েছে যা নিশ্চিত করবে যে, গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুতের ব্যয় তুলনামূলক হারের চেয়ে বেশি হবে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা এর ব্যবসা সম্পর্কে আমাদের মন্তব্য করার কিছু নেই। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বিশ্বাস করি, চুক্তিতে কোনো ভুল নেই। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থের দিকে নজর দিয়েছেন এবং এটাই তার শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। ‘এনার্জি এন্ড পাওয়ার’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেনও একই কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, পিপিএ-তে কোনো বড় সমস্যা নেই। আদানি পাওয়ার যে হারে বিপিডিবিকে চার্জ করবে তা নিয়ে চলমান আলোচনা অর্থহীন কারণ কোম্পানিটি এখনও কোনো বিল পেশ করেনি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস ঢাকাসহ ১০ জেলায় : আবহাওয়া অধিদপ্তর
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
আমাদের মিশনগুলোকে প্রবাসীদের সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
চুরি ৭ জরিমানা ৭০ হাজার ডলার
আরও
X

আরও পড়ুন

লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় স্বামী-স্ত্রী আহত

লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় স্বামী-স্ত্রী আহত

ইয়েমেনের রাস ঈসা তেল বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত বেড়ে ৭৪

ইয়েমেনের রাস ঈসা তেল বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত বেড়ে ৭৪

বেগমগঞ্জে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী র‍্যাব-১১ হাতে গ্রেফতার, এলজি উদ্ধার

বেগমগঞ্জে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী র‍্যাব-১১ হাতে গ্রেফতার, এলজি উদ্ধার

পাকিস্তানজুড়ে কেএফসিতে হামলা, গ্রেপ্তার ১৭৮

পাকিস্তানজুড়ে কেএফসিতে হামলা, গ্রেপ্তার ১৭৮

দিল্লিতে ধ্বসে পড়লো চারতলা ভবন, নিহত ৪

দিল্লিতে ধ্বসে পড়লো চারতলা ভবন, নিহত ৪

নিউজিল্যান্ডের ‘টঙ্গারেওয়া স্কলারশিপ’, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সুযোগ

নিউজিল্যান্ডের ‘টঙ্গারেওয়া স্কলারশিপ’, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সুযোগ

“হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করব না”— নাঈম কাসেমের হুঁশিয়ারি

“হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করব না”— নাঈম কাসেমের হুঁশিয়ারি

আবারও বায়ু দূষণে শীর্ষে ঢাকা শহর, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছেই

আবারও বায়ু দূষণে শীর্ষে ঢাকা শহর, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছেই

অস্ত্র-গুলিসহ সুন্দরবনের দুই দস্যু আটক

অস্ত্র-গুলিসহ সুন্দরবনের দুই দস্যু আটক

আসাদকে সিরিয়ায় প্রত্যার্পণে রাশিয়ার অস্বীকৃতি, মস্কোর কৌশলে নতুন বার্তা

আসাদকে সিরিয়ায় প্রত্যার্পণে রাশিয়ার অস্বীকৃতি, মস্কোর কৌশলে নতুন বার্তা

ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দরে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুতিদের

ইসরাইলের প্রধান বিমানবন্দরে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুতিদের

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস ঢাকাসহ ১০ জেলায় : আবহাওয়া অধিদপ্তর

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আভাস ঢাকাসহ ১০ জেলায় : আবহাওয়া অধিদপ্তর

খামেনিকে ‘গোপন’ চিঠি দিলেন সউদী বাদশাহ, সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

খামেনিকে ‘গোপন’ চিঠি দিলেন সউদী বাদশাহ, সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

ভারতে 'জাতীয় জরুরি অবস্থা' জারি করা উচিত– ব্রায়ান জনসন

ভারতে 'জাতীয় জরুরি অবস্থা' জারি করা উচিত– ব্রায়ান জনসন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত

রুশ নাগরিকের মুক্তিতে হামাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পুতিন

রুশ নাগরিকের মুক্তিতে হামাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পুতিন

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনেই নিহত ৬৪ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনেই নিহত ৬৪ ফিলিস্তিনি

যেখানে টেন্ডুলকারের ছাড়িয়ে গেলেন পাতিদার

যেখানে টেন্ডুলকারের ছাড়িয়ে গেলেন পাতিদার

আমাদের মিশনগুলোকে প্রবাসীদের সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমাদের মিশনগুলোকে প্রবাসীদের সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মানিকগঞ্জে ভুল চিকিৎসার রোগীর মৃত্যু

মানিকগঞ্জে ভুল চিকিৎসার রোগীর মৃত্যু