ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

সন্তানদের শিক্ষার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রতি আরও বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

৩০ মে ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম

 বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এর ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমানে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ঠ পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি- আমরা এটা করতে পারব।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকার প্রধান বলেন, ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ্ব সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে।
তিনি বলেন, সে যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্যান্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি- এ হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ।
তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন- যাতে করে তারা এক্ষেত্রে আরো অবদান রাখতে পারেন।’
৪র্থ শিল্প বিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অফ থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসি’র মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
এছাড়াও এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি ও বক্তব্য রাখেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।
আইইউটি বাংলাদেশের একটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-যা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) এর অর্থায়নে পরিচালিত হয়।
আইইউটি’র মূল উদ্দেশ্য হল ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মানবসম্পদ উন্নয়নে-বিশেষ করে প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রাখা।
আইইউটি ওআইসিভূক্ত সদস্য দেশগুলো থেকে সরাসরি অনুদান পায় এবং ছাত্রদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান, বোর্ডিং, বাসস্থান ও চিকিৎসা প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ওআইসির সব এজেন্ডা ও কর্মকান্ডে সার্বক্ষণিক সমর্থন দিয়ে আসছে।
আমরা আইইউটি-এর গর্বিত হোস্ট, এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং আমরা আইইউটি-এর মসৃণ কার্যকারিতার জন্য যে কোনও ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি, তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই যে ভবিষ্যতেও আইইউটিকে সমর্থন করার বিষয়ে আমরা এটি বজায় রাখার অঙ্গীকার করছি।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে আজকের গ্রাজুয়েটরা আগামী দিনে বিশ্বের প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখবে।
দেশের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা আগামী ১ জুন একটি নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন এবং এর আকার হবে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি।
দেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করার কারণে বিদ্যমান অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে, যার ফলে বাংলাদেশে আজ স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ঝড় এসেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও আমি বলব, দেশ যখন স্থিতিশীল থাকবে, দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে, তখনই দেশ সমৃদ্ধ হতে পারবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তৎকালীন বিএনপি আমলের উন্নয়ন কর্মকান্ডের তুলনা ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শাসনামলে ২০০৬ সালে বাজেট ছিল মাত্র ৬১,০০০ কোটি টাকা, আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া অর্থবছরের বাজেট বেড়েছে ৬ লাখ কোটি (গত অর্থবছর) টাকা। ।
তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে (বিএনপি আমলে) জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বর্তমানে তা ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
এদিকে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার, যা ২০২২ সালে ২,৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যার গড় আয়ু ৫৭ বছর (বিএনপি আমল) থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে এবং গত সাড়ে ১৪ বছরে শিশুমৃত্যু হার কমেছে প্রতি হাজারে ২১, এবং গর্ভাবস্থা জনিত মৃত্যুহার প্রতি ১ লাখে ১২৩ কমেছে।
সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। এই স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনসংখ্যা, একটি স্মার্ট সমাজ এবং একটি স্মার্ট জনশক্তি থাকবে।
তিনি বলেন, তারা দেশের জনসংখ্যাকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হতে শেখাবেন যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে দক্ষতার সঙ্গে অবদান রাখতে পারে।

সূত্র: বাসস


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন