সংবর্ধনা নিতে অস্বীকৃতি, অবসরে ‘দেশকে জাহান্নাম’ বলা বিচারপতি আজাদ
১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫৪ পিএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০১:৫০ পিএম
দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলা হয়েছে-মর্মে মন্তব্যকারী হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদ কোনো বিদায় সংবর্ধনা নেবেন না। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে তিনি এ কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। আজ ( রোববার) ছিলো তার শেষ কর্মদিবস। সুপ্রিম কোর্টেও রীতি অনুযায়ী শেষ কর্মদিবসে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি থেকে বিদায়ী বিচারপতিকে সংর্বধনা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সেই রেওয়াজের ধার না ধেরে সংবর্ধনা না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এক চিঠির মাধ্যমে তিনি প্রশাসনকে এ কথা জানিয়েও দিয়েছেন।
রেজিস্ট্রার জেনারেল দফতর সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপতিদের যে সংবর্ধনা দেয়া হয় ওই সংবর্ধনাও তিনি নেবেন না। তবে প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা তাকে ফুল ও ক্রেস্ট পৌঁছে দেবেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর ‘ দেশটাকে তো জাহান্নামে বানিয়ে ফেলেছেন’ মর্মে সরকারপক্ষীয় আইনজীবীর উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদ। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানের জামিন শুনানির বিরোধিতা করলে সরকারপক্ষীয় আইনজীবীর উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। তার মন্তব্য সংবিধান বহির্ভুত মন্তব্য করেছেন এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন-মর্মে বিষয়টি প্রধান বচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অবহিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন।
প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করার পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরণের মন্তব্য সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অত্যন্ত গর্হিত। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমি আশা করি প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। কারণ এ ধরনের মন্তব্য করলে দেশের মানুষের কাছে বিচার বিভাগ সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা হতে পারে। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মানুষ বিচার বিভাগ নিয়ে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছেন। এখন বিচারক যদি এ ধরণের মন্তব্য করেন তখন এটা আরো বেশি যড়যন্ত্রকারীদের কাজে দেবে। হাইকোর্টের একজন বিচারপতি যে অসাংবিধানিক শব্দ ব্যবহার করেছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, সে কারণে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নেবেন পরে প্রধান বিচারপতি বিচারপতি ইমদাদুল হককে খাস কামরায় ডেকে পাঠান। এসময় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তাকে কথা-বার্তায় আরও যতœশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার সংস্করণে একজন বিচারপতির মন্তব্য সম্বলিত প্রতিবেদনটি দেখতে পেলাম। একটি মামলার ফৌজদারি আপিল শুনানিকালে বিচারপতির এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের মন্তব্য করে ওই বিচারপতি সংবিধানবলে যে শপথ নিয়েছিলেন তা ভঙ্গ করেছেন। এ ধরনের মন্তব্য সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অত্যন্ত গর্হিত। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমি আশা করি প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। কারণ এ ধরনের মন্তব্য করলে দেশের মানুষের কাছে বিচার বিভাগ সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা হতে পারে। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মানুষ বিচার বিভাগ নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছেন। এখন বিচারক যদি এ ধরনের মন্তব্য করেন তখন এটা আরো বেশি যড়যন্ত্রকারীদের কাজে দেবে।
আমিন উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের একজন বিচারপতি যে অসাংবিধানিক শব্দ ব্যবহার করেছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, সে কারণে প্রধান বিচারপতি ব্যবস্থা নেবেন বলে আমি মনে করি। অনলাইন পত্রিকার কপি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর আগে, আজ (মঙ্গলবার) সকালে অধিকারের সম্পাদক আদিলুর ও পরিচালক এলানের জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদালত তাদের উদ্দেশে বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন। বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শুরুতে আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানি করতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি এখনই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?
এরপর আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আদালত জানতে চান, জামিনের আবেদন দেওয়া হয়েছে কি না? আইনজীবী বলেন, দেওয়া আছে।
এসময় আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না?
আরও কিছু মন্তব্যের পর এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
এরপর আদালত মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর ও পরিচালক এলানকে জামিন দেন। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন।
প্রসঙ্গত, মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে করা মামলায় অধিকারের সম্পাদক আদিলুর ও পরিচালক এলানকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন