‘ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ভুটানের রাজা’
২৫ মার্চ ২০২৪, ০২:৪০ পিএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪, ০২:৪০ পিএম
তরুণ যুবরাজ ফুটবলের পাগল। খেলেন গোলকিপার হিসেবে। ম্যাচের পর ম্যাচ খেলেন কিন্তু কখনো গোল খান না। কারণ কি? চিন্তা করে যুবরাজ দেখলেন, তার দল গোল দেয় কিন্তু কখনও খায় না। যেহেতু গোলরক্ষক যুবরাজ, তাই তাকে সম্মান দেখিয়ে গোলপোস্টের সামনে বল এলেও প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা অন্যদিকে পাঠিয়ে দেন। সেদিনই প্রিয় ফুটবল খেলা ছেড়ে দেন যুবরাজ।
গল্পটি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের। তরুণ বয়সে তিনি দেশটির প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ খেলতেন। সাদামাটা জীবন-যাপনের এমন অনেক গল্প আছে ভুটানের রাজাকে নিয়ে। গণতন্ত্রের জোয়ারের মধ্যেও জনদরদি রাজা হিসেবে বিশ্বে সুনাম আছে জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম বিদেশি অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে আসছেন ভুটানের রাজা। চার দিনের সফরে আজ সোমবার (২৫ মার্চ) ঢাকায় পা রাখেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে তার।
ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফরের জন্য স্বাধীনতার মাসের চেয়ে আর ভালো সময় কি-ই বা হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশ ভুটান। আর তাই মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের সমর্থন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ভুটান সুখী দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই দেশের সাধারণ জনগণ রাজাকে বেশ মান্য করেন। সেই রাজা ১১ বছর পর যখন বাংলাদেশে আসছেন, তখন দুই দেশের জনগণই আশা করছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক অন্যরকম উচ্চতায় যাবে।
‘সুখী’ ভুটানের রাজা ও রাজ্য শাসন কেমন
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরই আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভুটান। দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আধুনিক ভুটান শাসন করে প্রায় ১১৫ বছরের পুরনো ওয়াংচুক রাজপরিবার। ১৭ হাজার ৩০০ বর্গমাইলের দেশটির জনসংখ্যা প্রায় আট লাখ। রাজধানী থিম্পু। মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলারের বেশি।
রাজা এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরিষদ মিলেমিশে দেশ পরিচালনা করে। দেশটির জনগণ আইন মেনে চলে। গণতন্ত্রের জোয়ারের মধ্যেও ভুটানের জনগণ তাদের রাজাকে ভালোবাসে। রাজতন্ত্র তাদের অনেকেরই পছন্দ।
২০০৬ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক রাজ্যভার গ্রহণ করেন। ২৮ বছর বয়সে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তিনি ইতিহাসের অন্যতম কনিষ্ঠ রাজা হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত থেকে পড়াশুনা করে আসা রাজা তরুণ বয়সে সিংহাসনে আসীন হলেও এর জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
১৬ বছর রাজ্য চালানোর পর ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগের আগে তার পিতা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুক ছেলেকে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছিলেন।
তার নেতৃত্বে ভুটানের প্রজারা ভালো আছেন, এমনটাই ধারণা দেশটির বাসিন্দাদের। নিজের বিয়ের মধ্য দিয়েও বর্তমান রাজা তেমন বার্তাই দিয়েছেন।
২০০৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি নেয়া রাজা একদম সাধারণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করেন। এরমধ্য দিয়ে তিনি দেশটির রাজনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজপরিবারের প্রথা ভাঙতেও পিছপা হবেন না, এমন বার্তাই দেন।
মোট জাতীয় উৎপাদনের বিকল্প হিসাবে রাজা গিজমে খেসার ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ ধারণাটি সামনে নিয়ে আসেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, একটি জাতির সমৃদ্ধির নির্ভরযোগ্য লক্ষণ হল- তার নাগরিকদের সুখী করার ক্ষমতা।
এছাড়া জিগমে খেসার, তার সুদর্শন চেহারার জন্য পরিচিত। তাকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ‘প্রিন্স চার্মিং’ বলে থাকেন।
বাংলাদেশ ও ভুটানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়েছিল ভুটান। আর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার তালিকাতেও দেশটির নাম সবার প্রথমে। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর যে দুটি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল তার একটি ছিল ভুটান, অন্যটি ভারত।
দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভিত্তিকে জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক। যিনি বর্তমান রাজার বাবা।
ওই সফরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুটানের রাজার বৈঠকে একমত পোষণ করা হয় যে, সব সম্পর্কের নীতি হবে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি, পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।
পরবর্তীকালে দুদেশের সম্পর্ক এসব নীতির ওপর ভিত্তি করেই আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং ভুটানের বর্তমান রাজাও দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ভুটান সফর করেন। এ ছাড়া ২০১০ সালে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অনুষ্ঠিত সার্কের ১৬তম শীর্ষ বৈঠকে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
আর ভুটানের রাজা ২০১১ সালের মার্চে এবং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন। সার্কের চেয়ারপার্সন হিসাবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুককে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হয়।
ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং। তার সঙ্গেও বাংলাদেশের অন্যরকম সম্পর্ক। তিনি ময়মনসিংহের মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যার ওপর পড়াশোনা করেছেন। তাই রাজার বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও উচ্চমাত্রা পাবে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজার সফরে যে সব সমঝোতা হতে পারে
উত্তরবঙ্গের জেলা কুড়িগ্রামে ভুটানের বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। এছাড়া বিদ্যুৎ, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিষয়টি সফরে আলোচিত হতে পারে।
এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, কৃষি খাত বিশেষ করে ফলজাতীয় পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আছে ভুটান। বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগের জন্য কুড়িগ্রামে ভুটানকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেয়া হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে রাজার এই সফরে এই বিষয়ে একটি চূড়ান্ত চুক্তি সই হবে।
আগামী ২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে জিটুজিভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনের কথা রয়েছে তার। অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভারত দিয়ে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এছাড়া ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ এবং এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবারের সফরে। ভুটানের একটি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট করে দেয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এবং আশা করা হচ্ছে এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই সফরে নেয়া হবে।
এছাড়া পানি, বিদ্যুৎ এবং কানেক্টিভিটি নিয়েও এবারের সফরে অনেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন