টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সিলেটের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নামতে শুরু করেছে। এতে করে ভেসে উঠছে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া অনেক জায়গা। এদিকে, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির আরো কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কিছু কিছু ওয়ার্ডে এখনো পানি রয়েছে। ওইসব এলাকাসহ আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে এখনো ত্রাণ সেবা অব্যাহত রেখেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে গতকাল দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১০.৭২ সেন্টিমিটারে নেমে এসেছে এবং ৩০.৮ মি.মি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৪ দিন টানা বর্ষণ না হলে সুরমা নদীর পানি আরো কমে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট পাউবো নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সিলেটের বিভিন্ন নদীর পানি আস্তে আস্তে কমছে। যদিও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কানাইঘাটের সুরমা পয়েন্টের পানির বিপদসীমার ১২ দশমিক ৭৫ হলেও তা ১৩ দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারার অমলশিদ পয়েন্টে বর্তমানে ১৫ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার কুশিয়ারা পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার থাকলেও বর্তমানে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু সুরমার সিলেট পয়েন্টে আজ ভোর থেকে পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচে এসেছে।
গতকাল থেকে সিলেট নগরীর বন্যার পানি কমলেও অনেক স্থানে আবদ্ধ হয়ে থাকা পানি সরছে না। ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত এসব পানি কালো রং ধারণ করেছে। যেসব স্থান থেকে পানি সরে গেছে সেসব স্থানে পঁচা-গলা ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। ফলে নগরীতে দুর্গন্ধ ও দূষণ বেড়েছে। গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর তালতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। আশপাশের কিছু দোকান থেকে পানি সরে গেলেও তালতলা পয়েন্টে এখনো হাঁটু সমান পানিতে আবদ্ধ হয়ে আছে। নগরীর উপশহর, কানিশাইল, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, যতরপুর, মিরাবাজার ও বাগবাড়ী এলাকার কিছু অংশে এখনো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এসব এলাকায় কালো ছাই রংয়ের দুর্গন্ধযুক্ত এ পানি দিয়ে হেঁটে এবং রিকশা ও অটোরিকশা সিএনজি দিয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া মানুষ অনেকেই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে সিসিকের পক্ষ থেকে এখনো আশ্রয় কেন্দ্রগুলো রান্না করা খাবরসহ বিভিন্ন ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, মহানগরীর প্রায় ২৮টি ওয়ার্ডে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত¡াবধানে বেশ কয়টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। সেখানে নিয়মিত রান্না করা খাবার ও ওষুধ সামগ্রী প্রদান করা হয়।
এদিকে, সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে সোমবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫২ দশমিক ২ মিলিমিটার। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে মোট ৫৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৮ জন অবস্থান করছেন।
সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, উজানের পানি ভাটির দিকে নামার কারণে সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার কিছুটা বিস্তৃতি ঘটেছে। সার্বিক ভাবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অতিবৃষ্টি এবং উজানের ঢল নামা পুনরায় শুরু হলে পরিস্থিতি আবারো অবনতি হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।