বাজেটে ঋণ নির্ভরতা : চাপ বাড়াবে অর্থনীতিতে
০৫ জুন ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ১২:১০ এএম
অনুশাসনহীন ব্যয় বন্ধ করতে হবে -ড. আবদুল মজিদ
বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন -ড. আহসান এইচ মনসুর
প্রায় এক তৃতীয়াংশের মতো অর্থ ধার করে আসন্ন অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে সরকার। টাকার অংকে এই বাজেট ঘাটতির পরিমান আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। যা জিডিপির ৫ শতাংশের কিছুটা কম। এর বড় অংশই স্থানীয় ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ করে মেটানো হবে। যদিও ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘাটতি মেটাতে ঋণ নির্ভরতা অর্থনীতিতে চাপ বাড়াবে।
আসন্ন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেট তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে আয়ের লক্ষ্য ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। সেই হিসেবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকাই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। চলতি সংশোধিত বাজেটে যা আছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ আর ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৯ গুণ। আসন্ন বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। আর নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্য প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, বৈদেশিক সহযোগীতা, সাহায্য আমাদের প্রয়োজন আছে। এখনও নিজেদের অর্থে কাঙ্খিত উন্নয়ণগুলো আমরা করতে পারি না। সেখানে আপনারা দেখবেন আমরা যে লোনগুলো নিচ্ছি সেগুলো কি পর্যায়ের লোন। হার্ড লোন নেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু নিরুৎসাহীত করা হয়েছে, আমরা নিচ্ছিও না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আয়ের দুর্বলতায় সরকারি ব্যয়ের সক্ষমতা কমছে। তাই জিডিপির অনুপাতে বাজেটে ঋণ ৫ শতাংশের ঘরে থাকলেও পরিশোধের ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই ঋণের টাকাগুলো আমরা যেখানে খাটাই, সেখান থেকে খুব দ্রæত আয় আসার সম্ভাবনা থাকে না। মেগা প্রকল্পগুলো দেখলেই এটা পরিস্কার বোঝা যায়, সেহতু সরকার ক্রমান্বয়ে ঋণের ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছে, দায়–দেনার ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছে। টেকসই যে ঋণনীতি দরকার বা বৈদেশিক সাহায্যনীতি দরকার সেটার আমরা প্রকাশ্য কোনো চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি না। ঘাটতি পূরণে ঋণ নির্ভরতা কমাতে আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকেই রাজস্ব আহরণ এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
দুটি কারণে বাজেটের আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য আসছে না বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রধান সংস্থা এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, ব্যয়ের বাজেট বাড়ানো হচ্ছে। সেখানে সুশাসন বা কৃচ্ছতাসাধন বা ব্যয় সাশ্রয়ী চর্চা হচ্ছে না। তার বিপরীতে উচ্চাভিলাষী বাজেট দেওয়া হচ্ছে এবং খরচ বাড়িয়েই যাচ্ছি। অবিলম্বে অনুশাসনহীন ব্যয় বন্ধ করতে হবে। সরকারি বিভিন্ন কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেন খরচ বাড়িয়ে কেনা না হয়, যে বছরের প্রকল্প সে বছরেই শেষ করতে হবে। প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে খরচ বাড়ানো যাবে না।
অর্থনীতির বিশ্লেষক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়িয়ে সরকার গুরুত্বপূর্র্ণ খাতগুলোতে বরাদ্দ দিতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। সরকার প্রশাসনে কিছু সংস্কার করুক, যেটার মাধ্যমে ব্যয় কমানো সম্ভব। এতগুলো মন্ত্রণালয় রাখার কোনো দরকার নেই। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মত দপ্তর রেখে রেখে বড় ধরনের ব্যয় করা হচ্ছে। এগুলো আস্তে আস্তে উঠিয়ে দেওয়া দরকার। একটি মন্ত্রণালয়ের সাথে যে বিশাল বাহিনী, গাড়ির বহর- এগুলোর দরকার নেই।
ব্যয় ব্যবস্থাতে পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়ে অর্থনীতির শিক্ষক ও গবেষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, চ্যালেঞ্জে থাকা অর্থনীতির চাপ কমাতে খরচের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে, যা সরকার করতে পারছে না। টাকা খরচ করাটাই মূল নয়। সঠিকভাবে বরাদ্দ হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। আমাদের যেহেতু আয় কম, তাই খুব বেশি ব্যয় করার উপায় নেই। কোন খাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেখানে খরচ আগে করতে হবে। অপচয় না করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সুফল পাবে, সেই জায়গাটিতে ব্যয় করতে হবে।#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারসহ ৩ জনের দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকি অভিযান
অধিবেশনে যোগ দেয়ায় ড. ইউনূসকে জাতিসঙ্ঘের শুভেচ্ছা
বিএসএফ জওয়ানকে আটক করেছে বিজিবি
আশুলিয়ায় আজও বন্ধ ৫৫ কারখানা
লুটপাট-দুর্নীতিই নওফেলের ‘নীতি’ : বিশ্ববিদ্যালয় দখল, নিয়োগ বাণিজ্যে সম্পদ বেড়ে দশগুণ
টাকা না ছাপিয়ে, ডলার বিক্রি না করে আর্থিক খাত ঠিক করা হচ্ছে -গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর
অন্তর্বর্তী সরকারকে কোন মতেই ব্যার্থ হতে দেয়া যাবেনা - কক্সবাজার সালাহউদ্দিন আহমদ
চাঁবিপ্রবি’র জন্য দীপু মনি গংদের দখলকৃত শত শত একর কৃষিজমি-বসতবাড়ি এখন পতিত ভূমি
অর্থপাচার নিয়ে আইএমএফ এর সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ
আন্দোলনে আহতদের দেখতে ঢামেকে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল
নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক
পটুয়াখালীর বাউফলে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কিশোরীকে শালীনতা হানির অপচেষ্টার ঘটনায় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে দেশীয় অস্ত্র ও গাঁজা সহ গ্রেফতার
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কি বন্ধ করা উচিত?
সাবেক এমপি ফজলে করিম দুই দিনের রিমান্ডে
যশোরের সাবেক পুলিশের কর্মকর্তা টিএসআই রফিকুলের সম্পদের পাহাড়!
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার সালমান-আনিসুল-শাহজাহান-সাদেক
কার্যকর হলো বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া
আবারও রিমান্ডে সাবেক আইজিপি মামুন
লেবাননে স্মরণকালের হামলার পর জনগণকে ভিডিও বার্তা নেতানিয়াহুর