কোয়ার্টজে ক্ষতিকর উপাদান তদন্তে মাইক্রোবায়োলজিস্ট
০৫ জুন ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ১২:১০ এএম
রহিম স্টিল মিলসে উৎপাদিত কোয়ার্টজ পাউডারের কারণে শতাধিক শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মাইক্রো বায়োলজির ডীনকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এসএম নেওয়াজ মোর্শেদ।
শুনানিতে আইনজীবী এস এম নেওয়াজ মোরশেদ বলেন, রহিম স্টিল মিলে ‘কোয়ার্টজ পাউডার’ উৎপাদন করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ সময় বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি আইনজীবীর কাছে জানতে চান- কোয়ার্টজ পাউডার আসলে কী ? জবাবে ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোর্শেদ বলেন, এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান। এ প্রসঙ্গে আইনজীবী বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত এ বিষয়ক প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, রহিম স্টিল মিলসে কোয়ার্টজ পাউডার উৎপাদন করা হয়। এই পাউডার উৎপাদন করতে গিয়ে এক দশকে অন্তত: ১শ’ শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
পরে আদালত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মাইক্রোবায়োলজির ডীনের নেতৃত্বে এক সদস্যেওর তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এ কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল দৈনিক ইনকিলাবে ‘রহিম স্টিল মিলে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু : ক্ষতিপূরণ ও বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটির ভিত্তিতে দায়ের করা হয় রিট। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান রাসেল বাদী হয়ে জনস্বার্থে এ রিট করেন। রিটের বিষয়ে ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোর্শেদ বলেন, আমরা ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ, শতাধিক শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, মৃত শ্রমিক পরিবারগুলোর বর্তমান অবস্থা নিরূপণ, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান, জীবীত, অসুস্থ শ্রমিকদের ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা চেয়েছি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, জলবায়ু ও পরিবেশ মন্ত্রণায়ের সচিব, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, রহিম স্টিল মিলস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
ইনকিলাব প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে রহিম স্টিল মিলসে। ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আরেকটি জাতীয় দৈনিকে ‘রহিম স্টিল মিলে মৃত্যুকূপ/১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু: অসুস্থ দুই শতাধিক’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ভুক্তভোগীদের কাছে ছুটে যায়। পরিবেশবাদীরাও সোচ্চার হন। শ্রমিক সংগঠনগুলো বিবৃতি দেয়। রাজধানীতে মিছিল ও মানববন্ধন হয়। ‘কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর’ তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে তদন্ত চালায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তৎকালিন অতিরিক্ত জেলা জজ শরীফউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের উচ্চতর কমিটি তদন্ত করে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিবেশ অধিদপ্তর রহিম স্টিল মিল কর্তৃপক্ষ তখন প্রাণঘাতি কোয়ার্টয উৎপাদনকারী ‘মৃত্যুকূপ’ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চললেও কিছু দিন যেতেই মিলিয়ে যায় সব তৎপরতা। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৮ বছর অতিক্রম হতে চললেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদনগুলো।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘রহিম স্টিল মিলস লিমিটেডের’ ক্রাশিং সেকশনে কাজ করে ১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ কিংবা মৃত্যুপথযাত্রী আরও দুই শতাধিক। প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক হিসেবে যিনি ২ মাস কাজ করেন, তার মৃত্যু ছিলো অবধারিত। রোলিং মিলে এবং পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কোয়ার্টয পাউডার’। চুনা পাথর, বরিক পাউডার, পটাশিয়ামসহ কয়েক ধরনের কেমিক্যালের সংমিশ্রণে উৎপাদন করা হতো কোয়ার্টয পাউডার। এ পাউডার এক সময় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হতো। পরে রহিম স্টিল মিলস কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পাথর মেশিনে গুঁড়া করে কোয়ার্টয উৎপাদন শুরু করে। প্রয়োজনীয় টুকুন নিজেরা ব্যবহার করে বেশিরভাগ বিক্রি করা হয় অন্যান্য রি- রোলিং মিলস, সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও পার্টিকেল বোর্ড ফ্যাক্টরিতে।
যদিও রোলিং মিলে পাথর গুঁড়া করার কোনো অনুমোদন ছিল না। প্রতিবেদককে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামেস্ট্রির তৎকালীন প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সালান জানিয়েছিলেন, কোয়ার্টযের ডাস্ট মানব দেহে প্রবেশ করলে ফুঁসফুঁসে রক্ত জমে যায়। চোখ শুকিয়ে যায়। ডার্মাটাইটিজ, আর্থাটাইটিজ হয়। লক্ষণ স্বরূপ আক্রান্ত শ্রমিকের শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি, চর্মরোগ, চুলকানি, জ্বর ও শীর্ণকায় হয়ে যান। চূড়ান্ত পরিণতিতে ঘটে মৃত্যু। কোনো ওষুধেই কাজ না হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি হয়ে গেছে এক ‘অচেনা রোগ’। অচেনা রোগে নারায়ণগঞ্জ, সোনার গাঁও উপজেলার বাঘরি দক্ষিণপাড়া গ্রামে এক পরিবারেই মৃত্যু হয় ৪ শ্রমিকের। উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়ন, সনমানদী, কাঁচপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মারা যান ১২ জন। বাঘরি পশ্চিমপাড়া গ্রামে মারা যান তোতা মিয়া, আবুল কাসেম, গুলবাহার, নূরুল ইসলাম ও জাহের আলী। বাঘরি উত্তর পাড়া, দক্ষিণপাড়া এবং পূর্ব পাড়ায় মারা গেছেন আরো অন্তত ১১ জন। নাজিরপুর বাংলাবাজার গ্রামে মারা গেছেন কয়েকজন। এসব নীরব মৃত্যুর বিষয়ে দায়ী রহিম স্টিল মিলস কর্তৃপক্ষ কোনো দায়-দায়িত্বই নিচ্ছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কুলাউড়ায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
'দেশে ফিরলে সাকিবকে হেনস্তা করা হবে না'
যবিপ্রবিসহ চার বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ
যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারসহ ৩ জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদকের
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকি অভিযান
অধিবেশনে যোগ দেয়ায় ড. ইউনূসকে জাতিসঙ্ঘের শুভেচ্ছা
বিএসএফ জওয়ানকে আটক করেছে বিজিবি
আশুলিয়ায় আজও বন্ধ ৫৫ কারখানা
লুটপাট-দুর্নীতিই নওফেলের ‘নীতি’ : বিশ্ববিদ্যালয় দখল, নিয়োগ বাণিজ্যে সম্পদ বেড়ে দশগুণ
টাকা না ছাপিয়ে, ডলার বিক্রি না করে আর্থিক খাত ঠিক করা হচ্ছে -গোলটেবিল বৈঠকে গভর্নর
অন্তর্বর্তী সরকারকে কোন মতেই ব্যার্থ হতে দেয়া যাবেনা - কক্সবাজার সালাহউদ্দিন আহমদ
চাঁবিপ্রবি’র জন্য দীপু মনি গংদের দখলকৃত শত শত একর কৃষিজমি-বসতবাড়ি এখন পতিত ভূমি
অর্থপাচার নিয়ে আইএমএফ এর সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ
আন্দোলনে আহতদের দেখতে ঢামেকে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল
নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক
পটুয়াখালীর বাউফলে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কিশোরীকে শালীনতা হানির অপচেষ্টার ঘটনায় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে দেশীয় অস্ত্র ও গাঁজা সহ গ্রেফতার
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কি বন্ধ করা উচিত?
সাবেক এমপি ফজলে করিম দুই দিনের রিমান্ডে
যশোরের সাবেক পুলিশের কর্মকর্তা টিএসআই রফিকুলের সম্পদের পাহাড়!
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার সালমান-আনিসুল-শাহজাহান-সাদেক