ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ রেখে গেছে হাসিনা সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

 

ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। ক্ষমতায় থাকাকালে বাছবিচার না করে একের পর এক বিদেশি ঋণ নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন (১০ হাজার ৩৭৯ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই সময় অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বছর ৮ মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর শুধু শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।

সরকারি খাতের বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নিজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ঋণ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ। এর মধ্যে ৮৩.২১ বিলিয়ন (৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা) সরকারের নেওয়া। বাকি ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়। বেশি হারে সুদ ও কঠিন শর্তে নেওয়া এসব ঋণ সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে চাপে পড়ছে মানুষ।

চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলার। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন (৯ হাজার ৯৩ কোটি) ডলার। অর্থাৎ তিন মাসেই প্রায় ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিদেশি ঋণও নেওয়া হয়েছে। তবে এসব ঋণের বেশির ভাগই নেওয়া হয়েছে দর–কষাকষি ও বাছবিচারহীনভাবে; যা সরকারের দায়-দেনা পরিস্থিতিতে চাপ বাড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার পর মার্কিন সুদের হার বেড়ে যায়। এতে বিদেশি ঋণে সুদের হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি দেশের টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের ফলে বিপাকে পড়ে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। এজন্য বিদেশি ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধে মনোযোগী হয় তারা। কিন্তু ডলারের দর স্থিতিশীল হওয়া ও দেশে ঋণে সুদের হার বাড়তে থাকায় ব্যবসায়ীরা ফের বিদেশি ঋণ নিতে শুরু করেছে।

ব্যয়বহুল প্রকল্প, সাবেক সরকারের ঋণের স্ফীতি ও পুঁজি পাচার নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত করেছে কিংবা বাস্তবায়ন করছে তারমধ্যে অন্যতম পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এসব করতে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দুঃখজনক হলো, এসব ঋণের অর্থে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যখন সম্পন্ন হবে তখন প্রকল্পগুলোর আয় থেকে ঋণের কিস্তির অতি সামান্য অংশই পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এখন ‘সাপ্লায়ার’স ক্রেডিট’। সাপ্লায়ার’স ক্রেডিটের অসুবিধে হলো যোগানদাতারা প্রকল্পের প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ঋণ হিসেবে দেওয়ার সময় প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাজার দামের চাইতে অনেক বেশি দাম ধরে ঋণের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেয়। আরও গুরুতর হলো, সাপ্লায়ার’স ক্রেডিটে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ব্যবসায়ী ও আমলাদের ‘মার্জিনের হার’ অনেক বেশি হয়ে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে সাপ্লায়ার’স ক্রেডিটের প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশ।

এসব সমস্যার সমাধানে সরকারকে দুর্নীতি, পুঁজি-লুণ্ঠন ও পুঁজি-বাজারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন মইনুল ইসলাম। এ জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অবিলম্বে কঠোরভাবে হুন্ডি ব্যবস্থা দমন। কারণ, হুন্ডি পদ্ধতিতে বিদেশে থেকে যাওয়া ডলার বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা কেনার ক্ষেত্রে চাহিদার প্রধান অংশটাই আসছে দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনীতিবিদ এবং ব্যাংকঋণ লুটেরাদের পক্ষ থেকে। কঠোরভাবে দুর্নীতি দমন না করলে পুঁজি পাচার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

ওবায়দুল কাদের ও মির্জা’সহ ৭৩জনকে আসামি করে মামলা

ওবায়দুল কাদের ও মির্জা’সহ ৭৩জনকে আসামি করে মামলা

গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনও নিউজিল্যান্ডের

গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনও নিউজিল্যান্ডের

অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন

অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন

স্বাচ্ছন্দ্যময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত রিভো নিয়ে এলো ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল এ০১ ও সি০৩

স্বাচ্ছন্দ্যময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত রিভো নিয়ে এলো ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল এ০১ ও সি০৩

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই: ডিআইজি

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই: ডিআইজি

ডিসির কাছে অবহিত করতে হবে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পাওয়া সেনাকর্মকর্তাদের

ডিসির কাছে অবহিত করতে হবে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পাওয়া সেনাকর্মকর্তাদের

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে ৩ কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে ৩ কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি

স্থিতিশীলতার পরিবেশ রক্ষায় দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে - খেলাফত মজলিস

স্থিতিশীলতার পরিবেশ রক্ষায় দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে - খেলাফত মজলিস

ঢাবির হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সারজিসের স্ট্যাটাস

ঢাবির হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সারজিসের স্ট্যাটাস

আবু সাঈদ হত্যায় বেরোবি আরেকটি হত্যা মামলা করবে: বেরোবি ভিসি

আবু সাঈদ হত্যায় বেরোবি আরেকটি হত্যা মামলা করবে: বেরোবি ভিসি

গণপিটুনিতে বেশি মেরেছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল

গণপিটুনিতে বেশি মেরেছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল

২ শিক্ষিকার অব্যাহতির দাবিতে রাবির প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করল মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা

২ শিক্ষিকার অব্যাহতির দাবিতে রাবির প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করল মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা

ঢাবির হলে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় তোলপাড়

ঢাবির হলে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় তোলপাড়

সালাউদ্দিন চৌধুরীর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে অপপ্রচার, থানায় জিডি

সালাউদ্দিন চৌধুরীর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে অপপ্রচার, থানায় জিডি

বিজয়নগরে পূর্ব বিরোধকে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ১৫

বিজয়নগরে পূর্ব বিরোধকে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ১৫

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ ও ইউএনএইডস এবং ইউএন ভলান্টিয়ার এর প্রতিনিধিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ ও ইউএনএইডস এবং ইউএন ভলান্টিয়ার এর প্রতিনিধিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ