খুনীদের দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করছেন কতিপয় কর্মকর্তা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
গোয়েন্দা সংস্থাকে ঢেলে সাজাতে না পারলে ছাত্র জনতার বিপ্লব-আন্দোলন সব বৃথা যাবে। বাসার চারদিকে সুরক্ষা প্রাচীর করে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে, ভবনের ছাদে স্নাইপার রেখে ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না যদি বেডরুমে বসে থাকা শত্রুকেই চিহ্নিত করতে না পারেন। মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। খুনীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। গত সপ্তাহে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি সংস্থার গোয়েন্দা অতি গোপনীয় প্রতিবেদন এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ওই প্রতিবেদনে এনএসআই ও এসবির মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের ক্যডারদের এখনও মাঠ পর্যায়ে থেকে দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিগত সময়ের মতো এখনও ছাত্রলীগ কর্মী বা ক্যাডার হিসেবে যারা এনএসআই ও এসবিতে নিয়োগ বা পদায়ন হয়েছেন তারা এখনও ব্যাংক পাড়া, হাইকোটসহ আদালত পাড়া এবং রাজধানীসহ সারাদেশে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এক দিকে যেমন মাঠের সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়, তেমনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। দ্রুত মাঠ পর্যায়ে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ ডেক্স থেকে সরিয়ে কমগুরুত্বপূর্ণ ডেক্সে পদায়ন করে পেশাদার কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
দুর্নীতির স্বার্থে বিগত সরকার গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করেছিল বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে জাতীয় সংসদ। কিন্তু বিগত সরকার সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত করায় সংসদ এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে ওই সময় দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি অপরাধেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা ছিল।
দীর্ঘ সময় বঞ্চিত থাকার পর পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান সরকার চাইলে এসব কোনো বিষয় নয়। ধীরে পদায়ন প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কিন্তু তারা এখনও সক্রিয় থাকায় সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার পরিচালনায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। এনএসআই ও এসবির মতো দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ে সাবেক সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। তারা বিগত সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় সতীর্থ। তাদের সরানোর দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্যোগই নেই বলে দাবি করছেন আগের সরকারের বঞ্চিত কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার রিপোর্টের ভিত্তিতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। যে রিপোর্ট রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রাথমিক ভিত্তি। বিগত আওয়ামী সরকারের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ে দলীয় লোকের নিয়োগ বা পদায়ন করা হয়েছে। একই সাথে সচিবালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংক পাড়া, আদালতপাড়া এমনকি সর্বোচ্চ আদালতেও গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদ্বির বা চাপ প্রয়োগ করে কাজ আদায় ছিল চোখে পড়ার মত। সরকার পরিবর্তনের ফলে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ ও উচ্চ পর্যায়ে রদবদল হলেও মাঠ পর্যায়ের অতিদলীয় কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে। এসব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিরপেক্ষ রিপোর্ট পাওয়া কখনোই সম্ভব নয় বলে মনে করেন সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দলীয়, গোষ্ঠীগত ও সরকারের আনুগত্যের কারণে অনেক সময়ই রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে। এজন্য এখনই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে শতভাগ পেশাদারিত্ব, সততা ও রাষ্ট্র-জনগনের প্রতি আনুগত্যের বিষয়টি নিশ্চিত করা আবশ্যক। বিগত সরকারের সময় আয়নাঘর ও খুন-গুমের সাথে জড়িত ছিলেন বিভিণœ গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায় ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ফলে মারাত্বকভাবে গোয়েন্দা সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষণœ হয়েছে দেশে-বিদেশে।
সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত অতিদলীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সরিয়ে যারা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন তাদের পদায়ন করা আবশ্যক। অন্যতায় সঠিক ও নিরপেক্ষ রিপোর্ট সিদ্ধান্তগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছাবে না। এতে করে একদিকে সরকারকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন ব্যহত হবে। অন্যদিকে নিরাপরাধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কক্সবাজারে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাল- জামায়াত নেতৃবৃন্দ
হাবের বিতর্কিত কমিটিকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে বৈষম্য বিরোধী হজ এজেন্সীর মালিকবৃন্দ
অপপ্রচারের প্রতিবাদ জামপুর বিএনপি নেতার
একদিনের ব্যবধানে বাড়ল সোনার দাম
জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩২ জনের জামিনের আদেশ বাতিল
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের রক্ষক ছিলেন দুদকের আবু বকর সিদ্দিক
চিরিরবন্দরে সম্প্রীতির ফুটবল ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
সোনালী অতীত ক্লাবের পদ ছাড়লেন গাফফার
পোশাক কারখানাগুলোতে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে -বিজিএমইএ
চকরিয়ায় সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যায় জড়িত ৬ জন আটক
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুই শ’কোটি টাকা আত্মসাত
জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল আর নেই
শ্রীপুরে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে যুবদল-কৃষকদলের সংঘর্ষ
পোশাক কারখানাগুলোতে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়েছে-বিজিএমইএ
চকরিয়ায় সেনা সদস্য তানজিম হত্যায় জড়িত ডাকাতদের স্বীকারোক্তি
বিআরটিএ-র সকল অভিযোগ দ্রুত সমাধান করা হবে ঃ গৌতম চন্দ্র পাল
বন্দিদশা থেকে মুক্তি চান শরীর গঠন বিদরা!
আসন্ন দূর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা জামায়াতের সাথে পূজা কমিটির মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ভুঁইয়া পরিবারের
১৫তম বিসিএস ফোরামের আহবায়ক কমিটি গঠন