ইসকনের প্রাণঘাতি তাণ্ডব: ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ পিএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে সংগঠনটির উগ্র কর্মী-সমর্থকরা। এসময় তারা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নৃশংসভাবে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। ভাঙচুর চালানো হয় মসজিদেও।
গোয়েন্দা তথ্য ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারত ও তাদের দোসর পতিত স্বৈরাচারের ইন্ধনেই বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে উগ্রবাদী ইসকন কর্মীরা। তাদের এই তাণ্ডবকে আরও উস্কে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সোশাল মিডিয়ায়।
নেটিজেনদের অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত সময়টিভিতে আইনজীবী হত্যার বিষয়টি ভুলভাবে প্রচার করা হয়। ‘চট্টগ্রামে আইনজীবীকে হিন্দু ভেবে হত্যা করেছে দুষ্কৃতিকারীরা’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর উস্কানি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। চ্যানেলটির লাইভ সম্প্রচারেও পরিকল্পিতভাবে ভুল তথ্য দেওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এছাড়াও কিছু ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যমে ইসকন সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের সংবাদ এড়িয়ে যাওয়া হয়। কয়েকটি দোসর মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করলেও ইসকনপন্থীদের তাণ্ডবের চিত্র যথাযথভাবে না তুলে ধরায় দেশপ্রেমী জনতার মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
প্রকাশ্যে ইসকন সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইনজীবীদের ওপর সহিংস তাণ্ডব চালালেও একটি চ্যানেলে প্রচার করা হয় তাদের ওপরেই নাকি চড়াও হয়েছে প্রশাসন। ইসকন কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে আদালত পাড়ায় সহিংস হামলা চালালেও ফ্যাসিস্ট মিডিয়ায় তাদের ভুক্তভোগী হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালায়। এসব কারণে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করে অতিদ্রুত গণমাধ্যমকে সংস্কার করার জোর দাবি উঠেছে সব মহল থেকে।
এদিকে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার ঘটনায় ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উগ্রবাদি সংগঠনটি নিষিদ্ধের জোর দাবি উঠেছে।
ফ্যাসিবাদের দোসর গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের ক্ষোভ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নানা কারণে মানুষের অনেক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেন মানুষ তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, এটি স্পষ্ট করা সাংবাদিকদের এবং ওই গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘তাদের উচিত আলোচনায় বসা। নিজেদের অবস্থান, কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করা উচিত। গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব আছে। ল অ্যান্ড অর্ডারে গেলে সরকার অবশ্যই তার দায়িত্ব পালন করবে। পত্রিকা অফিস ভাঙচুর বা চাপ প্রয়োগ করা হলে আমরা মেনে নেব না। সেটা অবশ্যই আইনগতভাবে দেখা হবে। কিন্তু জনগণের ক্ষুব্ধতা থাকলে তারা সভা-সমাবেশ করবে। তবে সেটি যেন শান্তিপূর্ণভাবে করে।’
ফেসবুকে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, সময় টিভি সময় মত হাজির হয়েছে। এতে অবশ্য সময় টিভির কোন দোষ নেই। বরং সময় টিভির অসময়ে যারা টিভির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তাদের দোষ। শুধু এক সময় নয়, অসময়ে মালিকানার অংশীদারিত্ব নিয়ে বা মালিকদের চেক নিয়ে নিজেদের পছন্দের লোক শীর্ষে বসিয়ে যারা 'আমাদের টিভি' সার্টিফিকেট দিচ্ছেন- এটা তাদের দোষ। অসময় একটু সুসময় হলে সব সময়ই তার আসল চেহারা দেখিয়ে দেবে।
সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল লিখেছেন, দুএকটা টিভি চ্যানেলের আমূল সংস্কার এই মুহূর্তে ফরজ হয়ে গেছে। নয়লে এ দেশে সাংবাদিক পরিচয়ই দেওয়া যাবে না। তাছাড়া এরা কথিত ভুল সংবাদ দিয়ে দাঙ্গাও বাধিয়ে দিতে পারে।
ফেসবুকে পোস্টে ‘সাংবাদিকতা বনাম মিডিয়া ট্রায়াল, কিছু তিক্ত কথা’ শিরোনামে রেদওয়ানুল হক লিখেছেন, ‘ভারতে মুসলিম মেরে ছাপাছাপা করে ফেললেও খবর বেড় হয় না। মাঝেমধ্যে সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে কিছু খবর আসে। অথচ আমাদের মিডিয়ার সংখ্যালঘু প্রেম এত বেশি যে এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এখন মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে। চেম্বারের নিচ থেকে তুলে নিয়ে গলা কেটে হ/ত্যা করার পরও বাংলাদেশের বেশিরভাগ সংবাদপত্র "সংঘর্ষে আইনজীবী নিহত" শিরোনাম করেছে।
বাংলাদেশের মিডিয়াকে গণমানুষের কথা বলা শিখতে হবে। যেখানে জনগণ হবে সংবাদমাধ্যমের রক্ষাকারী এবং বন্ধু, সেখানে গণমাধ্যম গণবিরোধী অবস্থান নিতে পারেনা। দেশ ও জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতা করলে পুলিশ দিয়ে বেশি দিন সুরক্ষা দেওয়া যাবে না। ইতোমধ্যে মাঠে ঘাটে সাংবাদিকরা জনগণের হাতে মার খাওয়া শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমের শীর্ষ কর্তারা যদি কর্মীদের বিপদে ফেলে নিজেরা এসি রুমে বসে ঘৃণ্য রাজনৈতিক চর্চায় লিপ্ত হন তাহলে গণমাধ্যমকর্মীদেরও অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। গণমাধ্যম গণমানুষের হোক।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আদালত চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন নামঞ্জুর করার সাথে সাথে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ভাংচুর চালানো হয় নির্বিচারে। মসজিদে হামলা করা হয় এবং নিরীহ মুসল্লিদের আহত করা হয়। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে মুসলমানদের উদ্দেশ করে গালিগালাজ এবং হামলার জন্য টার্গেট করা হয়। পাশাপাশি তারা প্রিজনভ্যান আটকে চিন্ময় কৃষ্ণকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ
এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান
শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!
সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি
কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০
দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার
পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন
তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ
গণহত্যাকারীদের বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে: সারজিস
দ্বিতীয় চালানে ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার টন চাল
গাঁজা সেবনের অভিযোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
উইন্ডিজ সিরিজে পাকিস্তান দলে ৭ পরিবর্তন, নেই আফ্রিদি
সুইজারল্যান্ডে গ্লোবাল এসএমই সামিট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩-২৫ এপ্রিল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসিম : সিলেটে কাইয়ুম চৌধুরী
ডার্ক ওয়েবে গ্রাহকের তথ্য বিক্রির অভিযোগ : সিটি ব্যাংকের ব্যাখ্যা
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ‘বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত
গফরগাঁওয়ে বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধুর মৃত্যু