সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ঈদ যাত্রায় মহা-টেনশন !
১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:০২ এএম | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০৫ পিএম

৬ লেনে উন্নীত হচ্ছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক রোড। স্বপ্নের এ বাস্তব পথে উন্নয়ন দূভোর্গে চুরমার জনজীবন। মিনিটের পথ পার হচ্ছে না ঘন্টায়ও। আসন্ন ঈদে এই সড়ক পথ সৃষ্টি করছে নানা শঙ্কার। ভয়াবহ যানজটের মুখে পড়তে যাচ্ছে বা যাবে এটাই এখন অনিবার্য সত্য। চলমান ছয় লেনের উন্নয়নকাজের ভাঙ্গা গড়ায় যানচলাচলে এমনিতেই শম্বুক গতি। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সিলেটে পৌঁছাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেই সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টায়। তাইও নিশ্চিত- অনিশ্চিতের দোলাচালে বন্দি। সময়ের এ হিসেব বিশেষ উপলক্ষ্যে ব্যতীত-ই।
কিন্তু সামনে ঈদ উৎসব। তাই নীড়ে ফেরার পালা। দিনক্ষণের এ যাত্রা, ঘড়ির কাঁটার মতো গুণতে থাকে মানুষ। সেকারনে বাড়তি যানবাহনের চাপ থাকবেই মহা-সড়কে। কিন্তু মহা-সড়কের বিদ্যমান পরিস্থিতি হয়তো আনুমানিক ঘন্টার হিসেবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০ ঘন্টা থেকে ২২ ঘন্টার আনুমানিক এ যেন এক দূভোর্গ যাত্রা, কত ঘন্টায় শেষ হবে তা বলা মুসকিল। উন্নয়নযজ্ঞের এমন সময়ে, টোল প্লাজা কেন্দ্রিক একটি দূভোর্গ জগদ্দল পাথরের মতো চেপে রেখেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। সেই টোল প্লাজার মধ্যে প্রধানতম সমস্যা হলো সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের টোল প্লাজা। প্রতিদিন টোল আদায় প্রক্রিয়ায় ২ ঘন্টা করে গাড়ি প্রতি কর্মঘন্টা নষ্ট করছে এ টোল প্লাজায়। মহা-সড়ক যানবান্ধব পরিবেশের বিপরীতে সংশ্লিষ্টদের এমন ব্যবস্থাপনা নি:সন্দেহে জনস্বার্থ বিরোধী। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। কিন্তু এ টোল যানবান্ধব করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। তাই মহা-সড়কে যানজট মুক্ত পরিবেশ রক্ষায় বিরাট বাঁধা এই টোল প্লাজা, এমন দাবী পরিবহন সংশ্লিদের।
সেকারনে গত ৯ মার্চ সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি পত্র প্রদান করছে সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতি। সমিতির সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ ও সেক্রেটারি মো: আমিনুজ্জামান জোয়াহির স্বাক্ষরিত এ পত্রে বলা হয়েছে, সিলেট-ঢাকা মহা-সড়কের শেরপুর সেতুল টোল আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে মহা-সড়কে চলাচলকারী গাড়ির মালিক-শ্রমিক সহ যাত্রী সাধারনের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রতিদিন বিশেষ করে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উভয় প্রান্তে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ টোল আদায়ের জন্য নতুন লেন এর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে শেষ হওয়ার পরও অদ্যবিদ ০১ (এক) লেন এর মাধ্যমে টোল আদায়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে মহাসড়কে উন্নয়ন কার্যক্রমের কারনে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যানজট। পত্রে আরও বলা হয়, শেরপুর টোল আদায় ০২ (দুই) লেনে চালু করা হোক। এতে ঈদুল ফিতর ও পরবর্তী সময়ে কিছুটা হলেও যানজট মুক্ত পরিবেশ ফিরবে এ সড়কে। পত্রে নেতৃবৃন্দ দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান। ,
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মহা-সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট নিয়মিত ঘটনা। ঈদের সময়ে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ সময় আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ঈদযাত্রা ২০ থেকে ২২ ঘণ্টার দীর্ঘ ভোগান্তিতে রূপ নিতে পারে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেইট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোল প্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতেই বেসামাল যেন, উত্তরণে কোন পথে খোলা নেই। কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, মহা-সড়কে যানজটের অন্যতম কারণ ধীরগতির নির্মাণকাজ, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা। তারা অনুপযোগী চলাচল পথ সাময়িক হলেও সংস্কার করে গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে না। অথচ রাস্তা উন্নয়নে বিকল্প ব্যবস্থা দুনিয়ার স্বীকৃতনীতি। কিন্তু সেই ব্যবস্থা গ্রহন হচ্ছে না সিলেট-ঢাকা মহা-সড়কে। সেই সাথে সড়ক নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা একেবারে হতাশাজনক। ডাকাতি ঘটছে, প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয় পুলিশ। রাতের বেলায় এমন অপরাধ রুখতে চিহ্নিত স্থানগুলোতে টইল পুলিশ সক্রিয় থাকলে ঠেকানো সম্ভব হতো ডাকাতি সহ যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কিন্তু তা করছে না, হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় থানা পুলিশ। তাই সড়কে নিরাপত্তা ঝুঁকি ক্রমশ: বাড়ছে। বিশেষ করে ঈদকে কেন্দ্র করে বিরাজ করছে অজানা শঙ্কা।
এনা পরিবহনের বাস চালাক শফিক মিয়া ( ৫১) বলেন, "ঢাকা থেকে সিলেটে সাধারণ সময়ে যেতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগত। এখন সেই সময় তিনগুণ বেড়ে গেছে। ঈদের সময় গাড়ির চাপ বাড়লে ২২ ঘণ্টার কমে গন্তব্যে পৌঁছা কঠিন হবে। এছাড়া তিনি বলেন," শুধু যানজটই নয়, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, আমরাও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
সিলেট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, "ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও মহাসড়কের সংস্কার কাজের ধীরগতি যানজটের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে, যা যাত্রীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।" ৫ আগস্টের পূর্বে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের টেনশন ছিল না। কিন্ত ৫ আগস্টের পর পুলিশ আছে, হাইওয়ে পুলিশ আছে, কিন্তু তাদের যেন কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা উদাসীন। রুটিন ডিউটি শেষ করতে পারলেই শেষ। মনে হচ্ছে মূল্যায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের মধ্যে। সেকারনে পরিবহন ও যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে নেই গরজ তাদের। তাই যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ, সেই সাথে সড়ক পথে ডাকাতদের রুখতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। এছাড়া ওলিপুর, মাদবপুর ও শাহাবাজপুর এলাকায় ডাকাতির ঘটনা চরম উৎকন্ঠা ছড়াচ্ছে। যে পুলিশ ডাকাতি রুখতে আগে পেরেছে, সেই পুলিশ এখন কেন ভাবলেশহীন, সেই প্রশ্ন আজ।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পরিবহন সমিতির সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ বলেন, সিলেট-ঢাকা সড়কের দূরবস্থা ভূক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না। উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তার ব্যবহার এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া পরিকল্পনাহীন ভাংগা গড়া। সব মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। তিনি বলেন, সড়কে একেবারে শৃঙ্খলা নেই। মুষ্টিমেয় মালিকদের স্বার্থে ওভার লোড নিয়ে গাড়ি চলছে, এতে ৩০ টন লোড বহনে উপযোগী রাস্তা বুকে ৫৫ থেকে ৬০ টনের মাল বোঝাই গাড়ি চলছে। ভাংগা রাস্তার মধ্যে এ যেন এক অপ্রত্যাশিত এক বাস্তবিক গজব। অথচ ওভার লোডের এধরনের গাড়ি চলাচল অবৈধ। অপরদিকে রাস্তার পাশে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন / খাল পাশের জমির মালিকরা নিজ স্বার্থে তাদের মতো করে ভরাট করে ফেলেছে। সরকারী খাল / ড্রেনের উপর অবৈধ এ কর্তৃত্ব রুখতে ব্যর্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেকারনে বৃষ্টি হলে পানি রাস্তায় আটকে সড়ক দুর্ঘটনাকে যেন আমন্ত্রণ জানায়। এমন অপতৎপরতা মোকাবেলা করা খুবই জরুরী। সড়ক বিভাগ রাস্তা উন্নয়ন কেবল নয়, ড্রেন / খাল রক্ষায় দ্রুত পদক্ষপে নেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার পত্র দিয়েছি বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে। পত্রটি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এছাড়া যানজট ও ডাকাতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নেয়ার দাবী করছি আমরা। তিনি বলেন, যেকোন উৎসব উপলক্ষ্যে বিশেষ করে ঈদুল ফিতর বা আযহা। এ সময় সিলেটের বাইর থেকে নতুন নতুন ব্যানারে গাড়ি সংযুক্ত হয় সিলেট থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রী নিয়ে ছুটতে। এ গাড়ি গুলো মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা সিলেটে পথ ঘাটে এ গাড়ি যেমন নতুন, তেমনি নতুন চালকরাও। তারা রাস্তা সর্ম্পকে অনেকটা অনভিজ্ঞ। পাকিং সহ পথের পূর্ব ধারনা না থাকায় তারা প্রায় দুর্ঘটনায় পতিত হন। তিনি বলেন, মৌসুমি এ গাড়ি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে অচিরেই পদক্ষেপ গ্রহন করবো আমরা। সেই সাথে এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা ও সিলেট রিজিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি মো: খাইরুল আলম বলেন, "ঈদের সময় মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যানজট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা।"
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাউজানে যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা

দৌলতখানে ছাত্রদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

এমবাপ্পের জোড়া গোলে শীর্ষে রিয়াল

যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর তাণ্ডব, নিহত ১০

সিরিয়ার লাতাকিয়ায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৩

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ৭টি সরকারি সংস্থা বিলুপ্তির পথে

দুইবার লিড নিলেও আত্মঘাতী গোলে ম্যানসিটির ড্রয়ের হতাশা

ব্যাংককে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে ধসে নিহত ৫

কুরস্ক মুক্ত করছে রাশিয়া

সংসদে যান সেখানেই হবে মূল সংস্কার : নাহিদকে ফারুক

ইতিমধ্যে বাজারে ছেড়েছে ৪০ লাখ টাকা

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ কমেছে ২৫ ভাগ

আইন শৃঙ্খলার উন্নতিতে আরো কঠোর হতে হবে খেলাফত মজলিস

আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ছাত্রদল নেতার উদ্যোগে ঢাবিতে কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা

ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাই সমাজকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারে

গণমিছিল স্থগিত করেছে বামপন্থী সংগঠনগুলো

‘রমজান আসে কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে মানুষকে পরিশীলিত করতে’

বন্দরে গার্মেন্টসে ডাকাতির ঘটনায় বিএনপি নেতার গাড়ি চালক গ্রেফতার

পাঁচবিবিতে ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু