জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস: জুনে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে
২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব, জাতির সামনে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা। এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এজন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কাজে খুবই ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের মতামত তুলে ধরছেন। কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে-সেসব তারা জানাচ্ছেন। এটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত সুখকর বিষয় যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছে। গুজব জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার, তাদের প্রতিহত করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, আপনারা জানেন ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার কাজ এখন চলমান আছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যে সকল বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং তার একটা তালিকা প্রস্তুত করা। যে সকল দল এতে একমত হয়েছে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া। এই তালিকাটিই হবে জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে উল্লেখ করে আগামী জুনের মধ্যে এটি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের; যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত নারীর আত্মত্যাগ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এই বীরদের প্রতি আমার সালাম।
সেইসঙ্গে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত হাজারো শহীদ ও আহত, যারা বৈষম্য, শোষণ, নির্যাতন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের প্রতি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আমি সশ্রদ্ধ সালাম জানাচ্ছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এনে দিয়েছে, সে সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে চাই। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জোর ব্যবস্থা নিয়েছে। রমজান ও ঈদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জিনিসপত্রের দামের লাগাম টেনে ধরা, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এ রমজানে যাতে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে না যায় এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। রমজান মাসজুড়ে সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। দেশের সকল জায়গা থেকে খবর এসেছে যে, এই রমজানে দ্রব্যমূল্য আগের তুলনায় কমেছে, জনগণ স্বস্তি পেয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে এই প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা যে ভয়াবহ লুটপাট কায়েম করেছিল; আপনারা সেটার ভুক্তভোগী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তারা পালিয়ে যাবার সময় এক লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি রেখে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, ক্রমান্বয়ে অর্থনীতির অপরাপর সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করছে। এ সরকারের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ৯.৩২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা ২২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী জুন মাসের মধ্যে এটি ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করছি।
দেশের ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ রেকর্ড গড়েছে, প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আমাদের দেশের অর্থনীতি গড়ার বীর সৈনিক। তাদের জন্য প্রক্রিয়াগত যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো সহজ করে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। তারা যেন ভোগান্তির শিকার না হন, দূতাবাস যেন ঠিকমতো কাজ করে, এটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আগামী নির্বাচনে যেন তাদের ভোটাধিকার দিতে পারি সেজন্য কাজ করছি।
পলাতক সরকারের আমলে চর দখলের মতো দেশের ব্যাংকগুলি দখল করে নেওয়া হয়েছিল। আমানতকারীর টাকাকে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত টাকায় রূপান্তরিত করে ফেলেছিল। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। এর ফলে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনগুলির মধ্যে এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত সরকারের লুটপাটের মহোৎসবে গত ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে- এটা আমরা জানি। কত রকমভাবে পাচার হয়েছে তাও জানার বিষয়। অভিনব একেকটা পদ্ধতি ছিল। পাচারের একটা পদ্ধতি সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এই পাচার হয়েছে - বিদেশে অধ্যয়নরত সন্তানের কাছে টাকা পাঠানোর নামে। তিনি সন্তানের লেখাপড়ার জন্য এক সেমিস্টারের অর্থাৎ তিন মাসের খরচ বাবদ অফিসিয়াল ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠিয়েছেন তিন কোটি ৩৩ লক্ষ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। পাচারের এর চাইতে বেশি তাক লাগানো পন্থা আর কী আছে তার কোনো সীমা আছে বলে আমার মনে হয় না।
আইন, নিয়ম, নীতির জায়গায় যখন হরিলুট প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এমন সবকিছুই সম্ভব। এই অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে আওয়ামীলীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৩ জন

১৪৪ ধারা ভেঙে মীরসরাইয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপির একাংশের শ্রদ্ধা নিবেদন

মোরেলগঞ্জে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদ উপহার বিতরণে -কাজী শিপন

সংবিধান পরিবর্তন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া কঠিন: জোনায়েদ সাকি

কলাপাড়ায় স্বাধীনতা দিবসে জনসাধারণের জন্য কোষ্টগার্ডের যুদ্ধ জাহাজ উন্মুক্ত

স্মৃতিসৌধে সেচ্ছাসেবক দলের দুই পক্ষের মারধরে আহত-২

মায়ের নামের দাতব্য সংস্থা থেকে পদত্যাগ করলেন প্রিন্স হ্যারি

সেনাবাহিনীতে ৩৯ জনকে অনারারি কমিশন প্রদান

ব্রিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে

গাজায় স্বাস্থ্যকর্মী-ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলায় ইইউর উদ্বেগ

হাসিনামুক্ত স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে - রাশেদ প্রধান

চন্দনাইশে অসহায় গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

গোয়ালন্দে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান দিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে আটক ৩

শার্শায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের সমাধিতে গার্ড অব অনার প্রদান

দখলে দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী বেরুলা খাল

স্বাধীনতা মানে প্রতিটি বিতর্কিত বিষয় মনখুলে লিখতে পারা

এখন থেকে ‘বলাৎকারও’ ধর্ষণ, জরিমানা ২০ লাখ

কিশোরগঞ্জে হাসিনাসহ ৩১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা